এসএম রাসেল, মাদারীপুর
যাত্রীদের অভিযোগ, ‘বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচলের নামে চলছে শুধু প্রহসন! মাত্র ৪ টি ফেরি দিয়ে ১০ ঘণ্টা ফেরি সার্ভিস চালু রাখায় প্রতিদিন শত শত গাড়ি পদ্মা পার হতে না পেরে ফিরে যাচ্ছে। দূরবর্তী জেলা থেকে আসা ছোট যানবাহনগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘাটে অপেক্ষা করে বিকেলে যখন ফেরিতে উঠতে ব্যর্থ হচ্ছে তখন বিকল্প নৌরুটে যাওয়াও সম্ভব হচ্ছে না। রাতে ঘাটের টার্মিনালে থাকতে হচ্ছে যানবাহনগুলোকে।
ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এসকল গাড়ির চালক ও যাত্রীদের। গাড়ির চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সও ফেরিতে উঠতে ব্যর্থ হচ্ছে। জরুরী অবস্থায় দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-রুটে ছুটতে হচ্ছে তাদের। এই অবস্থায় ফেরি সার্ভিসে সময় ও ফেরির সংখ্যা বাড়ানো হোক নয়তো পুরোপুরি বন্ধ রাখা হোক ফেরি চলাচল।
এদিকে আবার ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বরত কোন সদস্য উৎকোচ নিয়ে কিছু যানবাহনকে ফেরিতে উঠার সুযোগ করে দেয় বলেও অভিযোগ করছেন পদ্মা পার হতে আসা ছোট যানবাহনের চালকেরা। সে ক্ষেত্রে সিরিয়াল ভেঙে পেছনের গাড়িও ফেরিতে উঠে বলে অভিযোগ তাদের।
তবে এই অভিযোগের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়ে বাংলাবাজার ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক(টিআই) মো. জামাল উদ্দিন বলেন, নৌরুটে ফেরি সংখ্যা এবং সময় না বাড়ানো হলে দুর্ভোগ শেষ হবে না। সকাল থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত সময়ে যাত্রীদের সেবা দেয়া সম্ভব হয় না। কারণ মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, অ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যা প্রতিদিন যে পরিমাণে ঘাটে আসে তাতে শতাধিক যানবাহন ফেরিতে উঠতে ব্যর্থ হয়। ভোর থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত শত শত গাড়ির ভিড় থাকে ঘাটে। ফেরিতে উঠার রাস্তা গাড়িতে ব্লক হয়ে যায়। জরুরী অ্যাম্বুলেন্সও তখন ফেরিতে উঠানো সুযোগ থাকে না। ফেরির সংখ্যা এবং রাতে চলাচল শুরু না হলে এই দুর্ভোগ আরও প্রকট আকার ধারণ করবে।
বাংলাবাজার ঘাট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর বর্ষা মৌসুমে স্রোতের তীব্রতার কারণে পদ্মাসেতুর পিলারে একাধিকবার ফেরির ধাক্কা লাগে। এরপর থেকেই ফেরি চলাচল ব্যাহত হতে থাকে। দুর্ঘটনা এড়াতে গত ১৮ আগস্ট ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এরপর টানা ৪৭ দিন বন্ধ থাকার পর গত ৫ অক্টোবর সীমিত আকারে ফেরি চালু হয়। মাত্র ৬ দিন চলার পর স্রোত বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে আবারো ফেরি বন্ধ রাখে কর্তৃপক্ষ। টানা ২৮ দিন বন্ধ থাকার পর গত ৮ নভেম্বর থেকে পুনরায় ফেরি চালু হয় বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটে। তবে সকাল ৬ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত মাত্র ৪ টি ফেরি চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এবং ভারী যানবাহন পারাপার বন্ধ রেখে শুধু হালকা যানবাহন পার করা হয়। ফেরি চালুর পর এই নৌরুট ব্যবহারকারীদের মনে আশার সঞ্চার হলেও কিছুদিন যেতেই দুর্ভোগের শিকার হতে থাকে যাত্রীরা। প্রতিদিন অসংখ্য ছোট যানবাহন ঘাটে এলেও ফেরির স্বল্পতার কারণে পর্যাপ্ত সংখ্যক যানবাহন ফেরি পারাপার হতে না পেরে ফিরে যাচ্ছে ঘাট থেকে।
মঙ্গলবার বিকালে বরিশাল, গোপালগঞ্জ, পটুয়াখালি. পিরোজপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, পিকআপ এবং অ্যাম্বুলেন্স চালকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এই নৌরুটে ফেরি স্বল্পতার কারণে ঘাটে দুর্ভোগ বেড়েছে। মঙ্গলবার দুপুর ১টা থেকে ঘাটে যানবাহনের সিরিয়ালে থেকেও বিকালে সাড়ে চারটায় সর্বশেষ ফেরিতে উঠতে পারেনি অসংখ্য গাড়ি। শতাধিক গাড়ি ফেরি পার হতে ব্যর্থ হয়েছে। কেউ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুট দিয়ে পার হতে বাংলাবাজার ঘাট ত্যাগ করেছে। আবার অসংখ্য গাড়ি ঘাটের টার্মিনালে রয়েছে পরের দিন সকালে পার হবার জন্য।
চালকেরা জানান, বাংলাবাজার ঘাটে এসে পার হতে না পেরে বিকল্প রুটে ফিরে যেতে জ্বালানি খরচ দ্বিগুণ হয়ে যায়। অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও পার হতে না পেরে চরম ভোগান্তি আর কষ্ট নিয়ে ফিরে যান।
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর থেকে আসা এক অ্যাম্বুলেন্স চালক বলেন, জরুরী রোগী নিয়ে ঘাটে এসে অপেক্ষা করেও ফেরিতে উঠতে পারিনি। এদিকে অনেকে ‘ম্যানেজ’ করে ফেরিতে উঠে যাচ্ছে। কিভাবে উঠছে তা কেউ বলেও না। তবে গাড়ির সংখ্যা প্রচুর এই ঘাটে। সে তুলনায় ফেরি নাই। একটি ফেরি ছেড়ে গেলে আরেকটি আসতে অনেক সময় লাগে। এদিকে বিকেল সাড়ে চারটায় ফেরি বন্ধ। সব মিলিয়ে দুর্ভোগের শেষ নাই। রাতে ফেরি চললে এই সমস্যা থাকতো না।
বিআইডব্লিউটিসি’র বাংলাবাজার ঘাটের ব্যবস্থাপক মো. সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ফেরি চলাচলে সময় এবং সংখ্যা বাড়ানোর কোন সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। হবে কি না তাও জানা নেই। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বিষয়টি।
ওডি/এমএ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড