• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে প্রতিবন্ধী বাবা-মেয়ের সঙ্গে প্রতারণা

  মো. মুশফিকুর রহমান রিজভী, সাতক্ষীরা

২৪ নভেম্বর ২০২১, ১৬:১২
চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে প্রতিবন্ধী পরিবারের সাথে প্রতারণা
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির। ছবি : অধিকার

সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ইসলামীকাঠী ইউনিয়নে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে প্রতিবন্ধী বাবা-মেয়ের সঙ্গে প্রতারণা করে সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন নাংলা পিএসজে ফাজিল মাদরাসার একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য।

বিগত ২ বছরের অধিক সময় ধরে ম্যানেজিং কমিটির ওই সদস্যরা চাকরি অথবা টাকা কোনোটায় না দিয়ে বিভিন্ন অজুহাতে প্রতারণা করে চলেছেন। সম্প্রতি এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ওই প্রতিবন্ধী বাবা- মেয়ে সুষ্ঠু বিচার চেয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন।

লিখিত ওই অভিযোগ সূত্রে এবং ভুক্তভোগী পরিবারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তালা উপজেলার ইসলামকাটি ইউনিয়নের পরাণপুর গ্রামের ইলিয়াস হোসেন খাঁর ছেলে আল-মামুন খাঁ ও তার মেয়ে ফারজানা ইয়াসমিন শারীরিক প্রতিবন্ধী। তার স্ত্রী লিপিয়া বেগম মাঝে মাঝে দিনমুজুরী ও স্থানীয় বিভিন্ন বাড়িতে কাজ করে কোনো রকমে সংসার খরচ চালান।

গত ২০১৯ সালের ২২শে জুন পত্রিকায় স্থানীয় নাংলা পি.এস.জে ফাজিল মাদরাসায় একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগের বিজ্ঞাপন প্রকাশ করলে ওই পদে নিয়োগের প্রত্যাশায় মাদরাসার অধ্যক্ষসহ ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের সাথে আলোচনা করে লিপিয়া বেগমের পরিবার।

সে সময় ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা তাদেরকে জানান মাদরাসায় ডোনেশন বাবদ পাঁচ লক্ষ টাকা দিলে তার নিয়োগ নিশ্চিত। তাদের আশ্বাসে চাকরি পাওয়ার আশায় লিপিয়া বেগমের পারিবারিক জমি বন্ধক রেখে, চড়া সুদে ঋণ নিয়ে এবং দুটি গাভী বিক্রয় করে ম্যানেজিং কমিটির বিদ্যুৎসাহী সদস্য মাহবুবুর রহমান মিঠুর কাছে পাঁচ লক্ষ টাকা দেয় লিপিয়ার স্বামী আল-মামুন। পরে বিদ্যুৎসাহী সদস্য মাহবুবুর রহমান মিঠুর চাহিদা মোতাবেক তাকে আরও পঞ্চাশ হাজার টাকা দেন তারা। সমুদয় টাকা লেনদেনের সময় প্রতিবন্ধী আল-মামুনের সাথে ছিলেন তার মামা কামরুল মোড়ল।

এদিকে মাদরাসা ম্যানেজিং কমিটির বিদ্যুৎসাহী সদস্য মাহবুবুর রহমান মিঠু আল-মামুনের কাছ থেকে মোট সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা নেওয়ার পর পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে তার স্ত্রী লিপিয়া বেগমকে চাকরি না দিয়ে বিভিন্ন তালবাহানা করতে থাকে। কয়েকদিন পরপর বিভিন্ন পত্রিকায় একই পদে বারবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এতে আল-মামুনের সন্দেহ হলে তিনি মাহবুবুর রহমান মিঠুসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা আবারও বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে কালক্ষেপণ করে।

সর্বশেষ চলতি বছরের ৯ই মার্চ দৈনিক পত্রদূত ও দৈনিক সমকাল পত্রিকায় পরিচ্ছন্নতা কর্মীসহ নবসৃষ্ট পদ ‘আয়া’পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে নাংলা পিএসজে ফাজিল মাদরাসা কমিটি। সে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি থেকে আয়া পদে একজনকে নিয়োগ করা হলেও পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে প্রতিবন্ধী আল-মামুনের স্ত্রী লিপিয়া বেগমকে নিয়োগ না দিলে বিষয়টি নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়।

এক পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে আল-মামুন মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি তালা উপজেলা চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমারের কাছে গেলে তিনি বিদ্যুৎসাহী সদস্য মাহবুবুর রহমান মিঠুকে সমুদয় টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেন কিন্তু মিঠু সমুদয় টাকা ফেরত না দিয়ে তিন লক্ষ টাকা ফেরত দেন এবং বাকি টাকা ফেরত না দিয়ে বিভিন্ন তালবাহানা করতে থাকেন। এমনকি আল-মামুনকে ‘আর কোনো টাকা ফেরত দেবেন না’ বলেও জানিয়ে দেন এবং পরবর্তীতে তার কাছে টাকা ফেরত চাইলে পরিণতি খারাপ হবে বলেও হুমকি দেন।

এ অবস্থার প্রেক্ষিতে প্রতিবন্ধী আল-মামুন সম্প্রতি সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক বরাবর সুষ্ঠু প্রতিকার চেয়ে একটি লিখিত আবেদন করছেন। তার আবেদন পত্রে সুষ্ঠু তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছেন সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ।

এ দিকে চাকরির আশ্বাসে সুদে ঋণ নিয়ে বিপদে থাকা আল-মামুন ও তার স্ত্রী লিপিয়া বেগম জানিয়েছেন, চড়া সুদে ঋণ নিয়ে তাদের এখন বাড়িতে থাকাই মুশকিল হয়ে গেছে। প্রতিদিনই পাওনাদাররা তাদের বাড়িতে এসে হাজির হচ্ছেন। তাদের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে গ্রামরে মানুষের সামনে প্রতিনিয়ত অপমানিত হতে হচ্ছে তাদের। আল-মামুন এবং তার প্রতিবন্ধী মেয়ের ভাতার টাকায় কোনো রকমে তাদের সংসার চলে। তার ওপর এখন চেপেছে সুদের বোঝা।

তারা এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে ক্ষতিপূরণসহ মাদরাসা কমিটির বিদ্যুৎসাহী সদস্য মাহবুবুর রহমান মিঠুকে দেওয়া সমুদয় টাকা ফেরত পেতে প্রধান মন্ত্রীসহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

তবে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে টাকা নেওয়ার বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত মাহবুবুর রহমান মিঠুর কাছে ফোন করলে তিনি গরিমশি শুরু করেন। দু-তিনদিন পরে সাক্ষাতে কথা বলবেন বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুন : কর্ণফুলী উপজেলার ৪ ইউপিতে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের তালিকা চূড়ান্ত

এ প্রসঙ্গে জানতে নাংলা পিএসজে ফাজিল মাদ্রাসা পরিচালনা কামিটির সভাপতি ও তালা উপজেলা চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার বলেন, টাকা লেনদেনের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। তবে আল-মামুনের অভিযোগ পেয়ে আমি অভিযুক্ত বিদ্যুৎসাহী সদস্য মাহবুবুর রহমান মিঠুকে ডেকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম সে চাকরি দেওয়ার নামে কোনো টাকা নিয়েছে কিনা। সে আমাকে জানিয়েছে কারও কাছ থেকে কোনো টাকা নেয়নি।

ওডি/এসএ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড