তানভীর লিটন, কুমারখালী-খোকসা (কুষ্টিয়া)
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের পাহাড়পুর গ্রামে দু’পক্ষের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একজন খুন হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকা ছেড়েছে বহু পুরুষ। নারীরাও ঘরের আসবাবপত্র নিয়ে অন্য গ্রামে স্বজনদের বাড়িতে চলে গেছে। মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) এই খুনের ঘটনা সংঘটিত হয়। এরপর থেকে মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। বিদ্যালয়ে আসেনি কোনো শিক্ষার্থী। আর শিক্ষার্থীদের অপেক্ষায় কার্যালয় ভবনের বারান্দায় অপেক্ষা করছেন শিক্ষকরা।
এ দৃশ্য কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের ৩৭ নম্বর পাহাড়াপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।
শ্রেণিকক্ষে ভরা বেঞ্চ। টেবিলের উপর পড়ে আছে ডাস্টার। টেবিলের পাশেই আছে শিক্ষকের চেয়ার। শুধু নেই শিক্ষার্থী ও শিক্ষক। বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টায় বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ে সুনসান পরিবেশ। লোহার খুঁটিতে উড়ছে জাতীয় পতাকা। গ্রিলে খিল লাগিয়ে সাতজন শিক্ষক ও বিদ্যালয়ের আয়া স্কুলের বারান্দায় বসে আছেন।
শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৩৩ সালে প্রায় ৫১ শতাংশ জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয় ৩৭ নম্বর পাহাড়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। বিদ্যালয়ে বর্তমানে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৫৫ জন। বিপরীতে শিক্ষক রয়েছে সাতজন। করোনার কারণে বিদ্যালয়ে বিশেষ পাঠদান চলছে। সকালে তৃতীয় শ্রেণির পাঠদান ছিল। কিন্তু কোনো শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসেনি।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পাহাড়পুর গ্রামে লস্কর ও মন্ডল গ্রুপের সংঘর্ষ চলে আসছে। সংঘর্ষে গত পাঁচ বছরে সাতজন নিহত হয়েছেন। প্রতিটি সংঘর্ষে এলাকায় ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। নিয়মিত চলে হামলা-মামলা। হামলা-ভাঙচুর ও মামলার ভয়ে গ্রামছাড়া হয়ে থাকে পরিবারগুলো।
আরও জানা গেছে, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে মঙ্গলবার বিকালে পাহাড়পুর গ্রামের সাজ্জাত হোসেনের ছেলে আমিরুল ইসলাম (৫৫) নামের একজনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। গত বুধবার পুলিশ পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করে। এ নিয়ে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছা. তামান্না ইয়াসমিন বলেন, ‘এলাকায় দু’পক্ষের সংঘর্ষ চলছে। একজন খুন হয়েছে। তাই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী আসেনি। শিক্ষকরা চাকরি বাঁচাতে প্রাণ হাতে নিয়ে বসে আছে। এলাকায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রায় ৫ বছর ধরে এলাকায় আধিপত্য চলছে। চলছে হামলা ও ভাঙচুর। দিনে দিনে গ্রামে মানুষ কমছে। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কমছে। এভাবে চলতে থাকলে বিদ্যালয়টি ধ্বংস হয়ে যাবে।’
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সায়মা আফরোজ বলেন, ‘দু’পক্ষের আধিপত্য বিস্তারে এলাকার অর্থনীতি, শিক্ষা, কৃষিসহ সকল কিছু ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিনের এই আধিপত্যের অবসান ঘটানো দরকার।’
এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আধিপত্য বিস্তারে এলাকায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। এ জন্য শিক্ষকরা আসলেও শিক্ষার্থীরা আসেনি। শিক্ষকদের নিরাপত্তা নিয়ে ডিপিও স্যারের সাথে কথা চলছে।’
আরও পড়ুন : আগুনে পুড়ল ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, আধিপত্য বিস্তারে দু’পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। লাশের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
ওডি/এএম
সম্পাদক: মো: তাজবীর হোসাইন
সহযোগী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118241, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড