সাজ্জাদুল আলম শাওন, দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর)
স্বাধীনতার ৫০ বছরেও রাস্তার সংস্কার না হওয়ায় চলাচলে চরম ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। কিছুদূর পর পরই খানা-খন্দে ভরা, আবার মাঝে মধ্যে বিশাল এক জলাশয়। রাস্তার মাঝে জলাশয়ে মাছ চাষও করা হচ্ছে। এমনি দৃশ্য দেখা গিয়েছে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার পাররামরামপুর ইউনিয়নের ভাতখাওয়া থেকে কবিরুলের বাড়ি হয়ে সরাসরি কাটাখালী বাজার পর্যন্ত এবং ঝাউডাঙ্গা হয়ে বেলুয়ার চর পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার রাস্তায়।
বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এ সময় রাস্তায় যেন এক মরণ ফাঁদে পরিণত হয়। দূর থেকে দেখলে বোঝার উপায় নেই এটি রাস্তা নাকি খাল। বর্তমানে শীতকাল চলছে এই সময়েও রাস্তায় বিভিন্ন গর্ত, খানা-খন্দ দেখা যাচ্ছে। ভারী পণ্যবাহী কোন পরিবহণ এই রাস্তায় চলাচলের অনুপযোগী। এমনকি মোটরসাইকেল, বৈদ্যুতিক চালিত অটোরিকশা, ভ্যান, ছোট ট্রলি চলাচল করতে পারছে না। বাধ্য হয়ে বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করতে হচ্ছে। এতে সময় এবং খরচ বেশি হচ্ছে।
উপজেলার বেলুয়ার চর, ডিগ্রিচর, মধ্যের চর, পাথরের চর, চেংঠী মারি, উত্তর রহিমপুর, দক্ষিণ রহিমপুর, ভাত খাওয়া , বালুর চর, বানিয়ে পড়া, তালিয়া পড়া, কুমড়াকান্দি গ্রামের বাসিন্দাদের প্রধান রাস্তা এটি। প্রতিদিন এই রাস্তায় ২০ হাজার লোক যাতায়াত করে থাকে। রাস্তায় চলাচলে সময় কম লাগায় পথচারীদের প্রথম পছন্দ।
ভাঙা রাস্তা দিয়েই চলাচল করছে গ্রামবাসী (ছবি : দৈনিক অধিকার)
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার পাররামরামপুর ইউনিয়ন এলাকাধীন ভাতখাওয়া থেকে কাটাখালি বাজার হয়ে বেলুয়ারচর পর্যন্ত রাস্তাটি সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। স্বাধীনতার ৫০ বছরেও রাস্তাটিতে কোন উন্নয়ন হয়নি। স্থানীয়দের যাতায়াতের প্রধান এই রাস্তাটি মাটির হওয়ায় বৃষ্টি হলেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। দীর্ঘ দিন ধরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওই এলাকার হাজারো মানুষ ও পরিবহন চলাচল করছে। রাস্তায় চলতে গিয়ে হরহামেশা দুর্ঘটনার স্বীকারও হচ্ছেন অনেকে। রাস্তার বেহাল দশার কারণে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য সময় মত ঘরে তুলতে পারছেন না। এমনকি তারা পণ্যের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বড় এবং ভারি কোনো পরিবহন এই এলাকায় পৌঁছানো দুরূহ ব্যাপার। ফলে কৃষকরা বাধ্য হয়েই তাদের উৎপাদিত পণ্য স্বল্পমূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। তাই এলাকাবাসীরা দাবি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি মেরামতের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা।
ভাতখাওয়া এলাকার বাসিন্দা ভ্যানচালক আসলাম হোসেন জানান, ভ্যান চালিয়েই তার সংসার চলে। রাস্তা নিয়ে তার অভিযোগ, বিভিন্ন রাস্তার উন্নয়নে কোটি কোটি টাকার বাজেট হয়, কিন্তু এই রাস্তা ঠিক হয় না। জন্মের পর থেকেই রাস্তার এ দশা দেখে আসছি। কোন সরকার বা প্রতিনিধি এ রাস্তা উন্নয়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। ভাঙা রাস্তার কারণে ভ্যানটানা খুব কষ্ট হয়। একটু ভারী মাল থাকলে গাড়ি উল্টে যায়।
জে কে মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবদুল কাদের বলেন, দীর্ঘদিন থেকে রাস্তাটি এ অবস্থায় রয়েছে। প্রথমে দেখলে এটিকে রাস্তা মনে নাও হতে পারে। মনে হতে পারে খালের মাঝে মাঝে সামান্য একটু রাস্তা। এলাকার বাসিন্দা ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য স্কুলে যাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে। হেঁটে যাওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। অনেক জনপ্রতিনিধি আশ্বস্ত করেছিলেন রাস্তাটি সংস্কারের। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেটি আর বাস্তবায়ন হয়নি।
স্থানীয় ৭ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য ফলুল হক, আমি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন দফতরে তকদির করেছি রাস্তাটি সংস্কারের জন্য। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকেও বিভিন্ন দফতরে দরখাস্ত আকারে চিঠি দেয়া হয়েছে। আশা করি যথাযথ কর্তৃপক্ষ রাস্তাটির ব্যাপারে সুদৃষ্টি দেবেন।
দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোলায়মান হোসেন বলেন, রাস্তাটি দীর্ঘ দিন থেকে ভাঙ্গা। রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় খানা-খন্দের সৃষ্টি হয়েছে। যার কারণে যাতায়াতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। অনেকেই আবার বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করে থাকে। যেহেতু দীর্ঘদিন থেকে রাস্তাটি সংস্কারবিহীন রয়েছে। তাই নতুন বাজেট আসা পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। তবুও আমরা পরিষদ থেকে চেষ্টা করছি দ্রুত সময়ে রাস্তাটি মেরামতের।
ওডি/এমএ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড