মো. মহিউদ্দিন, বাঘাইছড়ি
গত ২৮ আগস্ট শর্ত সাপেক্ষে পুনরায় খুলেছে সাজেক পর্যটন কেন্দ্র। পর্যটকদের মাস্ক ব্যবহার, হ্যান্ড স্যানিটাইজার অথবা সাবান দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করা, অসুস্থ অবস্থায় ভ্রমণ না করা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে চলা এবং পর্যটন মন্ত্রণালয়ের বিধি অনুসরণ করতে নির্দেশনা দিয়ে সাজেক পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে।
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছেড়ে আসা গাড়িগুলো এসে থামছে খাগড়াছড়ির শাপলাচত্বরে, গাড়ি থেকে দলে দলে নামছে পর্যটক। সূর্যের আলোর সঙ্গে সঙ্গে আশপাশের এলাকায় লোকে লোকারণ্য, একটু বিশ্রাম নিয়ে ফের ছুটে চলা হচ্ছে সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র সাজেক ভ্যালীর উদ্দেশ্যে।
রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় অন্তর্ভুক্ত হলেও সাজেকে যেতে হয় খাগড়াছড়ি হয়ে। আয়তনের দিক থেকে দেশের বৃহত্তর ইউনিয়ন সাজেক। খাগড়াছড়ি জেলা শহর শাপলাচত্বর থেকে আঁকা বাঁকা পথ দিয়ে যেতে যেতে চোখে পড়বে ছোট বড় হাজারো পাহাড়ে বেষ্টিত প্রকৃতির সৌন্দর্য। এখানে মূলত মেঘ-পাহাড়ের দারুণ মিতালি মুগ্ধ করে পর্যটকদের। যতদূর চোখ যায় শুধু পাহাড়ের ওপর শুভ্র মেঘের আনাগোনা।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৮শত ফুট উচ্চতায়, উত্তরে ভারতের মিজোরাম সীমান্তে অবস্থিত সাজেক মূলত তিনটি পাড়া নিয়ে গঠিত। রুইলুই পাড়া, কংলাক পাড়া, হামারি পাড়া। পর্যটকরা মূলত রুইলুই এবং কংলাক পাড়ায় গিয়ে অবস্থান নেয়।
সাজেকে সূর্যোদয় কিংবা সূর্যাস্তের রূপ দুটোই মুগ্ধ করে পর্যটকদের। এছাড়াও শীত, বর্ষা বা গরম সব পরিবেশে আপন রং ছড়ায় সাজেক। রোদ ঝলমলে সাজেকে হানা দেয় হঠাৎ বৃষ্টি। অনেক সময় আবার মুহূর্তে ঢেকে যায় মেঘের চাদরে। রুইলুই পাড়া থেকে কিছুটা দূরে কংলাক পাহাড়, এটিই সাজেকের সর্বোচ্চ চূড়া।
এখান থেকে মিজোরাম পরিষ্কার দেখা যায়। এখানে দাঁড়িয়ে দেখা যাবে নিচের পাহাড়গুলো নিয়ে খেলছে সাদা মেঘ। এছাড়াও সাজেকে বসবাসকারীদের জীবন-সংস্কৃতি সম্পর্কে দেখার সুযোগ তো আছেই। মেঘের এই উপত্যকা ঘিরে দিনে দিনে বাড়ছে পর্যটকদের আগ্রহ। তাই সুযোগ পেলে সেখানে ছুটতে চাইছে সবাই।
সচারাচর কনকনে শীতের মধ্যে সাজেকে পর্যটকদের ভিড় বেশি থাকে। করোনা মহামারির মধ্যে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল সাজেক খোলার পর থেকে পর্যটকের ভিড় তেমন একটা বাড়েনি। করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর আগে প্রতিদিন গড়ে ১০-১৫ হাজার পর্যটক সমাগম হতো, ৪০০-৫০০ গাড়ী সাজেক যাতায়াত করতো এখন সেই সংখ্যা অনেকটাই কমে গেছে। বর্তমানে ১৫০-২০০ গাড়ি যাতায়াত করে তাও শুক্রবার ও শনিবার।
তবে সাজেক নিয়ে বেশ কয়েকজন পর্যটকের রয়েছে অভিযোগ, এখানে বেড়াতে আসা পর্যটকদের অনেকেই থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন। পর্যটকদের অভিযোগ, সাজেকে আবাসিক কটেজ ও খাবারের দাম অযৌক্তিকভাবে বেশি নেওয়া হচ্ছে। এতে এখানে এসে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে দেশের দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকদের।
বরিশাল থেকে সাজেকে বেড়াতে আসা পর্যটক রফিকুল ইসলামসহ অনেকেই জানান, এখানে হোটেল ভাড়া ও খাবারের খরচ তুলনামূলক ভাবে দেশের অন্যান্য টুরিস্ট স্পটের চেয়ে বেশি। নির্মল প্রকৃতির কোলে ছুটি কাটাতে আসলেও এখানে পর্যটকদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থায় কোনো শৃঙ্খলা নেই। বলতে গেলে আমরা হোটেল-রেস্তোরাঁর মালিকদের কাছে জিম্মি হয়ে আছি।
ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক আফতাব মাহমুদ ও শাকিল আহম্মেদ জানান, অনেক দিন ধরে সাজেক আসার ইচ্ছে ছিল। এবার তা পূরণ হলো। অসাধারণ লাগছে। বিশেষ করে সকাল বেলার সূর্যোদয় দেখাটা ছিল স্পেশাল। যাত্রাপথটাও দারুণ, তবে এখানে অন্যান্য পর্যটন স্থান গুলোর তুলনায় থাকা খাওয়ার খরচ অনেকটাই বেশি পড়ে।
সাজেক চিলেকোঠা রেস্টুরেন্টের মালিক নাছির উদ্দিন পিন্টু বলেন, এখানে রেস্টুরেন্ট পরিচালনা করা অনেক কষ্টের, খাবার পানির অভাব, যাতায়াতের খরচটাও অনেক বেশি হয়। এখানে স্থানীয় কোনো হাট বাজার নেই, অনেক দুর থেকে কিনে আনতে খরচ অনেক বেশি পড়ে, তাই খাবারের দাম সামান্য বেশি, তবে পর্যটকদের হাতের নাগালেই রয়েছে।
বেশ কিছু হোটেল ও কটেজের মালিক এবং ম্যানেজারের সাথে কথা বলে জানা যায়,করোনাভাইরাসে সাজেক ভ্যালী বন্ধ থাকার কারণে ব্যবসায়ীরা অনেক ক্ষতির মুখে পড়েছে, এবং বর্তমানে তুলনামূলক ভাবে পর্যটক কিছুটা বাড়তে শুরু করেছে, তবে আগের ন্যায় পর্যটকদের আনাঘোনা বাড়বে আশাবাদী তারা।
ওডি/এসএ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড