হারুন আনসারী, ফরিদপুর
"আমি লোভী নই, কিন্তু আমার অবস্থা করুণ; জীবনের এই শেষ বয়সের অবলম্বন আমার পৈত্রিক সম্পদটুকু যেন পাই।" কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ফরিদপুরের নাজমা আক্তার (৬৮)। তিনি ফরিদপুরের একজন প্রথম সারির বীর মুক্তিযোদ্ধা কবিরুল আলম কাঞ্চনের বিধবা স্ত্রী।
শনিবার (৪ ডিসেম্বর) সকালে নাজমা আক্তার ফরিদপুর প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলেন, শহরের কমলাপুর বটতলার পাশে তাদের পৈত্রিক ভিটার অধিকার হতে বঞ্চিত তিনি। এক একর ৬২ শতাংশের ওই পৈত্রিক জমির ২৩ শতকের ওয়ারিশ নাজমা। কিন্তু পিতার ভিটাতে যেতে পারেননা।
সেখানে গেলে শরিকেরা মারতে আসেন। তাকে মেরে ফেলারও হুমকি দেয়। একপর্যায়ে নিজের চিকিৎসা ও ভরণপোষণের জন্য তিনি ওই জমি বিক্রি করে দিয়েছেন। গত ২ ডিসেম্বর এ ব্যাপারে থানায় একটি সালিশ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার ভাই আসেনি। এরপর রাতে তিনি এ ব্যাপারে কোতোয়ালি থানায় একটি জিডি করেন।
এ ব্যাপারে স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত বীর শহীদ এম আব্দুল আলীর ছেলে আনোয়ারুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এই জমির বণ্টন নিয়ে ফরিদপুরের বিজ্ঞ সদর সহকারী জজ আদালতে একটি বণ্টন মামলা চলমান রয়েছে। এই মামলা চলমান থাকা অবস্থায় তার এই বোন নিজেদের মতো করে জমির সুনির্দিষ্ট সীমানা নির্ধারণ করে জবরদখল নিচ্ছে। যেটি তারা করতে পারেননা।
এ ব্যাপারে বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে ১৪৪ ধারা জারি করার পর পুলিশ তাদের গ্রেফতারও করে। এরপর তারা জামিনে বেরিয়ে আসে। তিনি জানান, দিনাজপুরের মালদহে তাদের আরও একটি সম্পত্তি ছিল যেটা প্রতারণা ও জালিয়াতি করে অন্য লোককে তাদের দুই ভাই সাজিয়ে এই বোন ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন৷ এটি নিয়ে তাদের অন্য ভাইদের সাথেও কোনো মীমাংসা হয়নি।
তিনি বলেন, বোনের এই আচরণ খু্বই আপত্তিকর এবং তাদের পরিবারের জন্য মর্যাদাহানিকর। তারপরেও তিনি সংবাদ সম্মেলন করায় বিষয়টি জানানো দরকার।
জানা যায়, ২০১৯ সালের ১০ অক্টোবর মারা যান বীর মুক্তিযোদ্ধা কাঞ্চন। তবে তার চেয়ে বড় পরিচয় নাজমা আক্তার স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে গৌরবময় ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৬ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারে (মরণোত্তর) ভূষিত শহীদ এম আব্দুল আলীর তিন মেয়ের মধ্যে কনিষ্ঠ। তার আরও দুজন ভাই রয়েছেন।
এমন একজন বীর শহীদ পিতার সন্তান ও বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী নাজমা। ২০১২ সালে লালমাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে অবসর নেন। ২০১৬ সালের ২৪ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট হতে পিতার স্বাধীনতা পদক গ্রহণ করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রাঙ্গামাটি সদরে মহকুমা প্রশাসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন শহীদ এম আব্দুল আলী। মুক্তিযুদ্ধের শুরুর দিকে রাঙ্গামাটি পুলিশ লাইনে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে প্রশিক্ষিত প্রথম দলটিকে যুদ্ধের জন্য চট্টগ্রামে পাঠান। অনেককে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য ভারতে পাঠানোর ব্যবস্থা নেন। ১৬ এপ্রিল পুত্র ইউসুফ হারুনসহ ২০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে রাঙ্গামাটি আসামাত্র পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর পাকবাহিনী তাকে জিপের পিছনে দড়িতে বেঁধে শহর ঘুরিয়ে অমানুষিক নির্যাতনের মাধ্যমে নির্মমভাবে হত্যা করে এবং ২৭ এপ্রিল তার মৃতদেহ ইট-পাথর দিয়ে কাপ্তাই লেকে চিরকালের জন্য ডুবিয়ে দেয়।
শহীদ এম আব্দুল আলী ২ ছেলে ও তিন মেয়ে রেখে যান। স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ ২০১৬ তাকে স্বাধীনতা পুরস্কারে (মরণোত্তর) ভূষিত করা হয়।
ওডি/এসএ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড