কাজী শাহরিয়ার রুবেল, আমতলী (বরগুনা)
গত ৩ মাস ধরে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না বরগুনার আমতলী উপজেলায় নারীদের উচ্চ শিক্ষার একমাত্র প্রতিষ্ঠান বকুলনেছা মহিলা ডিগ্রী কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরা। কলেজে নতুন পরিচালনা পরিষদ (এডহক) কমিটি গঠন করার পর থেকে এমন অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ শিক্ষকদের। ফলে দাবি উঠেছে কমিটির সভাপতিকে অপসারণের। তার অপসারণ চেয়ে কলেজের সম্মুখে ব্যানার ঝুলিয়েছে অভিভাবক ও সাধারণ জনগণ।
জানা গেছে, বকুলনেছা মহিলা ডিগ্রী কলেজের পরিচালনা (এডহক) কমিটির সভাপতি হিসেবে গত ১৬ আগস্ট ফাহিমা সুলতানাকে কলেজ পরিদর্শক (ভারপ্রাপ্ত), বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম সরোয়ার টুকুকে (১৬ আগস্ট ২০২১ থেকে ৬ মাসের জন্য) পূর্ণাঙ্গ পরিচালনা কমিটি করার জন্য সভাপতি হিসেবে মনোনয়ন দেয়। গোলাম সরোয়ার টুকু সভাপতি মনোনীত হওয়ার পর ৩ মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও তিনি এখন পর্যন্ত কলেজ পরিচালনা (এডহক) কমিটির কোন সভা আহবান করেননি।
এছাড়া বেতন-ভাতায় স্বাক্ষর না করায় গত ৩ মাস ধরে ওই কলেজে কর্মরত ৩৪ জন শিক্ষক-কর্মচারী তাদের বেতন ভাতা উত্তোলন করতে না পেরে মানবতার জীবন যাপন করছেন। বর্তমানে কলেজটিতে কর্মরত শিক্ষকদের মধ্যে দুটি গ্রুপ লক্ষ করা গেছে। এতে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় যেমন বিঘ্ন ঘটছে তেমনি প্রশাসনিকভাবে সৃষ্টি হয়েছে অচলাবস্থার।
অপরদিকে বুধবার সকালে বকুলনেছা মহিলা ডিগ্রী কলেজের সম্মুখে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় মনোনীত ওই কলেজের পরিচালনা (এডহক) কমিটির সভাপতি গোলাম সরোয়ার টুকুর অপসারণ চেয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও সাধারণ জনগণের ব্যানারে দাবি সম্বলিত একটি ব্যানার টানানো হয়। খবর পেয়ে সাংবাদিকরা ওই ব্যানারের ছবি তুলতে গেলে কলেজের শিক্ষক বশির আহম্মেদ ও জয়নুল আবেদীন টানানো ব্যানারটি খুলে ফেলেন।
কলেজের অভ্যন্তরে গিয়ে দেখা যায়, ওই দুই শিক্ষকের উপস্থিতিতেই কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা টি-শার্ট পড়ে, মুখে রং মেখে, হিন্দি গান বাজিয়ে র্যাগ ডে পালন করছেন। কলেজে ওই র্যাগ ডে পালনের বিষয়টি কলেজের অধ্যক্ষসহ অধিকাংশ শিক্ষক ও পরিচালনা (এডহক) কমিটির সদস্যরা জানেন না।
অধিকাংশ শিক্ষকরা জানান, বর্তমানে কলেজ পরিচালনা (এডহক) কমিটির সভাপতির অনুগত ওই দুই শিক্ষক বশির আহম্মেদ ও জয়নুল আবেদীনসহ ৩/৪ জন শিক্ষক মিলে কলেজটিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পায়তারা করছেন।
কলেজের স্টাফ কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ও সহকারী প্রভাষক হেলেনা বেগম বলেন, কলেজে আজ র্যাগ ডে পালনের বিষয়টি অধ্যক্ষ ও আমিসহ অধিকাংশ শিক্ষকরাই জানেন না।
এ বিষয়ে জানতে ওই কলেজের পরিচালনা কমিটির বিদোৎসাহী সদস্য মো. শহিদুল ইসলাম মৃধা বলেন, কলেজ থেকে কোন অনুষ্ঠানের দাওয়াত পাইনি এবং গত ৩ মাস ধরে কলেজ পরিচালনা (এডহক) কমিটির জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় মনোনীত সভাপতি কোন সভাও আহবান করেননি।
কলেজের অধ্যক্ষ মো. ফোরকান মিয়া ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমরা শিক্ষক-কর্মচারীরা একাধিকবার বিলে স্বাক্ষর দেওয়ার জন্য এডহক কমিটির সভাপতিকে অনুরোধ করলেও তিনি অদ্যবদি কলেজের কোন বিল ভাউচার ও কলেজ সংশ্লিষ্ট কোন কাগজে স্বাক্ষর করেননি। বাধ্য হয়ে আমিসহ কর্মরত অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতন ভাতার জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মহোদয়ের নিকট লিখিতভাবে এবং সংসদ সদস্য অ্যাড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর সাথে দেখা করে বিষয়টি জানিয়েছি। এডহক কমিটির সভাপতি মনোনীত হওয়ার পর গত ৩ মাসে তিনি কলেজের পরিচালনা কমিটির কোন সভা আহবান করেননি। আর আমার নিয়োগ নিয়েও কোন আইনগত জটিলতা নেই।
আরও পড়ুন : নৌকায় আগুন, স্বতন্ত্র প্রার্থীর অফিস ভাঙচুর
কলেজ পরিচালনা (এডহক) কমিটির সভাপতি গোলাম সরোয়ার টুকু সভা আহবান না করার কথা স্বীকার করে বলেন, কলেজের অধ্যক্ষের নিয়োগ নিয়ে আইনগত জটিলতা থাকায় আমি অধ্যক্ষসহ অন্য শিক্ষক-কর্মচারীদের বিল ভাউচারে স্বাক্ষর করিনি। তবে শীঘ্রই অধ্যক্ষ ছাড়া অন্যান্য শিক্ষক-কর্মচারীদের বিলের ব্যবস্থা করা হবে। তবে তার অপসারণ চেয়ে টানানো ব্যানারের বিষয়টি তিনি জানেন না বলে জানান।
ওডি/জেআই
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড