হারুন আনসারী, ফরিদপুর
গাছ থেকে পড়ে কোমর ভেঙ্গে যাওয়ার পর প্রতিরাতেই হাড় ভাঙ্গার তীব্র যন্ত্রণায় ছটফট করেন জিয়া শেখ (৪০)। তীব্র ব্যাথায় তার গোঙ্গানির শব্দ শুনে অসহায়ের মতো মুখের দিকে চেয়ে থাকে ঘরের বৃদ্ধা মা, অসহায় স্ত্রী ও চারটি শিশু সন্তান। তাদের মধ্যে তিনজনই জন্ম থেকে প্রতিবন্ধী।
মধুখালীর এক হতদরিদ্র জিয়া শেখের পরিবারের করুণ কাহিনী এটি। মাত্র ছয় মাস আগে একটি তাল গাছ ঝাড়তে যেয়ে গাছ থেকে পড়ে চলাচলের শক্তি হারান জিয়া। ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নেওয়ার পর ডাক্তার বলেছেন অপারেশন করাতে।
কিন্তু সেই সামর্থ্য নেই তার পরিবারে। মধুখালী উপজেলার মেগচামী গ্রামের প্রতিবন্ধী জিয়া শেখের বাবা করিম শেখ ছিলেন একজন হতদরিদ্র গৃহকর্তা। বাসাবাড়িতে ভিক্ষা করে যা পেতেন তাই দিয়েই কোনোমতে দিন কাটতো পরিবারের। সাত বছর আগে তিন ছেলে ও স্ত্রী রেখে মারা যায় করিম শেখ। ছোট ছেলে এই জিয়া নিজেও একজন শ্রবণ প্রতিবন্ধী। ভূমিহীন এই পরিবারের মাথা গোঁজার কোনো ঠাই ছিলোনা।
করিম শেখ জানান, দিনমজুরির পাশাপাশি তালগাছ ও নারকেল গাছ ঝুড়ে (গাছের ডগা পরিচর্যা) চলতো তার সংসার। সংসারে স্ত্রী আরজিনা শ্রবণ প্রতিবন্ধী। দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে তাদের সংসারে। এর মধ্যে বড় ছেলে আকাশ (১৫) জন্ম থেকেই শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী। ৬ বছর বয়সী ছোট মেয়ে ইয়াসমিন বাবামায়ের মতোই শ্রবণ প্রতিবন্ধী। শারীরিক কোনো প্রতিবন্ধীতা নেই ১৪ বছর বয়সী বড় মেয়ে হেলেনার।
সে এখন মেগচামী স্কুল এন্ড কলেজ আদর্শ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। তাদের আরেক ছেলে রয়েছে ৮ বছর বয়সী তামিম। স্থানীয় প্রাইমারী স্কুলের ২য় শ্রেণির ছাত্র তিনি।
সামর্থ্যহীন পরিবারের ঘানি টানতে স্ত্রী আরজিনা বেগম (৩৭) স্থানীয় একটি মিলে মজুরের কাজ করতেন। আরজিনা নিজেও শ্রবণ প্রতিবন্ধী। একপর্যায়ে মিলে কাজ করতে যেয়ে তিনিও অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম জিয়া শেখ এখন চলাফেরা করেন লাঠিতে ভর দিয়ে। কাঁচামাটির ডোয়ায় টিনের চালার এক কক্ষের একটি ঘর তুলে সেখানেই বসবাস করছেন চার সন্তান, স্ত্রী ও বৃদ্ধা মাসহ সাত সদস্য নিয়ে। জিয়া শেখের মা রিনা বেগমের বয়স প্রায় ৬০ এর মতো। তিনিও একজন শ্রবণ প্রতিবন্ধী।
জিয়া শেখ জানান, বেসরকারি সংস্থা ব্রাক থেকে অনুদান হিসেবে পাওয়া গরু বাছুর পালন করে বিক্রির পর সেই টাকা দিয়ে গ্রামে তিন শতাংশ জমি কিনেছেন। সেখানে কোনোমতে একটি ঘর তুলে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। বড় ছেলে আকাশ প্রতিবন্ধী ভাতা পায়। তার সাথে মানুষের সাহায্য সহযোগীতা আর চেয়ে চিন্তে চলছে তার সংসার। এমনও সময় যায়, যখন তার বাড়ির চুলা জলেনা। শিশু সন্তানদের নিয়ে না খেয়েই অনেকদিন কাটে যায় এই অসহায় পরিবারের। তাদের এখন সম্বল বলতে সামান্য বাড়ির ভিটে ছাড়া আর কিছুই নেই।
জিয়া শেখ বলেন, আমার মা ও দুটি সন্তান প্রতিবন্ধী। আমিও ঘরে পড়ে আছি। আপনারা কেউ যদি দয়া করে একটু সাহায্য সহযোগিতা করতেন তাহলে আমরা প্রাণে বেঁচে থাকতে পারি।
স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার আজম মোল্যা বলেন, এই হতদরিদ্র পরিবারটি খুবই অসহায়ত্ব। এলাকাবাসী টাকা তুলে জিয়ার চিকিৎসা করিয়েছি। এখন তার অপারেশনের জন্য বেশ কিছু টাকার প্রয়োজন। সরকারের কাছে বিনীত আবেদন যেন এই পরিবারের একটু গতি করে দেয়।
মধুখালী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা কল্লোল সাহা বলেন, আমরা পর্যায়ক্রমে এই পরিবারের প্রতিটি প্রতিবন্ধী সদস্যকে জরিপের আওতায় এনে প্রতিবন্ধী ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করব এবং সরকারী বিশেষ যে প্রতিবন্ধী ক্ষুদ্র ঋণ সহায়তা আছে সে ব্যবস্থা করে তাদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলার চেষ্টা চালাব।
ওডি/এসএ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড