সাইদুর রহমান, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)
‘তুমি যদি যাও-দেখিবে সেখানে মটর লতার সনে, শিম আর শিম হাত বাড়ালেই মুঠি ভরে সেইখানে।’ পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের নেমন্ত্রণ কবিতার পংক্তিগুলোর মতোই রূপগঞ্জের পূর্বাচলে হাত বাড়ালে মুঠি ভরে শিম মিলে। শিশির ভেজা শিমের খেত। লকলকে শিমের ডগায় লাল-সাদা ফুলের পাপড়িতে চিকচিক করছে শিশির বিন্দু। খেতে শিম। জমির আলে শিম। খালের পাড়ে শিম। বাদ যায়নি তিনশ’ ফুট সড়কের দ’পাশও। বলা যায় শিমের রাজ্য পূর্বাচল। চলতি মৌসুমে রূপগঞ্জ উপজেলার শুধু পূর্বাচল উপ-শহরের (দাউদপুর ও রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের আংশিক) প্রায় ১৮২৫ বিঘা জমিতে শিম চাষ হয়েছে। যার বিক্রি দাঁড়াবে প্রায় ৪০ কোটি টাকা।
মাইলের পর মাইল। গ্রামের পর গ্রাম। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে যে দিকে চোখ যায় সে দিকেই শিমের দেখা মেলে। প্রতিবছরের মতো এবারও শিমের বাম্পার ফলনে চাষিদের মুখে হাসির ঝিলিক। রূপগঞ্জে শিম চাষের জন্য যুগ যুগ ধরে পরিচিত দাউদপুর ও রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের গ্রামগুলো। এখন পরিচিত পূর্বাচল উপশহর হিসাবে। প্রতি শীত মৌসুমে এ অঞ্চল থেকে অর্ধশত কোটি টাকার শিম দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে রফতানি হয়ে থাকে। রফতানি হয়ে থাকে বিদেশেও। কীটনাশকবিহীন ও খেতে সুস্বাদু হওয়ায় পূর্বাচলের শিমের কদর দিনকে দিন বাড়ছে। শিম চাষে লাভবান হচ্ছে হাজারো কৃষক।
শিম রফতানির পাশাপাশি শিমের বিচির চাহিদাও কোনো অংশে কম নয়। ফলে পূর্বাচলের শিম প্রতিবছরের মতো এবারও দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে উপজেলা কৃষি অফিস ও কৃষকদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, পূর্বাচলের ফেরচাইত, হাড়ারবাড়ি, গুচ্ছগ্রাম, ধামচি, কুলুপ, বাঘবের, গোয়ালপাড়া, সুলপিনা, গোবিন্দপুর, হিরনাল, বাঘলা, আগলা, কালনী, খৈশাইর, শিমুলিয়া, জিন্দা, মাধবপুর, রোহিলা, গুতিয়াবোসহ বিভিন্ন গ্রামের জমির আইল, ঢিলার পাশে, খালের পাশে, তিনশ’ ফুট সড়কের দু’পাশে, বিলের পর বিল, খেতের পর খেত, গ্রামের পর গ্রাম শুধু শিম আর শিম। দেখে মনে হবে যেন এটা শিমের সাগর। অথবা শিমের রাজ্য।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পূর্বাচলে পুঁটি, ছুরি, ল্যাইটা, চিটাগাইংগা মডইরাসহ ৫ প্রজাতির শিমের আবাদ হয়ে থাকে। তবে চিটাগাইংগা ও ছুরি শিমের চাহিদা অন্যান্য শিমের তুলনায় অনেকটা বেশি। তাই এ শিমের চাহিদা রয়েছে দেশজুড়ে। এ অঞ্চলে আগত পাইকাররা কৃষকদের খেত থেকে ছুরি ও চিটাগাইংগা শিম ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি হিসেবে পাইকারি দরে কিনে দেশের বিভিন্ন শহরগুলোতে ট্রাকযোগে নিয়ে যায়।
কথা হয় ৯ নম্বর সেক্টরের বাঙাল বাড়ি সংলগ্ন শিমচাষি জহিরুল মিয়ার সঙ্গে। ফসল কেমন? জিজ্ঞেস করতেই ফোকলা দাঁতে হাসি দিয়ে জহিরুলের সোজা-সাপটা উত্তর ‘ভাই, অনেক ভালা ফলন অইছে এইবার। দেখতাছেন তো ওশি (শিম) কতো তরতাজা। এমুন টাটকা পাওয়া যাইবো না কোনহানে।’ চলতি মৌসুমে কী পরিমাণ শিম বিক্রি করবেন- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘১৫০ মণ বেচার আশা আছে। এবার দেড় বিঘা বর্গা জমিতে চাষ করছি।’
কথা হয় হাড়ারবাড়ি এলাকার কৃষক হাফিজুল ইসলাম, ফোরকান মিয়া, অহিদ মিয়ার সঙ্গে। তারা বলেন, ‘এইডা আমাগো বাপ-দাদার আমলের পেশা। যতদিন জমি খিলা (পতিত) পামু ততদিন আমরা তরকারি চাষ করুম।’
ফেরচাইত এলাকার শিমচাষি হুমায়ুন, সিরাজ ও সুরুজ। তারা তিন ভাই। প্রত্যেকে ৩ থেকে ৪ বিঘা জমিতে শিম চাষ করেন। এবার তাদের শিমের ফলন ভালো হয়েছে। তারা বলেন, ‘এক মণ শিম পাইকাররা এক হাজার টাকায় কিনে নেয়। আমরা প্রত্যেক ভাই ৫শ’ থেকে ৭শ’ মণ শিম বিক্রি করি। সংসার খরচা চালিয়েও ভালো লাভ আহে।’
আরও পড়ুন : ২০ বছর পর পেট থেকে বের করা হলো কাঁচি
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে রূপগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৩২০ হেক্টর (২৩৭১ বিঘা) জমিতে শিমচাষ হয়েছে। এরমধ্যে সিংহভাগই পূর্বাচল উপ-শহরের দাউদপুর ইউনিয়ন ও রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের আংশিক এলাকায়। পূর্বাচলে এবার ২৫০ হেক্টর (১৮৫২ বিঘা) জমিতে শিমচাষ হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার ফাতেহা নূর বলেন, রূপগঞ্জের পূর্বাচলে শিমের বাম্পার ফলন হয়।
ওডি/এএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড