ওবায়দুল কবির সম্রাট, কয়রা (খুলনা)
খুলনার কয়রা উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১৪২টি। এর মধ্যে ৫৩টি বিদ্যালয়ের ভবন জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ। অতিরিক্ত ভবন বা শ্রেণিকক্ষের সংকট থাকার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ এসব ভবনে পাঠদান করতে হচ্ছে বহু শিক্ষার্থীকে। এ অবস্থায় বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে এসে আতঙ্কে থাকতে হয়। যেকোনো মুহূর্তে ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। বিষয়টি নিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি চিন্তিত অভিভাবকরাও।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনগুলোতে শিক্ষার্থীদেরকে পাঠদান করতে দেখা যায়। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে এসব বিদ্যালয় ভবনের ছাদের পলেস্তারা খসে রড বেরিয়ে গেছে। দরজা-জানালা অনেক আগেই খুলে পড়ে গেছে। কোথাও কোথাও ছাদের ভিমেও দেখা দিয়েছে বড় বড় ফাটল। বর্ষায় ছাদ চুইয়ে পড়ে পানি। এরপরও পাঠদান কার্যক্রম চলছে এসব বিদ্যালয়ে। কোনো কোনো বিদ্যালয়ে অস্থায়ী টিনের শেড তৈরি করে পাঠদান চলছে। এছাড়া বিদ্যালয়গুলোতে বেঞ্চ ও অন্যান্য উপকরণেরও অভাব রয়েছে।
অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রয়েছে- বগা সপ্রাবি, মদিনাবাদ মধ্যপাড়া সপ্রাবি, তালবাড়িয়া সপ্রাবি, লোকা সপ্রাবি, শ্রীরামপুর কালনা অন্তাবুনিয়া সপ্রাবি, গাঙেরখি সপ্রাবি, পূর্বচৌকুনি সপ্রাবি, ডাক্তারাবাদ বনরাণী সপ্রাবি, বামিয়া সপ্রাবি, ছোট আংটিহারা সুন্দরবন আদর্শ, ঘুগরাকাটি সপ্রাবি, মদিনাবাদ কলি সপ্রাবি, দ. মহারাজপুর সপ্রাবি, পাটনিখালি সপ্রাবি, উত্তর কালিকাপুর সপ্রাবি, দ. ঘুগরাকাটি সপ্রাবি, দ. হড্ডা পল্লী উন্নয়ন, হাতিয়ার ডাঙ্গা পশ্চিমচক, কুমারখালী সপ্রাবি, পূর্ব মহেশ্বরীপুর শাপলা সপ্রাবি, উ. ক্ষেপনা সপ্রাবি, দ. ভাগবা সপ্রাবি, গীলাবাড়ি সপ্রাবি, জোড়শিং সপ্রাবি, হরিহরপুর সপ্রাবিসহ উপজেলার ৫৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ, কক্ষ স্বল্পতা ও অস্থায়ী শেডে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, ঝুঁকিপুর্ণ ভবনে ক্লাস করতে গিয়ে তাদের আতঙ্কে থাকতে হয়। তাছাড়া পরীক্ষার সময় তাদের পরীক্ষা দিতেও খুব কষ্ট হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রধান শিক্ষক বলেন, ঝুঁকির মধ্যে পাঠদানে মন বসে না। কারণ, পরিবেশের সাথে পাঠদান কার্যক্রমের একটি নিবিড় সম্পর্ক আছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষা উপকরণ ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র সংরক্ষণে রাখতে বেগ পেতে হয়। এ অবস্থায় কোনো রকমে প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম শুধু চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। সর্বদা ভয়ে থাকতে হয়, যেকোনো সময় ঘটে যেতে পারে দুর্ঘটনা।
তালবাড়িয়া সপ্রাবি-এর প্রধান শিক্ষক অমন কৃষ্ণ বাইন বলেন, বর্তমানে বিদ্যালয়ের ভবন অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। যে কারণে ভয়ে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসতে চায় না। জরুরি সংস্কার করে শিক্ষার মৌলিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা না গেলে শিশুরা আরও স্কুল বিমুখ হবে এবং ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়তেই থাকবে।
উপজেলার মদিনাবাদ মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিক শহিদুল্লাহ জানান, তার বিদ্যালয়ে একটি ভবন। সেই একটি ভবন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকার কারণে ওই ভবনেই শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিতে হয়।
আরও পড়ুন : মেজর জিয়া গা ঢাকা দিয়ে আছে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান বলেন, পরিত্যক্ত ও জরাজীর্ণ বিদ্যালয় ভবনের তালিকা করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে। নতুন বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া বিকল্প উপায়ে পাঠদানের ব্যবস্থা করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিছু কিছু বিদ্যালয়ে ইতোমধ্যে অস্থায়ী শেড করা হয়েছে পাঠদানের জন্য৷
ওডি/এএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড