শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার
কক্সবাজার শহরের গোলদিঘির পাড়স্থ ছোট্ট মুদির দোকান ‘সায়মা স্টোর’ এর মালিক জিয়াবুর রহমান শহরের বড়বাজারের পাইকারি দোকান ‘ইসমাইল ট্রেডার্স’ থেকে ২৫ কেজি ওজনের দুটি পেঁয়াজের বস্তা কিনেন। বস্তার ওপরে ঠিক থাকলেও নীচের অংশে পেঁয়াজের সাথে রয়েছে বড় বড় পাথর।
বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) বিকালে এমনই অভিযোগ করেন সায়মা স্টোরের মালিক জিয়াবুর রহমান।
বস্তার ভিতরে ছিল প্রায় ৯ কেজি পাথর। পরে মুদি দোকানদার জিয়াবুর রহমান ওই পাইকারি দোকানের মালিক আলী হোসাইন সওদাগরকে বিষয়টি জানান। পাথরের বিষয়ে তিনি প্রথমে দোষ চাপান চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পাইকারি বিক্রেতাদের ওপর। যাদের কাছ থেকে তিনি পাইকারিতে মালামাল ভর্তি ট্রাক কিনেছেন। পরে ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাথরের ওজনের পরিমাণ পেঁয়াজ ফেরত দেওয়া হয় সায়মা স্টোরকে।
পেঁয়াজের বস্তায় পাথরের বিষয়ে আলী হোসাইন সওদাগর এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই প্রতারণায় তিনি নিজেও পড়েছেন। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ থেকে পাইকারি পেয়াজ কিনে ঠকেছেন।
এই ঘটনার সূত্র ধরে আশপাশের আরও কয়েকটি মুদির দোকানে যাচাই করা হয়।
দেখা যায়, কক্সবাজার শহরের বৈদ্যঘোনার মুদির দোকান ‘মায়ের দোয়া স্টোর’একই চিত্র। ওই দোকানে পেঁয়াজের পাশাপাশি ছোলা এবং রসুনের বস্তায়ও পাথর পাওয়া যায়। আর এসব পাথর ছোট বা স্বাভাবিক নয়। দেখেই বোঝা যায় পাথরগুলো পরিকল্পিতভাবে দেওয়া হয়েছে ওজন বাড়ানোর জন্য।
কক্সবাজার শহরের বড় বাজারের বড় মুদির দোকান ‘ভাই-ভাই স্টোর’ এ গিয়ে দেখা যায় , তাদের ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি।
ওই স্টোরের মালিক মোহাম্মদ আলমঙ্গীর হোসাইন জানান, গেল রমজানে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজার থেকে মাল কিনে বড় ধরা খেয়েছিলেন। ওই সময় একসাথে ৭০ বস্তা ডাল, পেঁয়াজ, মরিচ ও ছোলা কিনেছিলেন। এসব বস্তায় প্রায় ৫০ কেজির উপরে পাথর পাওয়া গেছে। এই ব্যাপারে খাতুনগঞ্জের পাইকারি বিক্রয় কেন্দ্র ‘রায়হান ট্রেডার্স’এর মালিক মো. রায়হানকে ক্ষতির বিষয়টি জানিয়েও কোন লাভ হয়নি। ওই সময় তিনি বলেছিলেন তারা পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার, ভারত, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশ থেকে মাল আমদানি করে। ওখানেই হয়ত এমনটা হয়েছে। তাই কিছু করার নাই। যদিও এই কথা মেনে নিতে রাজি না ক্ষতিগ্রস্ত মোহাম্মদ আলমগীর হোসাইন। তিনি বলেন এই প্রতারণা খাতুনগঞ্জেই করা হয়েছে।
বড়বাজারের পাইকারি বিক্রেতা ‘মেসার্স বিবেকানন্দ স্টোর’এর মালিক জানান, বস্তার মধ্যে পাথর থাকার বিষয় আগেও শুনেছেন। তবে এর জন্য তারা দায়ি নয়। চট্টগ্রাম থেকে শত শত বস্তা মাল ট্রাকে করে আসে। ওই বস্তগুলো একটা করে খোলার সুযোগ নাই। সুতরাং বস্তায় পাথর থাকার বিষয়টি তিনি অবগত নয়।
কক্সবাজার বড় বাজারের আরেক পাইকারি বিক্রেতা ‘মেসার্স আকাশ বাণিজ্যালয়’ এর স্বত্বাধিকারী রাখাল দাশ জানান, তাদের শত শত বস্তা মালামাল বিক্রি হয়। সুতরাং এই হিসাব তাদের থাকেনা। এছাড়া তারা শুধু চট্টগ্রাম খাতুনগঞ্জ থেকে নয় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত-মিয়ানমার-তুরস্ক থেকেও কাচা মাল আমদানি করেন। কোথায় কিভাবে বস্তায় পাথর ডুকছে তা তাদের জানা নেই।
ভোগ্যপণ্য দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মোস্তাক আহম্মদ জানান, এই বিষয়টি সম্পূর্ণ প্রতারণা। আড়তদাররা যতই অস্বীকার করুক না কেনো তারা মূলত সিন্ডিকেট করে এই অপকর্ম করছে। তারা সু-কৌশলে খুচরা বিক্রেতাদের ঠকাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, বিদেশ থেকে আমদানির সময় যদি বস্তায় পাথর থাকত তাহলে নিশ্চয় পাইকারি বিক্রেতারা প্রতিবাদ করত। অথবা ব্যবস্থা নিত। কিন্তু তারা বরাবরই চুপচাপ রয়েছে। এতেই প্রমাণিত হয় পাইকারি ব্যবসার মাফিয়ারা সিন্ডিকেট করেই এই অপকর্ম করছে। এতে সাধারণ ক্রেতাদের তেমন ক্ষতি না হলেও খুচরা বিক্রেতাদের ক্ষতি হচ্ছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অনেকে অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে দ্রব্যের দামও বাড়িতে নিতে পারে। যেটি চলমান বাজার পরিস্থিতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সচেতন মহলের দাবি বাজার মনিটরিং বা প্রশাসনের মাধ্যমে বিষয়টি খতিয়ে দেখে মূল অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে সিন্টিকেটটি ভেঙ্গে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হোক।
ওডি/এসএ
সম্পাদক: মো. তাজবীর হোসাইন
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড