• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

লামায় ফসলি জমিতে তামাক চাষ

  মো. নুরুল করিম আরমান, লামা (বান্দরবান)

০৬ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪:২১
তামাক (ছবি : দৈনিক অধিকার)

বিগত মৌসুমের মত চলতি মৌসুমেও বান্দরবানের লামা উপজেলায় বৃষ বৃক্ষ তামাক চাষের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন একটি পৌরসভা এলাকার বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৯ হাজার একর ফসলি জমিতে তামাক চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে পুঁজিবাদী তামাক কোম্পানিগুলো।

তামাক কোম্পানিগুলো তাদের রেজিস্ট্রেশনভুক্ত প্রায় সাড়ে আড়াই হাজার চাষিকে প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসেবে ইতিমধ্যে বীজ, পলিথিন, কীটনাশক, সার ও ঋণ প্রদান করেছে। আর কৃষকরা তাদের ফসলি জমি, স্কুলের মাঠ ও আশপাশ, মাতামুহুরি নদীর চর ও নদীর দুই ধারসহ বিভিন্ন স্থানের জমিতে তৈরি করেছে বীজতলা। এ তামাক চাষের ফরে মাটির উর্বরতা নষ্ট, কৃষকদের স্বাস্থ্যহানি ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে বলে জানান পরিবেশবাদীরা।

কৃষি অফিসের হিসাব মতে, গত মৌসুমে প্রায় ৭১০ হেক্টর ও চলতি মৌসুমে কোম্পানিগুলো উপজেলায় ৬০০ হেক্টর অর্থাৎ ১ হাজার ৪৮২ একর জমিতে তামাক চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। তবে কৃষি অফিসের পরিসংখ্যানটি সঠিক নয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর কোম্পানিগুলোও রেজিস্ট্রেশনকৃত চাষির সংখ্যা ও জমির পরিমাণ কত তা কৌশলগত কারণে এড়িয়ে যাচ্ছেন। তবে বাংলাদেশ তুলা উন্নয়ন, বেসরকারি সংস্থা কারিতাস ও ইক্ষু গবেষণার উদ্বুদ্ধকরণে প্রায় ৫শ কৃষক তামাক চাষ থেকে ফিরে তারা এখন তুলা, আখ, পেঁপেসহ বিভিন্ন চাষে ঝুঁকে পড়ছেন জানা গেছে।

পৌরসভা এলাকার সাবেক বিলছড়ি, ছাগল খাইয়া, হরিণঝিরি, কলিঙ্গাবিল, সদর ইউনিয়নের মেরাখোলা, মাতামুহুরি নদীর রাজবাড়ী পয়েন্টসহ বিভিন্ন স্থান সরজমিনে পরিদর্শনে দেখা গেছে, বাড়ি আঙ্গিনা থেকে শুরু করে সর্বত্রই তামাক বীজতলা করা হয়েছে। বীজতলায় উৎপাদিত চারা এখন জমিতে রোপণের কাজ শুরু করেছে কোন কোন চাষি। আবার অনেকে তামাকের জন্য জমি প্রস্তুতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে বিকল্প কিছু পেলে চাষিরা এ চাষ ছাড়বেন বলে জানান তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোম্পানির পক্ষ থেকে এসব চাষিদের আগে ভাগেই অর্থ, সার, বীজ, পলিথিন, কীটনাশকসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাও প্রদান করা হয়েছে। রেজিস্ট্রেশনভুক্ত এসব চাষি মৌসুম শুরুর আগেই চড়া মূল্যে ফসলি জমিগুলো অগ্রিম লাগিয়ত নেয়। ফলে সবজি চাষিরা জমি নিয়ে বিপাকে পড়েন।

লামা পৌরসভা এলাকার হরিণঝিরি গ্রামের সবজি চাষি হায়দার আলী, শাহ জাহান মিয়াসহ আরও অনেকে জানান, তামাক চাষিদের অগ্রিম লাগিয়তের কারণে সবজি চাষের জন্য জমি পাওয়া যায় না। আর পাওয়া গেলেও মূল্য বেশি হওয়ায় অনেক সময় জমি লাগিয়ত নেয়া সম্ভব হয় না।

এছাড়াও তামাক কোম্পানিগুলোর রেজিস্ট্রেশন বহির্ভূত তামাক চাষির সংখ্যাও প্রায় দুই শতাধিক হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরাও প্রায় ৫০০ একর জমিতে এবার তামাক চাষ করবে। সবমিলিয়ে প্রায় ৯ হাজার একর জমিতে তামাক চাষের প্রস্তুতি চলছে বলে স্থানীয় তামাক চাষিরা জানিয়েছে।

তবে বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে আবুল খায়ের টোব্যাকো কমপক্ষে সাড়ে চার’শ কৃষকের মধ্যে ১৮৯০ একর, নাসির টোব্যাকো প্রায় ২০০ জন কৃষকের মধ্যে ৭০০ একর, ঢাকা টোব্যাকো প্রায় ৯০০ হাজার কৃষকের মধ্যে আড়াই হাজার একর, বিএটিবি প্রায় ৭০০ কৃষকের মধ্যে কমপক্ষে ২০০০ একর এবং নিউজএইজ টোব্যাকো কোম্পানির ৫০০ জন কৃষকের মধ্যে ১০০০ একর জমিতে তামাক চাষ করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে।

এদিকে পরিবেশবাদীরা জানায়, বার বার একই জমিতে তামাক চাষের ফলে কৃষক, প্রাকৃতিক পরিবেশ ও মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। রবিশস্যের উৎপাদনে নেপথ্যচারী হিসেবে নানা অন্তরায় তৈরি হচ্ছে। কিন্তু কোম্পানিগুলো আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এখনও তামাক চাষ অব্যাহত রেখেছে। তবে এ বিষয়ে টোব্যাকো কোম্পানির দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা কোন ধরণের মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এ বিষয়ে লামা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রতন চন্দ্র বর্মন বলেন, সরকারিভাবে তামাক চাষ বন্ধে সুনির্দিষ্ট কোন আইন না থাকায় এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। তবে তামাক চাষে কৃষকদের কোন ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে না বরং তাদের তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি বিকল্প আখ, বাদাম, পেঁয়াজ, ড্রাগন ফল, পেঁপে, ভুট্টা, তুলাসহ বিভিন্ন ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

ওডি/এমএ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড