ঝালকাঠি প্রতিনিধি
ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার শুক্তাগড় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে জনবল নিয়োগ কার্যক্রমে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে পাতানো নিয়োগ পরীক্ষার কার্যক্রম স্থগিত করে দেয় রাজাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মোক্তার হোসেন।
এরআগে নিয়োগ কার্যক্রম বাতিল ও স্বচ্ছ নিয়োগের দাবিতে এলাকাবাসী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করে। আবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা দীনেশ চন্দ্র মজুমদারকে আহবায়ক, বন সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমানকে সদস্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) সকাল ১০টায় বিদ্যালয়ের শিক্ষক মিলনায়তনে তদন্ত কার্যক্রমের স্বাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়। এতে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক গড়মিল পায় তদন্ত কমিটি।
স্থানীয়দের দেওয়া অভিযোগ ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৬ সালে গোপন নিয়োগের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বপালন শুরু করে নুর আলম মল্লিক। বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি পদে আসীন রয়েছে প্রধান শিক্ষকের ফুফাতো ভাই কামরুল ইসলাম। তারা দুজনে মিলে বিদ্যালয়কে দুর্নীতির করদ রাজ্যে পরিণত করেছে। বিদ্যালয়ের শুন্য পদে অফিস সহকারী, সৃষ্ট পদে নৈশ প্রহরী ও আয়া পদে জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করে। কিন্তু শুরুতেই অস্বচ্ছ ও বিতর্কিতমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে।
২৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে প্রকাশিত অপ্রচলিত একটি দৈনিক ও ঝালকাঠি থেকে প্রকাশিত স্থানীয় দৈনিকে ৩টি পদে জনবল নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি জারী করে। অপ্রচলিত পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে গোপনে অফিস সহকারী পদে নিয়োগের কার্যক্রম সম্পন্ন করে। আয়া ও নৈশ প্রহরী পদে নিয়োগের জন্য ২টি পদের বিপরীতে ৪টি করে ৮টি আবেদন জমা ও বৈধ দেখায়। কিন্তু নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে সরকারি বিধি মোতাবেক উল্লেখ করা হলেও কোন বিধিতে কি কি উল্লেখ আছে তার কোন নির্দেশনা কোথাও জানায়নি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। দুটি পদে শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ মুখ্য বিষয় হলেও যোগসাজসে ৮টি আবেদন জমা পড়ায় ৮টিই বৈধ ঘোষণা করেছে।
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বিধি অনুযায়ী জেলা শিক্ষা অফিস, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস ও বিদ্যালয়ের নোটিশ বোর্ডে বহুল প্রচারের স্বার্থে সাঁটানোর শর্তে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের অনুমতি দেন জেলা শিক্ষা অফিসার মো. সিদ্দিকুর রহমান। কোথাও কোন বিজ্ঞপ্তি না সাঁটিয়ে ২৯ অক্টোবর ঝালকাঠি সরকারি হরচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয়ে পাতানো নিয়োগ পরীক্ষা দেখানোর আনুষ্ঠানিকতা শুরু করে। বিষয়টি রাজাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অবহিত হওয়ায় নিয়োগ পরীক্ষার সার্বিক কার্যক্রম তাৎক্ষণিক স্থগিত করেন। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির কোথাও কোন নোটিশ না দেওয়ায় প্রশাসনিক চাপ ও জনরোষ এড়াতে ২ নভেম্বর শুধুমাত্র বিদ্যালয়ের জানালায় হাতে লেখা একটি কাগজে বিজ্ঞপ্তি সাঁটানো হয়। এসব লুকোচুরির মাধ্যমে অবৈধ স্বার্থে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে স্বচ্ছ ও জবাবদিহি মূলক যোগ্যতার ভিত্তিতে এলাকাবাসী এ অভিযোগ দায়ের করেন।
তদন্তকালে কমিটির আহবায়ক উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা দীনেশ চন্দ্র মজুমদার, সদস্য উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমানসহ এলাকাবাসী, শিক্ষকবৃন্দ, অভিভাবক, ম্যানেজিং কমিটির সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির অভিভাবক সদস্য সোহরাব হোসেন তদন্ত কমিটিকে জানান, এভাবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া ঠিক হয়নি। আরো ভালোভাবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া উচিত ছিল।
ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আরও কয়েকজনে জানান, খাতা নিয়ে আমাদের কাছে গেলে আমরা স্বাক্ষর করে দেই। কিসে স্বাক্ষর করেছি তাও দেখতে পাই না। সরল বিশ্বাসে এমন কাজটি আমাদের দিয়ে করানো হয়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূরে আলম মল্লিক জানান, যথাযথ নিয়ম মেনেই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির কার্যক্রম করা হয়েছে। একটি মহল স্বচ্ছতার নামে অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রতিনিধি ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আবুল বাশার তালুকদার জানান, সভাপতি অসুস্থ থাকায় তিনি আসতে না পারায় নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়নি।
মহাপরিচালক প্রতিনিধি ও ঝালকাঠি সরকারী হরচন্দ্র উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হোসনে আরা আরজু জানান, আমি অসুস্থ ছিলাম। আর এমনিতেও এসব নিয়োগ বোর্ডের সদস্য থাকা আমার ভালো লাগে না। কোন দিকে কে কিভাবে নিয়োগ দেয় সেখানে আমাদের রাখে শুধু স্বাক্ষরের জন্য। জেলা শিক্ষা অফিসারকে বলেছি আমাকে এসব দায়িত্ব আর না দিতে।
ঝালকাঠি জেলা শিক্ষা অফিসার মো. সিদ্দিকুর রহমান জানান, আমাদের কাছে আসলে আমরা নিয়োগের যথোপযুক্ত কাগজপত্র দেখলে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির জন্য ছাড়পত্র দেই। তখন শর্ত দেয়া থাকে আমাদের অফিসের নোটিশ বোর্ডে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সাঁটানোর। আমরা শুধুই ছাড়পত্র দেয়া এবং নিয়োগ বোর্ড পরিচালনার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ডিজির প্রতিনিধি নিয়োগের কাগজ কলমে দায়িত্ব পালন করে থাকি। নিয়োগ পালন না করলে আমাদের হাতে আর কিছু করার থাকে না।
তদন্ত কমিটির আহবায়ক ও উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. দীনেশ চন্দ্র মজুমদার জানান, আমরা আনুষ্ঠানিকবাবে তদন্ত শুরু করেছি। আমাদের তদন্ত কাজ এখনও শেষ হয়নি। তদন্তে যেটা প্রমাণিত হবে সে অনুযায়ী প্রতিবেদন দেয়া হবে।
ওডি/এফই
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড