পান্না দত্ত, মৌলভীবাজার
বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর মৌলভীবাজার জেলা। হাওড়,পাহাড়,নদী,ঝর্ণা আর সমতল বৈচিত্রময় গঠন প্রকৃতি। এর উত্তরে সিলেট জেলা, দক্ষিণে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, পূর্বে ভারতের আসাম ও ত্রিপুরা রাজ্য এবং পশ্চিমে হবিগঞ্জ জেলা।
এ জেলার আয়তন ২৭৯৯ বর্গ কিলোমিটার। ২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী জনসংখ্যা ১৯ লাখ ৯৯ হাজার ৬২। নানা ধর্ম ও জাতিগোষ্টির বসবাস এ জেলায়। বৈচিত্রময় সংস্কৃতি দেশের সংস্কৃতিকে করেছে সমৃদ্ধ। জেলায় রয়েছে ৭টি উপজেলা ও ৫টি পৌরসভা। প্রতিটি উপজেলাই পর্যটকদের জন্য আকর্ষনীয়। দেশের বেশিরভাগ চাবাগান এ জেলায় অবস্থিত। তাই জেলার ব্রান্ডিং নাম রাখা হয়েছে চায়ের দেশ মৌলভীবাজার।
জেলার নামকরণ বিষয়ে জানা গেছে, সৈয়দ শাহ্ মোস্তফা (র:) এর ভাতুষ্পুত্র হযরত ইয়াছিন (র:)এর উত্তর পুরুষ মৌলভী সৈয়দ কুদরত উল্লাহ মনু নদীর তীরে ১৮১০খ্রিষ্টাব্দে যে বাজার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সেই বাজারটি কালক্রমে প্রসিদ্ধিলাভ করে। ১৮৮২ খ্রিষ্টাব্দে ১ এপ্রিল মৌলভী সৈয়দ কুদরত উল্লাহ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বাজারটিকে কেন্দ্র করে ২৬টি পরগনা নিয়ে দক্ষিণ শ্রীহট্ট মহকুমা প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে দক্ষিণ শ্রীহট্ট বা সাউথ সিলেট নামের বদলে এ মহকুমার নাম মৌলভীবাজার রাখা হয়। ১৯৮৪ সালের ২২ ফেব্রয়ারি মৌলভীবাজার মহকুমাটি জেলায় উন্নীত হয়।
ইতিহাসবিদ ও গবেষকদের বিভিন্ন গ্রন্ত্র থেকে জানা যায়, বহুপূর্ব থেকেই মৌলভীবাজার তথা সিলেট অঞ্চল পবিত্র ভূমি হিসাবে পরিচিত। রামায়ন ও মহাভারত এর মত মহাকাব্যে এ অঞ্চলের উল্লেখ রয়েছে। মৌলভীবাজার অঞ্চলের দক্ষিণ-পূর্বাশেংর কিছু অংশ ছাড়া বাকি সবটুকুই একসময় কামরূপ রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
মোগল আমলে বর্তমান মৌলভীবাজার মোগল সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। সেই সময়ে এক যুদ্ধে ইটা রাজ্যের রাজা সুবিদ নারায়নের মৃত্যুর পর ইটারাজ্যের ভুমি ১৬১০ খ্রিষ্টাব্দে পাঠান বীর খাজা ওসমানের অধিকারে আসে। সুলতানী আমলে বাংলার সুলতান শামসুদ্দিন ফিরোজ শাহের (১৩০১-১৬২২) সময় বর্তমান সিলেট অঞ্চল মুসলমানদের অধিকারে আসে। আরবের ইয়েমেন থেকে আগত প্রখ্যাত দরবেশ হযরত শাহজালাল(রঃ)এর সিলেট আগমনের পর তাঁর সঙ্গীদের মধ্যে অন্যতম হযরত সৈয়দ শাহ মোস্তফা(রঃ) ইসলাম প্রচারের জন্য মৌলভীবাজার অঞ্চলে আসেন। তিনি বাগদাদের অধিবাসী ছিলেন। মৌলভীবাজার শহরে তার মাজার রয়েছে।
কিছু বৈশিষ্ট্যের কারণে মৌলভীবাজার একটি ঐতিহ্য মন্ডিত জেলা। দেশের কৃষ্টি, সভ্যতা, সংস্কৃতিতে এ জেলার গুরুত্ব অপরিসীম। আকর্ষণীয় বিশেষ বৈশিষ্টের কারণে মৌলভীবাজার জেলা পর্যটন শিল্পের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মৌলভীবাজার জেলায় রয়েছে বৈচিত্রময় পরিবেশ, চা বাগান সমূহের দৃষ্টি নন্দন দৃশ্য এবং মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য, অভ্যন্তরীণ উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, অবকাঠামোগত সুবিধা, প্রাকৃতিক অপার সৌন্দর্য সমাহারে এ জেলাটি অন্য জেলার তুলনায় অনেকটাই ভিন্ন।
এ ছাড়াও মৌলভীবাজার জেলার রয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধ, পৃথিমপাশা নবাববাড়ী, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনষ্টিটিউট, দেশের ২য় আন্তর্জাতিক চা নিলাম কেন্দ্র, বর্ষিজোড়া ইকো পার্ক,মনু ব্যারেজ, মাধবপুর চা-বাগান লেক, মাধবকুন্ড জলপ্রপাত,হামহাম জলপ্রপাত, মনিপুরী পল্লী, প্রাকৃতিক গ্যাস ট্রান্সমিশন প্লান্ট, কমলা, লেবু,আনারস বাগান ইত্যাদি।
পাহাড়, টিলা, সংরক্ষিত বনাঞ্চল, হাওড়,বাওড়,বিল, ঝর্ণা, নদ-নদী পরিবেষ্টিত এবং জীব বৈচিত্রে সমৃদ্ধ এ জেলা ইকো ট্যুরিজমের জন্য খুবই উপযোগী। এ কারণে এখানে প্রতি বছর বহু সংখ্যক দেশী-বিদেশী পর্যটক ভ্রমণ করেন। কিন্তু পর্যটনের এতো সম্ভাবনা থাকার পরও পর্যটন কর্পোরেশনের কোন অফিস নেই এখানে। পর্যটকদের চাহিদা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, আবাসন, বিনোদন, নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাব রয়েছে।
এক্ষেত্রে একটি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সহজেই এ জেলাকে পর্যটন জেলায় পরিণত করে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য আরো উপযোগী করে গড়ে তোলা যায়। আর তা বাস্তবায়ন হলে কর্মসংস্থান সৃষ্ঠিসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এ জেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
মৌলভীবাজার জেলাকে ব্রান্ডিং করা হয়েছে চায়ের দেশ মৌলভীবাজার। চায়ের বাগানের নান্দনিক সৌন্দর্য জেলাকে পরিচিতি এনে দিয়েছে প্রকৃতি কন্যা হিসেবে। বাংলাদেশে ১৬২টি চাবাগানের মধ্যে ৯২টি চা বাগান এ জেলাতেই অবস্থিত। তাছাড়া মৌলভীবাজারের চা দেশে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিশেষভাবে পরিচিত। তাই চা কে ভিত্তি করে জেলা ব্র্যান্ডিংয়ের লোগো নির্বাচন করা হয়েছে।
চাবাগান ও হাওড় অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে শিক্ষা ক্ষেত্রে এ জেলা কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। তবে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহনে কিছুটা অগ্রগ্রতি হচ্ছে। জেলায় ২৪ টি কলেজ, ১৭৩ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়,২৫৯৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এছাড়া ১টি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট,১টি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ,১টি প্রাইমারী ট্রেনিং ইন্সটিটিউট,১টি নাসিং ইন্সটিটিউট আছে। যা জেলার শিক্ষার উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ন অবদান রাখছে। মৌলভীবাজার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়, ভূনবীর সরকারী উচ্চবিদ্যালয়,আজাদ বখত উচ্চ বিদ্যালয়,মৌলভীবাজার সরকারী মহাবিদ্যালয়সহ কয়েকটি শত বছরের পুরাতন বিদ্যাপীঠ রয়েছে এ জেলায়।
তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবায় পিছিয়ে নেই এ জেলা। জেলা সদরে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল, ৭টি উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ১৭২টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। লোকবলের সংকট থাকার পরও শিশু ও মা মৃত্যুর হার কমে এসেছে এ জেলায়।
স্বাভাবিক প্রসবে উদাহরন সৃষ্টি করে সাধুহাটি ও ভোগতেরা কমিউনিটি ক্লিনিক। জাতীয়ভাবে দুটি কমিউনিটি ক্লিনিক পুরস্কৃত হয়েছে একাধীকবার। এ সাফল্যে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন কুলাউড়ায় একটি ক্লিনিক পরিদর্শন করেছেন। যা জেলা ও দেশের জন্য গৌরবের।
মৌলভীবাজারের পুরাকীর্তি প্রাচীন ও ঐতিহাসিক স্থান দখল করে আছে। সদর উপজেলায় গয়ঘর গ্রামে বৃটিশ আমলের খোজার মসজিদ, দুর্গ ও বিবির মাজার, জগৎসী দোল গোবিন্দ আশ্রম, পশ্চিমবাজার,দরগা মহল্লায় ৩৬০ আউলিয়ার অন্যতম হযরত সৈয়দ শাহ মোস্তফা (রঃ)-এর মাজার ও পুকুরসহ আরো ৪-৫টি মাজার, পশ্চিমবাজার মনু নদীর জাহাজ ঘাট, কামরূপ রাজ ভগদত্তের উপরাজধানী দিনারপুর ভগ্নাবশেষ (কাগাবালা), শহরের আদালত এলাকার টাউনহল (সাবেক জিন্নাহ হল), পিটিআইয়ে ভূর্গভস্থ ব্যাংকার '৭১-এ পাকবাহিনী ও স্থানীয় রাজাকার বাহিনীর ব্যবহৃত টর্চার সেল ও বধ্যভূমি।
রাজনগর উপজেলায় উত্তরভাগে দুইশতাধিক বছরের পুরনো শ্রী চক্রবর্তীর বাড়ির মন্দির ও বিগ্রহ, কদমহাটা প্রাচীন জামে মসজিদ ও ৩৬০ আউলিয়ার অন্যতম হযরত সৈয়দ শাহ রুকন উদ্দিন (রঃ)-এর মাজার, টেংরাবাজার হযরত সর্দার শাহ (রঃ)-এর মাজার, তারাপাশা শতাব্দীর প্রাচীন বিষ্ণুপদ ধাম, মনসুর নগর দেওয়ান বাড়ির বাংলাঘর , বাংলা সংবাদ পত্রের- আদি পুরুষ পাঁচগাঁও গৌরি শংকর ভট্টাচার্য্যরে বাড়ি, ঐতিহাসিক কালো ঝম ঝম জাহান কোষা কামানের নির্মাতা জনার্দন কর্মকারের বাড়ী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী বিপ্লবী লীলা নাগের বাড়ী, অত্র-অঞ্চলের তৎকালীন বিখ্যাত রাজা সুবিদ নারায়ণের রাজবাড়ি, বিখ্যাত কমলা রানীর দীঘি । ৭১ সালে ৬৯ শহীদের গণকবর, কামার চাক দেওয়ান বাড়ির বাংলাঘর ও তৎসংলগ্ন প্রাচীন জামে মসজিদ।
কুলাউড়া উপজেলায় ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের তীর্থস্থান- রঙ্গিরকুল আশ্রম, প্রাচীন ফলক প্রাপ্তিস্থান ভাটেরা টিলা, আসামের ইস্টার্ন গেট নামে খ্যাত কুলাউড়া রেলওয়ে জংশন, নন্দ নগরের বিখ্যাত সতীদাহ মন্দির, ইরানের শাহান শাহ রেজা শাহ পাহলভীর আগমন উপলক্ষে লংলা রেলস্টেশনে নির্মিত সুরম্য তোরণ, পৃথিম পাশা নবাব বাড়ি ও মসজিদ।
বৃটিশ আমলের জুড়ী রেলস্টেশন, দক্ষিণভাগ হযরত ইরানী (রঃ) পীর সাহেবের মাজার। বড়লেখা উপজেলায় শাহবাজপুর মোঘল শাসনামলে নির্মিত বিখ্যাত সালেগড় দুর্গ, মাধবকুন্ডে প্রাচীন আমলের শিব মন্দির, পাথারিয়া হযরত সৈয়দ ইয়াকুব (রঃ)-এর মাজার। শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ৪শ' বছরের প্রাচীন শ্রী শ্রী নিমাই শিব বাড়ি, কালাপুরে রাধাগোবিন্দের মন্দির, একই এলাকায় ফলক প্রাপ্তিস্থান।
কমলগঞ্জ উপজেলায় শমসেরনগর বধ্যভূমি, , বীর শ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের সমাধি,পতন উষার দুর্গের ধ্বংসাবশেষ, ইরানের শাহান শাহ রেজাশাহপাহলভীর আগমন উপলক্ষে শমশের নগরে নির্মিত তোরণ, ব্রিটিশ শাসনামলে নির্মিত বিমান বন্দর।
সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় মৌলভীবাজারের বিশিষ্ঠ ব্যাক্তিদের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। জেলার রাজনগর উপজেলার ঘড়গাঁও গ্রামের সৈয়দ শাহনূর মধ্যযুগের শ্রেষ্ট কবি। ১৮১৯ সালে “নূর নছিহত” নামক বৃহৎ পুথি রচনা করেন তিনি। পুথির পৃষ্টা সংখ্যা ৩০২, গানের সংখ্যা ১০৮, ধাঁধাঁর সংখ্যা ৪১।
মৌলভীবাজার শহরের গোবিন্দশ্রী এলাকার সন্তান সৈয়দ মুজতবা আলী বাংলা কথা সাহিত্যের প্রাণ পুরুষ। ২৯টি গ্রন্থের প্রণেুা। তিনি বহুভাষাবিদ পন্ডিত ছিলেন।
মৌলভীবাজার জেলার ধউপাশা (বর্তমান ঢেউপাশা) গ্রামের কাজী মুহম্মদ আহমদ সিলেট বিভাগের প্রথম ইতিহাস লেখক। ১৮৮১ সালে জেলার কাজী নিযুক্ত হন। আঞ্জুমানে ইসলামিয়া স্থাপন করে এর সেক্রেটারীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৮৮৫ সালে বাংলা ভাষায় সিলেটের গ্রন্থ শ্রীহট্ট দর্পন রচনা করেন তিনি।
কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর গ্রামের আশরাফ হোসেন। এ অঞ্চলে লোক সাহিত্যের পথিকৃত। তাঁর রচিত গ্রন্থ সিলহটের ইতিহাস, মনিপুরের লড়াই, শাহজালালের কিচ্ছা ইত্যাদি।
বড়লেখা উপজেলার শিমলিয়া গ্রামের দ্বিজেন্দ্র শর্মা। ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমী পুরষ্কার পান। আধুনিক গদ্যে দক্ষ ছিলেন। ব্রজমোহন ও নরটডেম কলেজে উদ্ভিদ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ছিলেন। তিনি বহু গ্রন্থ প্রনেতা।
সিলেট অঞ্চলের প্রথম দৈনিক পত্রিকা বলাকার সম্পাদক শ্রী কালীপ্রসন্ন সিংহের বাড়ী রাজনগরে। আরেক প্রখ্যাত সাংবাদিক- শ্রী গৌরিশঙ্কর ভট্টাচার্য্যরে বাড়ী রাজনগরের পাঁচগায়ে। জ্ঞানান্বেষণ পত্রিকার মাধ্যমে ১৮৩১ সালে সাংবাদিকতা পেশায় আসেন৷ তিনি অল বেষ্ট নিউজ পেপার ইন কোলকাতা এর সম্পাদক ছিলেন৷ এছাড়া জেলার রাজনগর উপজেলার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী শ্রীমতি লীলা নাগ 'জয়শ্রী' নামে মহিলাদের জন্য একটি পত্রিকা প্রকাশ করতেন। তিনি দেশে পত্রিকার ইতিহাসে প্রথম নারী সম্পাদক।
জেলার শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক ও লেখক আব্দুল খালিক বলেন, সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্টানে এ জেলার সন্তানরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্টিত ছিলেন বর্তমানেও আছেন। প্রাথমিক শিক্ষায় মৌলভীবাজার এখন রোল মডেল। এখন প্রতিটি চাবাগানে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। আর প্রাথমিক শিক্ষায় কুলাউড়া উপজেলার রঙিন স্কুল প্রকল্প সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এর ফলে পাক প্রাথমিক শিক্ষায় আমুল পরিবর্তন হয়েছে।
শিশুদের বিদ্যালয়মুখি করা,ঝড়ে পড়া রোধ, শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করেছে। তাই দিন দিন জেলায় প্রাথমিক শিক্ষার হার বাড়ছে। মৌলভীবাজার সরকারী কলেজে অনার্স ও মাষ্টার্স কোর্স চালু হওয়ায় উচ্চ শিক্ষার হারও বাড়ছে। তবে সরকারী বা বেসরকারী পর্যায়ে আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রয়োজন। আর মৌলভীবাজারে সরকারী মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্টার দাবী দীর্ঘদিনের। এ দাবী বাস্তবায়ন হলে শিক্ষা ক্ষেত্রে এ জেলা আরো একধাপ এগিয়ে যাবে।
গবেষক ও লেখক আহমেদ সিরাজ বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জেলা মৌলভীবাজার। বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে এ জেলার সংস্কৃতি। এখানে মূল জাতিগোষ্টির সাথে মনিপুরী,খাসি,গারো,ত্রিপুরাসহ ক্ষুদ্র নৃগোষ্টির লোকজন বসবাস করেন। প্রত্যেকের রয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতি ও কৃষ্ঠি। এ জেলার বিচিত্র সংস্কৃতি শুধু দেশে নয় আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত।
মৌলভীবাজার চেম্বার অব কমার্স সভাপতি কামাল হাসেন বলেন, অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ এ জেলায় গ্যাস,সিলিকন বালুসহ অনেক প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। এছাড়া লেবু,আনারস,বাঁশ,বেতসহ অনেক কাঁচামাল রয়েছে। যা শিল্প -কারখানা স্থাপন হলে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। সম্প্রতি শেরপুরে অর্থনৈতিক জোন স্থাপনের কাজ চলছে। এখানে শিষ্প কারখানা গড়ে উঠবে। সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থানের।
এছাড়া দুটি বেসিক শিল্প নগরী রয়েছে এ জেলায়। মৌলভীবাজারের চা, আগর, লেবু , মাছ অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখছে। আর পর্যটন শিল্পে রয়েছে অপার সম্ভাবনা। এ পর্যটন শিল্পকে কেন্দ্র করে বেসরকারী উদ্দ্যোগে দুটি ফাইভ ষ্টার মানের হোটেল রয়েছে এখানে। দেশী ও প্রবাসী বিনিয়োগের জন্য এ জেলা সম্ভাবনাময়। তবে সরকার যদি পরিকল্পিত উদ্দ্যোগ গ্রহন করে তবে প্রতি বছর জেলার পর্যটন খাত থেকে বিপুল পরিমান রাজস্ব আদায় হবে । সেই সাথে দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি আরো মজবুত হবে।
জেলার রাজনৈতিক পেক্ষাপট সম্পর্কে প্রবীন রাজনীতিবিদ সাবেক গনপরিষদ সদস্য বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান বলেন রাজনীতিতে এ জেলার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। বৃটিশ আমলে ইংরেজদের শোষন ও শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসাবে ঐতিহাসিক সিপাহী বিপ্লব সংঘটনে ১৮৫৭ সালের ২৩শে ডিসেম্বর মৌলভীবাজারের লাতুনামক স্থানে একদল বিদ্রোহী সেনা ইংরেজদের মুখোমুখি হয়।
এছাড়াও কমলগঞ্জ উপজেলায় ভালুবিলে কৃষক আন্দেলন। ৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ও ৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধে জেলার রাজনীতিবিদ ও মুক্তিকামী মানুষ জীবন বাজি রেখে আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। জেলার কয়েকটি উপজেলা ভারতের সীমান্তবর্তি হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধে মৌলভীবাজার গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। পাক হানাদার বাহীনির ব্রিগেড হেড কোয়াটার ছিলো মৌলভীবাজারে। শেরপুর, শমসেরনগরসহ কয়েকটি স্থানে সম্মুখ সমর হয়েছে।
বর্ণিল ইতিহাস ঐতিহ্যে ভরপুর আর পর্যটনে সম্ভাবনাময় ও চায়ের রাজধানী হিসেবে পরিচিত মৌলভীবাজার। এ জেলাকে সরকারের মহাপরিকল্পনার আওতায় নিয়ে এসে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এক মাইলফলক সৃষ্ঠি হবে বলে মনে করছেন জেলাবাসী।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড