কাজী কামাল হোসেন, নওগাঁ
নওগাঁর সাপাহারে আড়াই মাস যাবৎ স্ত্রী ও বৌমার স্বীকৃতি পেতে শ্বশুরবাড়ির দরজায় সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন সাবেত্রী (৩৪) নামের এক গৃহবধূ। ওই গৃহবধূ একই জেলার পার্শ্ববর্তী পোরশা উপজেলার ডাহুকী ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের মৃত জয়লাল সরদারের মেয়ে।
ঘটনার ভিকটিম সাবেত্রীর কাছ থেকে জানা গেছে, বিগত দিনে তিনি ব্র্যাকে চাকরি করতেন। এ সময় সাপাহার উপজেলার নিশ্চিন্তপুর হিন্দুপাড়ার বিরেন চন্দ্র পালের ছেলে চন্দন পালের সাথে তার সাক্ষাৎ হয়, এরপর প্রেম। চন্দন পালও বেসরকারি একটি কোম্পানিতে চাকরি করার সুবাদে চলতে থাকে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক। বেশ কিছুদিন প্রেম করার পর ২০১৯ সালে তাদের হিন্দুধর্ম মতে প্রথমে রেজিস্ট্রি এবং পরে ঠাকুর দিয়ে বিয়ে সম্পন্ন হয়। তখন নতুন অবস্থায় চতুর চন্দন পাল তার স্ত্রীকে গ্রামের বাড়ি নিশ্চিন্তপুরে নিয়ে এলে গ্রামবাসী ও পিতা-মাতার নিকট স্বামী-স্ত্রীর পরিচয় গোপন রাখতেন। এমতাবস্থায় বাইরেই চলতে থাকে তাদের সংসার।
সংসার চলা অবস্থায় গ্রামের বাড়িতে ঘর করার জন্য স্ত্রী সাবেত্রীকে কিছু টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করে স্বামী চন্দন পাল। স্বামীর আবদার মেটাতে স্ত্রী সাবেত্রীর জমানো আড়াই লক্ষ টাকা ব্যাংক চেকের মাধ্যমে তিনি তার স্বামীকে প্রদান করেন।
এরপর তাদের সংসার আলো করে জন্ম নেয় এক কন্যাসন্তান। বর্তমানে কন্যা সন্তানের বয়স ৮ মাস বলে জানিয়েছেন সাবেত্রী। কিন্তু হঠাৎ করে আড়াই মাস পূর্বে তার স্বামী চন্দন পাল বদলগাছি উপজেলায় থাকা অবস্থায় তাকে ভাড়া বাড়িতে রেখে গ্রামের বাড়ি নিশ্চিন্তপুরে বেড়াতে এসে আর ফেরত যায় না। স্বামী ফিরে না আসায় সাবেত্রী একদিন স্বামীর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। কিন্তু স্বামীর বাড়ির দরজায় আসতেই তার শ্বশুর-শাশুড়ি দরজা বন্ধ করে ছেলেকে অন্য দরজা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। এরপর থেকে সাবেত্রীকে বাসায় প্রবেশ করতে বাধা প্রদান করছে।
ছেলের স্ত্রী ও বৌমার স্বীকৃতি পেতে এভাবে বেশ কয়েকদিন স্বামী-শ্বশুরের বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষমান অবস্থায় থাকলেও মন গলেনি পাষণ্ড শ্বশুর-শ্বাশুড়ির। অবশেষে সাবেত্রী ফিরে যায় নিজ গন্তব্যে। এরপর থেকে স্বামী পলাতক থাকায় মাঝেমধ্যে সাবেত্রী শ্বশুরবাড়িতে অবস্থানের জন্য এলে সাথে সাথে বাড়ির দরজা বন্ধ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান শ্বশুর বিরেন ও শ্বাশুড়ি। বর্তমানে প্রায় একসপ্তাহ ধরে সাবেত্রী নিশ্চিন্তপুর গ্রামের ওই বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষমান অবস্থায় থাকলেও শ্বশুর-শ্বাশুড়ির বাধার মুখে কিছুতেই সে বাসায় প্রবেশ করতে পারছেন না।
মঙ্গলবার (১ মার্চ) বিকালে সরেজমিনে ওই গ্রামে বিরেন চন্দ্র পালের বাড়িতে গেলে বাড়ির দরজার সামনে সন্তান কোলে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় সাবেত্রীকে। এ সময় বাড়ির মেইনগেট তালাবদ্ধ অবস্থায় থাকতে দেখা যায়। বর্তমানে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান আগামী শুক্রবারে এ বিষয়ে বৈঠক করবেন বলে জানান সাবেত্রী।
এ বিষয়ে চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। তবে এ পর্যন্ত সাবেত্রী কোনো আইনের আশ্রয় নেয়নি বলেও জানান। কবে স্ত্রী ও বৌ’মার স্বীকৃতি পাবে সাবেত্রী- এ প্রশ্ন এখন সাবেত্রীসহ কৌতুহলী গ্রামবাসীর।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য চন্দন পালের বাবা বিরেন চন্দ্র পালের সাথে সাক্ষাত করার চেষ্ট করেও তাকে পাওয়া যায়নি। এমনকি তার মুঠোফোনটিও বন্ধ থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি। এছাড়া সাবেত্রীর স্বামী চন্দন পালের ফোনটিও বন্ধ থাকায় তার সাথে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, আগামী ৪ মার্চ চন্দন পাল বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য ইউনিয়ন পরিষদে আসবে।
ওডি/এএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড