শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার
কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের উদ্যোগে রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালা রেঞ্জের ব্যাংডেবা বিট ও চকরিয়া উপজেলা ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ কর্তৃক আয়োজিত মানুষ- হাতি সংঘাত করণীয় শীর্ষক জনসচেতনতামূলক পৃথক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (২০ নভেম্বর) কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের আওতাধীন চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের উদ্যোগে এ আয়োজন অনুষ্ঠান হয়।
কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের জোয়ারিয়ানালা রেঞ্জাধীন ব্যাংডেবা বিট অফিসে আয়োজিত " মানুষ-হাতি দ্বন্দ্ব নিরসনে ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় করণীয় বিষয়ে " জনসচেতনতা মূলক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডিএফও মো. আনোয়ার হোসেন সরকার বলেন, মানুষ হাতি সংঘাত নিরসন এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে এলাকাবাসীকে এগিয়ে আসতে হবে।
সভায় বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন,জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান কামাল সামশুদ্দিন আহমদ প্রিন্স।
কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক ড.প্রান্তোষ চন্দ্র রায়ের সভাপতিত্বে এ সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, ঈদগড় রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মুস্তাফিজর রহমান। জোয়ারিয়ানালা রেঞ্জ কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ টিটুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন,ব্যাংডেবা বিট কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন, ব্যাংডেবা বিটের স্টাফ, হেডম্যান, ভিলেজার ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ।
এর আগে আরও একটি সভা কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের আওতাধীন চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের উদ্যোগে উত্তর বন বিভাগের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন, কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের ( ডিএফও) মো. আনোয়ার হোসেন সরকার।
ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা শেখ মিজানুর রহমানের শুভেচ্ছা বক্তৃতার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন সহকারী বনসংরক্ষক ডক্টর প্রান্তোষ চন্দ্র রায়।
সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন, নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্টের কর্মকর্তা ডক্টর মো. শফিকুর রহমান। সভায় ফাঁসিয়াখালী বিটের দেড় শতাধিক নারী-পুরুষ,স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বন বিভাগের স্টাফসহ ভিলেজারগণ উপস্থিত ছিলেন।
জনসচেতনতামূলক সভায় সার্বিক সহযোগিতা করেন কক্সবাজার শহর রেঞ্জ কর্মকর্তা ও বনবিভাগের বিশেষ টহল দলের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) একেএম আতা এলাহী।
বন্য হাতি, বন্যপ্রাণী, বনজদ্রব্য, বনভূমি রক্ষার্থে বন বিভাগ সজাগ রয়েছেন। হাতীর নিরাপদ আবাস্থল, তাদের খাদ্য নিরাপত্তা, পশু শিকারীর হাত থেকে হাতী রক্ষা, হাতীর আক্রমণ থেকে জীবন রক্ষা, ফসলের ক্ষতি, বসতবাড়ীর সুরক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সভায় আলোকপাত করা হয়।
বক্তারা আরও বলেন, বনাঞ্চল উজাড় হওয়ায় বুনো হাতির খাবারের উৎস দিন দিন কমছে। এ ছাড়া বনে মানুষের বাস ও আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় হাতির নিজস্ব বিচরণক্ষেত্র কমে গেছে। এ জন্য হাতি খাবার খুঁজতে খুঁজতে পাহাড় ছেড়ে লোকালয়ে নেমে এসে মানুষের বাধার মুখে পড়ে। তারা বাধা পেয়েই তারা ফসলের মাঠ, মানুষের বসতঘরে তাণ্ডব চালায়।
বক্তারা জানায়, এক পর্যায়ে হাতির দল বুনো আচরণ শুরু করে। এই প্রেক্ষাপটে টিকে থাকার লড়াইয়ে নিজেদের জান-মাল রক্ষায় বন্য হাতির ওপর হিংস্র হয়ে ওঠে মানুষ। ফলে মানুষের সাথে হাতির দ্বন্দ্ব লেগেই আছে। এজন্য হাতির হাত থেকে নিজেদের ও হাতিকেও রক্ষার জন্যে সচেতনতা জরুরী। যাতে লোকালয়ে এলেও তাদের ওপর কেউ কোনো অত্যাচার না করে। হাতি যাতে নিরাপদে গভীর জঙ্গলে ফিরে যেতে পারে। এতে হাতিও বেঁচে থাকবে, মানুষও বেঁচে থাকবে।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন সরকার বলেন, বন্যপ্রাণী ও বন্যহাতি সংরক্ষণ আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। নির্বিচারে বন্য প্রাণী হত্যা, ধরা এবং শিকার করা যাবে না। বন্য হাতিদের আঘাত করে নিধন করলে প্রকৃতির ভারসাম্যে বিরাট প্রভাব ফেলবে। সামাজিকভাবে সচেতন হয়ে আমাদের মানুষ ও হাতি সংঘাত নিরসন করে বন্য প্রাণী ও হাতিদের বাঁচাতে এগিয়ে এসে বন সম্পদ রক্ষার্থে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বন্যহাতি লোকালয়ে চলে আসলে তিনি বন বিভাগকে অবগত করার জন্য সকলকে অনুরোধ জানান। তবুও যেন হাতিকে আক্রমণ করা না হয়। হাতি রক্ষায় আমরা বনের ভেতর সুফল প্রকল্পের মাধ্যমে দেশীয় জাতের বৃক্ষ রোপণ করছি। যাতে খাবারের অভাবে হাতি লোকালয়ে না আসে। যাতে হাতি বনের মধ্যে নিরাপদে সেখানে বিচরণ করতে পারে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বন্য হাতির চলাচলের গতি-প্রকৃতি পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। আগে বন্য হাতি একত্রে দল বেঁধে চলাফেরা করত। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, একটি-দুটি হাতি দলছুট হয়ে চলাফেরা করছে। এতে ঝুঁকি বাড়ছে। ফলে বন্য প্রাণীর আবাসস্থল সেই আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। মানুষ ও হাতির সংঘাত নিরসন এবং বনজসম্পদ, বন্যপ্রাণী রক্ষা এবং বনভূমি জবরদখলের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তা ছাড়া সঠিক তথ্য দিয়ে বনবিভাগকে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানান তিনি।
আরও পড়ুন : পাংশায় ফেন্সিডিল ও গাঁজাসহ দুই মাদক কারবারি আটক
সভাপতির বক্তব্যে সহকারী বন সংরক্ষক ড.প্রান্তোষ চন্দ্র রায় বলেন, হাতির জন্য সংরক্ষিত জায়গায় দখল পাহাড় ধংস খাদ্যয়ের অভাব। হাতিসহ বন্যপ্রাণিদের খাদ্য আহরণের এলাকা মানুষের চলাচল বেড়ে যাওয়া ও বসবাস হওয়ায় ফলে হাতিসহ বন্যপ্রাণিরা লোকালয়ে ডুকে যাচ্ছে। তাই নিশ্চিত করতে হবে তাদের খাবার এ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে চাইলে হাতির আগের পরিবেশ ফিরিয়ে দিতে হবে। রামু উপজেলা প্রশাসন বন বিভাগের সাথে এক সাথে কাজ করছে। সরকারি বনভূমি জবরদখলমুক্ত, বন্যপ্রাণী, ও বন্যহাতিদের সংরক্ষণ এবং বনজসম্পদ রক্ষায় সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
ওডি/এসএ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড