তানভীর লিটন, কুমারখালী-খোকসা (কুষ্টিয়া)
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে চিহ্নিত সুদ কারবারি আসাদুজ্জামান নয়নের খপ্পরে পড়ে সর্বশান্ত হয়েছেন ছয়জন ব্যবসায়ী। তার হামলা-মামলার ভয়ে পরিবার-পরিজন ও ব্যবসা ছেড়ে পালিয়ে জীবনযাপন করছেন তারা। এই সুদ কারবারির খপ্পর থেকে বাঁচতে এবং তার বিচারের দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ব্যবসায়ীরা।
সোমবার (১০ জানুয়ারি) দুপুরে কুমারখালী হলবাজার সংলগ্ন গ্রীণ রেস্টুরেন্টে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এসব তথ্য জানা যায়। সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন ব্যবসায়ী মো. শরিফুল ইসলাম, মো. শামীম রেজা, মো. হাবিবুর রহমান, মো. সুরুজ আলী, মো. মান্নান শেখ ও মোছা. তন্নি খাতুন।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে শামীম রেজা বলেন, চিহ্নিত সুদ কারবারি আসাদুজ্জামান নয়নের কাছ থেকে ফাঁকা চেকের মাধ্যমে দুই শতাংশ সুদে ধাপে ধাপে প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা গ্রহণ করি। বিপরীতে পর্যায়ক্রমে প্রায় ৩৮ লক্ষ টাকা সুদসহ আসলের টাকা পরিষদ করি। কিন্তু নয়ন চেক ফেরত না দিয়ে আরও ৩০ লক্ষ টাকা দাবি করে এবং বিভিন্ন ভয়ভীতি প্রদান করে। পরে টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় কুষ্টিয়া জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দুইটি মামলা করেন।
দুর্গাপুর গ্রামের মো. মনসুর আলীর ছেলে সূতা ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান বলেন, চড়া সুদে নয়নের কাছ থেকে ব্যবসার প্রয়োজনে ফাঁকা চেকে ৬ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা গ্রহণ করি প্রায় ৬ বছরে। বিপরীতে সুদ-আসলসহ প্রায় ২৮ লক্ষ টাকা পরিশোধ করি। পরবর্তীতে নয়ন চেক ফেরত না দিয়ে আরও ১৫ লক্ষ টাকা দাবি করে। টাকা দিতে ব্যর্থ হলে তিনি নিয়মিত হুমকি প্রদান করতে থাকেন। একপর্যায়ে ব্যবসা ও পরিবার ছেড়ে পথেঘাটে পালিয়ে বেড়াচ্ছি দীর্ঘদিন। টাকা না পেয়ে তিনি কুষ্টিয়ার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করেন।
বাঁখই মহব্বতপুর গ্রামের শামীম রেজার স্ত্রী তন্নি বলেন, নয়নের অত্যাচারে আমার স্বামী পলাতক রয়েছেন। নয়ন উপজেলা রোডে অবস্থিত দোকানে প্রবেশ করে এবং আমাকে মারধর করে জোরপূর্বক দোকানের ড্রয়ারে থাকা ব্যাংকের স্বাক্ষরিত ও অস্বাক্ষরিত চেক বই ছিনিয়ে নেয়। পরবর্তীতে আমার নামে ২০ লক্ষ টাকার একটি মামলা করে কোর্টে।
সংবাদ সম্মেলনে দুর্গাপুরের বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম বলেন, নয়নের কাছ থেকে ৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা গ্রহণ করে এ যাবতকালে কয়েকটি ধাপে মোট ৩০ লক্ষ টাকা পরিশোধ করি। পরবর্তীতে তার নিকট প্রদানকৃত ফাঁকা চেকটি ফেরত চাইলে সে ফাঁকা চেকটি ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এছাড়াও নয়ন বিভিন্ন ভয়ভীতি প্রদান করে। পরবর্তীতে আরও ১৬ লক্ষ টাকা দাবি করে। টাকা না দেওয়ায় প্রতারণা করে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করে।
উপজেলার কুন্ডু পাড়ার বাসিন্দা সুরুজ আলী বলেন, একটি ফাঁকা চেক দিয়ে নয়নের কাছ থেকে ৬ লক্ষ টাকা গ্রহণ করি। এ যাবৎ বিভিন্ন সময় মোট ২০ লক্ষ টাকা পরিশোধ করি। পরবর্তীতে নয়নের কাছ থেকে থাকা চেকটি ফেরত চাইলে সে আরও ১০ লক্ষ টাকা দাবি করে। টাকা না দেওয়ায় তিনি বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখায় এবং প্রতারণা করে আদালতে মামলা দায়ের করে।
উপজেলার বাঁখই গ্রামের মো. মান্নান শেখ বলেন, নয়নের কাছ থেকে এক লক্ষ টাকা গ্রহণ করি। বিপরীতে বিভিন্ন সময়ে তাকে চার লক্ষ টাকা পরিশোধ করি। পরবর্তীতে আরও পাঁচ লক্ষ টাকা দাবি করে। টাকা না দেওয়ায় সে আদালতে একটি মামলা দায়ের করে।
পরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে ব্যবসায়ীরা বলেন, নয়ন বিএনপির কর্মী ও একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তার নামে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এই সুদ কারবারির ভয়ে আমরা এখন ব্যবসা, পরিবার-পরিজন ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। সুদখোরের হাত থেকে বাঁচতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত আসাদুজ্জামান নয়ন ও তার বাবা মাহমুদুর রহমান মানুকে মুঠোফোনে বারবার কল দেওয়া হলেও তারা কল রিসিভ করেননি।
আরও পড়ুন : বিশৃঙ্খলায় বন্ধ শিক্ষার্থীদের টিকাদান কার্যক্রম
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিতান কুমার মন্ডল বলেন, আসাদুজ্জামান নয়নের নামে সুদ কারবারের লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদন্ত করা দেখা হচ্ছে।
ওডি/এএম
সম্পাদক: মো. তাজবীর হোসাইন
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড