• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ডাক্তাররূপী ওষুধ ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে

  ওবায়দুল কবির সম্রাট, কয়রা (খুলনা)

২১ ডিসেম্বর ২০২১, ২১:০০
ওষুধ ব্যবসায়ীরা এখন রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন
ওষুধ ব্যবসায়ীরা এখন রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন (ছবি : অধিকার)

খুলনার কয়রা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ছোট ছোট দোকানের ওষুধ ব্যবসায়ীরা এখন রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন ডাক্তারের মতোই। যদিও এসব ব্যবসায়ীর কারো প্রাতিষ্ঠানিক কোনো স্বীকৃতি নেই। সাধারণ রোগীদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরামর্শ প্রদান এবং জটিল-স্পর্শকাতর রোগীদের বিশেষায়িত সরকারি হাসপাতাল বা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে প্রেরণের নিয়ম থাকলেও তারা করছেন এর উল্টো। অভিযোগ রয়েছে, চিকিৎসার নামে সাধারণ-জটিল সব রোগের মনগড়া চিকিৎসা দিয়ে চলেছেন তারা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কয়রায় ডাক্তার রূপধারী পল্লী চিকিৎসকদের দৌরাত্ম্য দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। উপজেলা শহর ও গ্রামগঞ্জে এদের দৌরাত্ম্য তুলনামূলক বেশি। চটকদার সাইনবোর্ড টাঙিয়ে নিজেদের নামের আগে ‘ডাক্তার’ উপাধি আর ‘ডিপ্লোমা, প্যারামেডিক, এলএমএএফ, ডিএইসএস, শিশু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার’-এর মতো নামে ভারী শব্দ লাগিয়ে দেদারছে বাণিজ্য চালাচ্ছেন তারা।

গ্রামাঞ্চলে চিকিৎসক সংকট থাকায় এবং মানুষের সচেতনতার অভাবকে পুঁজি করে বছরের পর বছর রোগী দেখে যাচ্ছেন তারা। রোগমুক্তি তো দূরের কথা, এসব ভুয়া চিকিৎসকের ওষুধ খেয়ে নানান জটিলতায় ভুগছেন হাজারো রোগী। এছাড়া মাঝে-মধ্যেই তাদের ভুল চিকিৎসার কারণে রোগী মারা যাওয়া মতো ঘটনাও ঘটছে। আবার অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের যথেষ্ট ব্যবহারের কারণে রোগকে আরও জটিল থেকে জটিলতর পর্যায়ে নিয়ে নিরাময় অসম্ভব করে ফেলছেন।

নিজের চেম্বার খোলার পাশাপাশি এসব পল্লী চিকিৎসক ওষুধও বিক্রি করছেন। নিজেই ডাক্তার, নিজেই আবার ওষুধ বিক্রেতা। এ কারণে রোগীদের মাত্রাতিরিক্ত ওষুধের ব্যবস্থাপত্রও দিচ্ছেন। নিজেদের আর্থিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে গ্রামের অশিক্ষিত-অল্প শিক্ষিত তথা গরীব মানুষদের আর্থিকভাবে সর্বস্বান্ত করে ফেলছেন তারা।

উপজেলা হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, পল্লী চিকিৎসকের কাছে ভুল চিকিৎসার কারণে রোগীরা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন। রোগের প্রাথমিক অবস্থায় তারা উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে দিচ্ছেন। সামান্য অসুখেও তারা উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের পরামর্শ দিচ্ছেন। ফলে রোগ নিরাময়ে সময় বেশি লাগছে। অনেক রোগী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলছেন। পরবর্তীতে একদিকে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না, অন্যদিকে রোগীর খরচও বেড়ে যায়। এসব রোগীর রোগ নির্ণয়েও অনেক সময় হিমশিম খেতে হয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুদীপ বালা বলেন, বিএমডিসি (বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল) অ্যাক্ট অনুযায়ী কেবল এমবিবিএস পাস করা চিকিৎসক ও ডেন্টাল সার্জনরা তাদের নামের আগে ডা. (ডাক্তার) লিখেতে পারবেন। কিন্তু আমাদের দেশে রুরাল মেডিক্যাল প্র্যাকটিশনার (আরএমপি) মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট ও ফার্মাসিস্টরা এমবিবিএস চিকিৎসকের মতোই করছেন জটিল সব রোগের চিকিৎসা। গ্রামগঞ্জে তো বটেই, পৌর শহরের অলিগলিতেও এখন তাদের বিচরণ। এ চিত্র কেবল কয়রায় নয়, গোটা দেশের। কিন্তু এটি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

আরও পড়ুন : মেজর জিয়া গা ঢাকা দিয়ে আছে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি সবার আগে। তাই শিগগিরই এ ব্যাপারে বেশি বেশি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি অবৈধ ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য। বিএমডিসি অ্যাক্ট অনুযায়ী, এমবিবিএস পাস করা চিকিৎসক ও ডেন্টাল সার্জন ছাড়া কাউকেই তাদের নামের আগে ডা. (ডাক্তার) লেখা অপরাধ। এছাড়া তাদের চিকিৎসা প্রদানের ক্ষেত্র যাচাই করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণ, এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

ওডি/এএম

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড