সাইদুজ্জামান সাগর, রাণীনগর (নওগাঁ)
ঋতুর পালাবদলের সাথে শুরু হয়েছে শীতের আমেজ। আর শীত এলেই শুরু হয়ে যায় পিঠা-পুলির উৎসব, খেজুর গাছের রস থেকে সুস্বাদু গুড় তৈরি। ইতোমধ্যে রস সংগ্রহ করে লালি গুড় তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন নওগাঁর রাণীনগরের গাছিরা। সূর্যাস্ত যাওয়ার আগে হালকা মৃদু বাতাসে খেজুর গাছে চড়ে গাছিরা রস সংগ্রহের জন্য গাছ পরিস্কারসহ হাঁড়ি বাধার কাজ শুরু করে। আর সারারাত শেষে হাঁড়িতে যে পরিমাণ রস সংগ্রহ হয় সেই রস আবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কড়াইয়ে জ্বাল করে সুস্বাদু লালি ও গুড় তৈরি করছে। তবে পুরোদমে মৌসুম শুরু না হওয়ায় বেচাকেনা তেমন জমে ওঠেনি বলে জানিয়েছে স্থানীয় গাছিরা।
নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় প্রান্তিক জনপদের গ্রামে গ্রামে সকালের শিশিরের সাথে শুরু হয় মৃদু শীতের আমেজ। গ্রাম বাংলার খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে রস থেকে লালি ও গুড় তৈরির পর্ব চলবে প্রায় মাঘ মাস পর্যন্ত। খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের কাজ উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে এ দৃশ্য চোখে পড়ছে।
খেজুর রস ও গুড়ের জন্য রাণীনগর উপজেলার এক সময় খ্যাতি ছিল। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম-বাংলার প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী খেজুরের রস লালি ও গুড়। কিছুদিন আগেও বিভিন্ন এলাকার অধিকাংশ বাড়িতে, খেতের আইলে, ঝোঁপঝাড়ের পাশে ও রাস্তার দুই ধার দিয়ে ছিল অসংখ্য খেজুর গাছ। কোনো পরিচর্চা ছাড়াই অনেকটা প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠতো এসব খেজুর গাছ। প্রতিটি পরিবারের চাহিদা পূরণ করে অতিরিক্ত রস দিয়ে তৈরি করা হতো সুস্বাদু খেজুরের গুড়। গ্রামীণ জনপদে সাধারণ মানুষের সচেতনতার অভাবে পুকুরপাড়ে রাস্তার ধারে পরিবেশবান্ধব খেজুর গাছ এখন আর তেমন চোখে পড়ে না।
রাণীনগর উপজেলা সদরের সিম্বা গ্রামের গাছিয়া আতাউর রহমান, সিদ্দিক ও হাসু আকন্দ জানান, আমরা পেশাগতভাবে প্রতিবছরই এলাকার রাস্তার পাশের খেজুর গাছ এবং মালিকানাধীন গাছের মালিকদের কাছ থেকে ২-৩ মাসের জন্য গাছ ভেদে খেজুরের লালি ও গুড় দিয়ে গাছগুলো থেকে রস সংগ্রহ করে থাকি। চাহিদামত খেজুর গাছ না পাওয়ার কারণে রস কম হওয়ায় আশানুরূপ গুড় তৈরি করতে পারি না। যার কারণে তেমন পোষায় না। তারপরও এ বছর প্রায় শতাধিক গাছ থেকে রস সংগ্রহ করছি।
আরও পড়ুন : ২৬ বছর ধরে স্কুলের নামফলকে জেলার নাম ভুল!
তারা আরও জানান, বর্তমান বাজারে আখের গুড় চিনি যে মূল্যে বেচাকেনা হচ্ছে তার চেয়ে মানসম্পন্ন। খেজুরের গুড়ের দাম এ বছর কিছুটা বেশি হবে- এমনটা আসা করছেন গাছিরা। শীত একটু বেশি পড়তে শুরু করলে আত্মীয়স্বজন আনা-নেওয়া ও পিঠা-পুলির উৎসবে খেজুর গুড়ের দাম ও চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় সে সময় আমাদের লাভ হয়। যদিও যে পরিমাণে শ্রম দিতে হয় সে পরিমাণে আমরা লাভ করতে পারি না, তবুও পেশাগত কারণে চালিয়ে যাচ্ছি এই ব্যবসা।
ওডি/এএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড