• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩২ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

কক্সবাজারে দৌরাত্ম্য বেড়েছে চাঁন্দের গাড়ির

  শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার

২৩ নভেম্বর ২০২১, ১২:১৭
ছবি : দৈনিক অধিকার

কক্সবাজার থেকে টেকনাফ, জেলার দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক সময় খোলা জিপ ছিল যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। যদিও স্থানীয় ভাষায় এই গাড়িগুলোকে ‘চান্দের গাড়ি’ বলা হয়। সময়ের বিবর্তনে পর্যটন নগরী ও এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হলেও কক্সবাজারে পর্যটকদের কাছে চাঁন্দের গাড়ির কদর এখনো কমেনি। বরং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কক্সবাজার শহর থেকে মেরিন ড্রাইভ রোডে পর্যটন স্পটগুলোতে চাঁন্দের গাড়িতেই যাতায়াত করেন পর্যটকরা।

অথচ আধুনিক বাস, মিনিবাস, প্রাইভেট কারসহ অন্যান্য যানবাহনও চলাচল করেন। দিন-রাত সব সময় এই গাড়ি পাওয়া যায়। ভাড়াও তুলনামূলক কম। খোলা জিপ গাড়িতে যে কোন জায়গায় বসা যায়, খোলা জীপে চারপাশ ও আকাশ বা চাঁদ দেখা যায় এই চাঁন্দের গাড়িগুলোতে। ফলে কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছে এখনও চাঁদের গাড়ি যেন বিপদের বন্ধু। এছাড়াও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে এই গাড়ির ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে সভা-সমাবেশ কিংবা নির্বাচনী গণসংযোগ আর প্রচারণার কাজে চাঁন্দের গাড়ির বিকল্প নেই। তাই রাজনৈতিকদের কাছেও এই গাড়ির বিশেষ কদর রয়েছে।

যে কারণে এই অঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর একটি বিরাট অংশের কর্মসংস্থানের অন্যতম অবলম্বন এই চাঁন্দের গাড়ি। এতসব সেবা এবং সুবিধার মাঝেও চাঁন্দে গাড়ি নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।

কক্সবাজার শহরে বেড়ে গেছে এসব চাঁন্দের গাড়ীর দৌরাত্ম্য। কলাতলি ডলফিন মোড়ে আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাস্তায় পার্কিং, বাহারছড়া গোলচক্কর, দরিয়া নগর রোড, কলাতলি প্রধান সড়ক, হোটেল- মোটেল জোন সড়ক, সুগন্ধা সী বিচ রোডের উভয় পার্শে টুরিস্ট বাহি গাড়ীগুলোর অর্ধেক রাস্তা জুড়ে পার্কিং এবং ফুটপাত দীর্ঘদিন ধরে দখলে রয়েছে। পর্যটকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগও রয়েছে দীর্ঘদিনের।

স্থানীয় সাংবাদিক শাহাদাত হোসেন বলেন, হোটেল- মোটেল জোনের সড়কটি চার লেইনে উন্নীত করা হয়েছে। পর্যটকবাহী খোলা জীপের এলোপাথাড়ি পার্কিংয়ের কারণে ৪ লেইন নয়, ৮ লেইন রাস্তা হলেও পোষাবে না এদের। যান চলাচল ও পথচারী চলাচলে ঘটছে বিঘ্ন। এদের দৌরাত্ম্য কমানো দরকার বলে মনে করেন তিনি।

অভিযোগ রয়েছে, এই গাড়ির চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট, রোড পারমিটসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেই। বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে লক্কর-ঝক্কর পুরাতন গাড়ি নিলামে কিনে রং কিংবা জোড়া তালি দিয়ে সড়কে নামানো হয়েছে। অনেক সময় অপ্রাপ্তবয়স্ক এবং বয়োবৃদ্ধদেরও চাঁন্দের গাড়ি চালাতে দেখা যায়। অধিকাংশ চালক বা হেলপারের ট্রাফিক আইন সম্পর্কে ধারণাও নেই। ফলে মেরিন ড্রাইভ সড়কসহ জেলার অন্যান্য স্থানে আঁকাবাঁকা পথে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটে।

যদিও অভিযোগ মানতে রাজি নন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, কাগজ থাকলেই যে সব ঠিক হয়ে যাবে এমন নয়। টাকা দিয়েও অনেক সময় ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া যায়। পুরাতন গাড়িগুলোর নিলামের কাগজ রয়েছে। এছাড়াও অনেকে ১-২ বছর হেলপারি করে হাতে-কলমে শিক্ষা নিয়েই চালকের আসনে বসেন।

তবে অন্য গাড়ির চালকদের মতো তাদেরও শান্তি নেই। গাড়ি চালাতে গিয়ে প্রায়ই বিড়ম্বনা এবং লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়। কলাতলি ট্রাফিক পুলিশ মাসিক দুই লক্ষাধিক টাকা চাঁদাবাজি করেন ও বিভিন্ন সমিতিতেও চাঁদা দিতে হয়।

চাঁন্দের গাড়ির নিয়মিত চালক এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পর্যটন এলাকায় তাদের পরিবহন সেবার স্বীকৃতি না পেলেও প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হতে হয়। কলাতলি ট্রাফিক পুলিশ বক্সে দায়িত্বরত ট্রাফিক ইন্সপেক্টর আমিনুর রহমানের সাথে এসব গাড়ি মালিক ও চালকদের মাসিক চুক্তি রয়েছে। দুর্বলতার সুযোগ অনেক সময় অনেক পুলিশও অন্যায় আবদার করে। নিয়মিত ‘বখরা’ তো দিতেই হয়-এগুলো সবচেয়ে বড় সমস্যা।

এ ছাড়া যখন-তখন পুলিশের ফ্রি সার্ভিস পাওয়ার আবদারেও অতিষ্ঠ এই গাড়ির মালিকসহ সংশ্লিষ্টরা। এছাড়াও রাস্তার পাশে পার্কিংয়ের জন্যও কিছু ব্যক্তি দৈনিক ভাড়া আদায় করেন এসব গাড়ি থেকে। এত কিছুর পরও ইঞ্জিনবক্স, বাম্পার, ছাদ- গাড়ির সব জায়গায় বাদুড় ঝোলার মতো করে যাত্রী নিয়ে চাঁন্দের গাড়ি তুফান বেগে ছুটে চলে মেরিন ড্রাইভ সহ জেলার পর্যটন স্পটগুলোর পথে।

পর্যটন শহর থেকে মেরিন ড্রাইভ সড়ক পথে দরিয়ানগর, হিমছড়ি, ইনানী, রয়েল টিউলিপ, পাতুয়ার টেক, টেকনাফ শামলাপুর ও টেকনাফে এবং রামু ও চকরিয়া ডুলাহাজার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্কে যাওয়া আসা করে ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকরা।

এ ব্যাপারে কলাতলি ডলফিন মোড় পুলিশ বক্সে নিয়োজিত ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) আমিনুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পর্যটকবাহি গাড়ীগুলো এই শহরে নতুন নয়। ফুটপাত দখলের বিষয় তার জানা নেই বলে জানান তিনি।

ওডি/এমএ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড