• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

পাহাড়ে সহিংসতায় বছরজুড়ে ৯ মৃত্যু

  এম.কামাল উদ্দিন, রাঙামাটি

৩১ ডিসেম্বর ২০২১, ১৫:৫৮
রাঙামাটির পাহাড়
রাঙামাটির পাহাড় (ছবি : অধিকার)

রাঙামাটিতে ২০২১ সালে আঞ্চলিক রাজনীতির হানাহানি ও সহিংস ঘটনায় ৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এসবের মধ্যে চলমান ইউপি নির্বাচনি সহিংসতাও রয়েছে। মূলত পাহাড়ে আধিপত্য ও প্রভাব বিস্তার নিয়ে আঞ্চলিক দলগুলোর মধ্যে প্রতিনিয়তই এ ধরনের সহিংসতা আর হানাহানির ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনা রাঙামাটিতে বছরজুড়ে তৈরি করেছে ভীতিকর পরিস্থিতি এবং জনমনে সৃষ্টি করেছে উদ্বেগ।

সর্বশেষ খুনোখুনির ঘটনা ঘটে ২৯ ডিসেম্বর রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে। এ ঘটনায় উপজেলার রূপকারী ইউনিয়নের পাকুজ্যাছড়ি ও চার কিলো প্রশিক্ষণটিলা নামক এলাকায় দুই আঞ্চলিক দল সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি (জেএসএস) এবং ইউনাইটেড পিপল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক) দলের সমর্থিত সশস্ত্র দুই গ্রুপের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে প্রাণ হারান তুজিম চাকমা ও জানেন চাকমা।

তুজিম ছিলেন জেএসএস (সন্তু) গ্রুপের কোম্পানি কমান্ডার এবং জানেন ছিলেন ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) গ্রুপের বাঘাইছড়ির পরিচালক।

এসব ঘটনার বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে রাঙামাটির পুলিশ সুপার মীর মোদ্দাছ্ছের হোসেন বলেন, ২৯ ডিসেম্বর রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে গোলাগুলিতে ২ জন নিহতের ঘটনাটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এটির সাথে চলমান ইউপি নির্বাচনের কোনো রকম সম্পৃক্ততা নেই। মূলত পাহাড়ে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এসব ঘটনা ঘটছে। বাঘাইছড়ির হত্যাকান্ডে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। সন্ত্রাসী যেই হোক, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এসব সন্ত্রাসী কর্মকান্ড প্রতিরোধের ব্যাপারে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আগামীতে আরও হার্ডলাইনে যাবে।

বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরের শুরুর দিকে ২৪ ফেব্রুয়ারি রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে ঢুকে সমর বিজয় চাকমা নামে এক ইউপি (ইউনিয়ন পরিষদ) সদস্যকে গুলি করে হত্যা করে সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা। পার্বত্য এলাকায় সরাসরি কোনো সরকারি অফিসে ঢুকে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ছিল এটাই প্রথম। নিহত সমর বিজয় ছিলেন বাঘাইছড়ি উপজেলার রূপকারী ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য। এদিন তিনজন সশস্ত্র দুর্বৃত্ত একটি মোটরসাইকেলযোগে অতর্কিত গিয়ে সরাসরি অফিসে ঢুকে সমর বিজয়কে গুলি করে।

এরপর ৩১ মার্চ একই উপজেলা বাঘাইছড়িতে জনসংহতি সমিতির সংস্কারবাদী দল জেএসএস (এমএন লারমা) গ্রুপের সামরিক শাখার বিশ্ব মিত্র চাকমা ওরফে যুদ্ধ বাবু এক কোম্পানি কমান্ডার নিজ দলীয় সহকর্মীর গুলিতে নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন। বিশ্ব মিত্রকে হত্যার পর একটি এসএমজি (সাব মেশিনগান), একটি একে-৪৭ রাইফেল, একটি বিদেশি পিস্তল ও ২৫৭ রাউন্ড গুলি নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে পালিয়ে যায় সহকর্মী সুজন।

১৪ জুন রাঙামাটির আরেক উপজেলা জুরাছড়িতে পাথর মণি চাকমা নামে এক গ্রামপ্রধানকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। উপজেলা সদর থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরে জুরাছড়ি ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের লুলাংছড়ি নামক পাহাড়ি গ্রামে ওই ঘটনা ঘটে। পাথর মণি চাকমা ওই গ্রামের কারবারি ছিলেন।

১৭ সেপ্টেম্বর জেলার বাঘাইছড়িতে ঘরে ঢুকে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সদস্য সুরেশ কান্তি চাকমা ওরফে দীনেশকে গুলি করে হত্যা করে প্রতিপক্ষীয় দলের সন্ত্রাসীরা। বাঘাইছড়ি উপজেলার বঙ্গলতলী ইউনিয়নের বি ব্লক এলাকায় ঘটনাটি ঘটে।

১৬ অক্টোবর রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে ঘরে ঢুকে হত্যা করা হয়েছে আ. লীগ চেয়ারম্যান প্রার্থী নেওথোয়াই মারমাকে। কাপ্তাই উপজেলার চন্দ্রঘোনা থানার চিৎমরম ইউনিয়নের আগারপাড়া এলাকায় ওই ঘটনাটি ঘটে। নেওথোয়াই মারমা ছিলেন দ্বিতীয় ধাপে নির্বাচনে চিৎমরম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী ও ইউনিয়ন আ. লীগের সভাপতি।

এর ১১ দিনের মাথায় ২৭ অক্টোবর একই উপজেলায় কাপ্তাইয়ে নির্বাচনি সহিংসতায় সজিবুর রহমান নামে এক ইউপি (ইউনিয়ন পরিষদ) সদস্য প্রতিপক্ষীয় দলের হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন। দ্বিতীয় ধাপে কাপ্তাই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কাপ্তাই নতুনবাজার এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। সজিব ছিলেন কাপ্তাই ইউপির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য এবং কাপ্তাই ইউনিয়ন পরিষদের আ. লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুল লতিফের সমর্থক।

৩০ নভেম্বর রাঙামাটি সদর উপজেলার ৫ নম্বর বন্দুকভাঙ্গা ইউনিয়নের চারিখং এলাকার কিচিং আদাম নামক গ্রামে প্রতিপক্ষীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের ব্রাশফায়ারে আবিস্কার চাকমা নামে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) এক সদস্য নিহত হয়েছেন।

সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির দাবি, পার্বত্য চুক্তি বাস্তায়িত না হওয়ার কারণে পাহাড়ে এ ধরনের সহিংস ঘটনাগুলো ঘটছে। প্রসিত খীসার নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড পিপল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শাসক গোষ্ঠীর লেলিয়ে দেওয়া সন্ত্রাসীদের হামলায় ঘটনাগুলো ঘটছে।

আরও পড়ুন : জাল টাকাসহ মাদক মামলায় যুবক গ্রেফতার

শিক্ষাবিদ ও মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরূপা দেওয়ান বলেন, অনাকাঙ্খিত কোনো মৃত্যুই কাম্য হতে পারে না। পাহাড়ের মানুষ শান্তি চায়। এসব সহিংসতা বন্ধে সবাইকে সহনশীল হয়ে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রিতা, দলগুলোর মধ্যে বিভাজন- এখানকার পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। সংঘাত বাড়ছে। রাষ্ট্রকে এ ব্যাপারে আরও চিন্তা-ভাবনা করতে হবে।

ওডি/এএম

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড