সাইদুজ্জামান সাগর, রাণীনগর (নওগাঁ)
খাল-বিল নদী-নালা বেষ্টিত নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় ফসলী জমিতে ইরি-বোরো ও রোপা-আমন মৌসুমে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার, কীটনাশক ব্যবহারের ফলে বিপন্ন হয়ে পড়ছে প্রাকৃতিক পোকা মারার যন্ত্র কোলা ব্যাঙ। এর সাথে চরম হুমকির মুখে পড়ছে কৃষিবান্ধব অন্যান্য প্রাণিও।
এতে খাদ্য সংকটে পড়ছে অনেক জীবজন্তু এবং পাখিরা। জমিতে দফায় দফায় রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার এবং বন-জঙ্গল উজাড় করায় মাটির উর্বরতাসহ জীববৈচিত্র্য রক্ষাকারী ব্যাঙের দিন ফুরিয়ে আসছে। প্রতিনিয়তই নষ্ট হচ্ছে এদের বাসস্থান ও প্রজনন-আশ্রয়। ফলে দিন দিন বিলুপ্তির পথে কোলা ব্যাঙ, কুনো ব্যাঙসহ নানান প্রজাতির কৃষি উপকারী প্রাণি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে রাণীনগর উপজেলার রক্তদহ বিল, বিল মুসুর,বিল চোর সহ সকল খাল দখল মুক্ত, জীববৈচিত্র্য রক্ষা-সংরক্ষণ ও পানি দূষণ রোধে প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা।
বগুড়া আজিজুল হক কলেজের প্রাণিবিজ্ঞানের সাবেক ছাত্র রাণীনগর সদরের সিম্বা গ্রামের গোলাম রাব্বানী বলেন, ব্যাঙ প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় সহায়তা করে এবং মানুষের অনেক উপকারে আসে। ডেঙ্গু, কলেরা, টাইফয়েড, এনথ্রাক্স, ম্যালেরিয়ার মতো অনেক ভয়ংকর রোগবাহী কীটপতঙ্গ খেয়ে এসব রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে মানুষকে রক্ষা করে ব্যাঙ। একটি ব্যাঙ প্রতিদিন তার দেহের অর্ধেক পরিমাণ পোকা খেতে পারে।
গোলাম রাব্বানী বলেন, এ কারণে পরিবেশ রক্ষায় ব্যাঙ সংরক্ষণ অতি জরুরী। এছাড়াও ব্যাঙ ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ, পোকামাকড় খেয়ে ফসলের সুরক্ষা এবং উৎপাদন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। এজন্য ব্যাঙকে ‘প্রাকৃতিক কীটনাশক’হিসেবেও অভিহিত করা হয়। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়া, পানিদূষণের কারণে ব্যাঙ বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে। উপজেলা হরিশপুর গ্রামের কৃষক আহাদ আলী, সিম্বা গ্রামের ওবাইদুল ও জাকির হোসেন জানান, ৪-৫ বছর আগেও এই এলাকার জমিগুলোতে অনেক ব্যাঙ থাকতো। বিশেষ করে নিচু শ্রেণীর জমি এবং খাল-বিলের চারপাশ দিয়ে যে আবাদি জমি আছে সে জমিগুলোতে প্রচুর ব্যাঙ দেখা যেত।
তিনি বলেন, কিন্ত এখন আর জমিতে ব্যাঙই চোখে পড়ে না! আমাদের এলাকায় ইরি- বোরো মৌসুমে জমি চাষ থেকে ধান কাটা-মাড়াই পর্যন্ত সার প্রয়োগ করতে হয় প্রায় তিনবার, কীটনাশকও তিন/চার বার স্প্রে করে দিতে হয়। রোপা-আমন মৌসুমেও একই রকমে প্রয়োগ করতে হয়, সব মিলে বছরে প্রায় অর্থাৎ ধানের দুই মৌসুমে সার ৬বার এবং কীটনাশক প্রায় ৬ থেকে ৭বার প্রয়োগ করতে হয়। বিভিন্ন কোম্পানির এক এক কৃষক এক এক রকমের কীটনাশক ব্যবহার করে। এত কীটনাশকের মধ্যে ব্যাঙ থাকবে কিভাবে?
স্থানীয় কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ধানের প্রধান প্রধান ক্ষতিকারক পোকার আক্রমণে ইরি-বোরো, আউশ এবং আমন মৌসুমে অনেক ফলন কম হয়। যেসব জমিতে কোলা ব্যাঙ থাকে সেসব জমিতে ক্ষতিকর পোকামাকড় খুবই কম হয়। ব্যাঙ কৃষি ফসলের উৎপাদনে বড় রকমের অবধান রাখে। কোলা ব্যাঙ অনেক স্থানে সোনা ব্যাঙ বা ভাউয়া ব্যাঙ নামে পরিচিত। ফসলী জমিতে ব্যাঙের মলমূত্র ও দেহাবশেষ পচে মাটির উর্বরতা শক্তি এবং ফসলের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। শস্যক্ষেতের ঘাসফড়িং, সবুজ পাতাফড়িং, বাদামি গাছফড়িং, পামরি পোকা ও হলুদ মাজরা পোকা খেয়ে উপকার করে। ফলে অধিক পরিমাণে কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না।
রাণীনগর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ব্যাঙ উভচর প্রাণি। এরা ফসলের ক্ষতিকর পোকামাকড় ধরে খায়। এ কারণে ব্যাঙকে পোকা মারার প্রাকৃতিক যন্ত্রও বলা হয়। ব্যাঙ প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় সহায়তা করে এবং মানুষের অনেক উপকারে আসে। ধান ভিত্তিক কৃষির জন্য ব্যাঙ অপরিহার্য। ব্যাঙ রক্ষায় কৃষকই বিরাট অবদান রাখতে পারে বলে তিনি জানান।
ওডি/ এসএ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড