• বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩২ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

পরিত্যক্ত রেললাইনে মানবেতর জীবনযাপন

  সাজ্জাদুল আলম শাওন, দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর)

১৩ নভেম্বর ২০২১, ১৪:৪০
জামালপুর
পরিত্যক্ত রেললাইন (ছবি : অধিকার)

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে পরিত্যক্ত রেললাইনের দু’পাশে মানবেতর জীবনযাপন করছে যমুনার প্রবল ভাঙনের কবলে নিঃস্ব হওয়া অসহায় মানুষ। বছরের পর বছর এ সকল নিম্ন আয়ের মানুষ অস্বাস্থ্যকর, ঝুঁকিপূর্ণ ও নাগরিক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত অবস্থায় বসবাস করছেন।

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও শিক্ষা থেকে বঞ্চিত থাকার কারণে তাদের সন্তানদের অনেকেই খুব অল্প বয়সেই নানা ধরণের পেশায় নিজেদের নিয়োজিত করছে। বসবাসকারীদের পুনর্বাসনের বিষয়ে স্থায়ী কোনো সমাধানের কখনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

প্রতিবছর অল্প বন্যায় প্লাবিত হয় এই রেল লাইন। বন্যার পানিতে ভেসে আসা বিভিন্ন জীবানুর সাথে বসবাস করেন তারা। ফলে প্রতিনিয়ত মৃত্যু ঝুঁকিতে থাকে তাদের। রাষ্ট্রের উচিত এই মানুষগুলোকে আবাসনের ব্যবস্থা করে অন্য কোথাও দ্রুত সরিয়ে নেওয়া।

গত ২০০৮,২০০৯,২০১০ইং সালে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের বীর হলকা ও চাকুরীয়া গ্রাম দুইটি যমুনা নদীতে বিলীন হয়ে যায়। গ্রাম দুটির ৬ শতাধিক পরিবার দেওয়ানগঞ্জ রেল লাইনের ওপর কোন রকমভাবে গাদাগাদি করে বসতি শুরু করে। যাদের অন্যত্র জমি কিনে বসতি করার সাধ্য রয়েছে তারা ইতিমধ্যে চলে গেছে অন্যত্র।

৫ শতাধিক পরিবার এখনো রয়ে গেছে লাইনের ওপর। বিগত ২০১৪ ইং সাল থেকে দেওয়ানগঞ্জ রেল স্টেশন থেকে বাহাদুরাবাদ ফেরী ঘাটে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। পতিত এই রেল লাইনেই এখন যমুনার ভাঙনের শিকার ৫ শতাধিক পরিবারের বসবাসের স্থান। এক সময় যাদের বিস্তীর্ন বসতভিটা আবাদি জমি ছিল আজ তারা নিঃস্ব। জীবন জীবিকা এবং বাসস্থানের তাগিদে আশ্রয় নিয়েছে রেল লাইনের ধারে। পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছে দিনমজুরী, মাছ ধরা, রাজ মিস্ত্রিসহ অন্যান্য।

আছফুল বেগম স্বামী মৃত মুক্তার আলী। বয়স ৬০ ছুঁই ছুঁই। কিন্তু দেখলে বুঝা যায় বয়স সত্তরের কাছাকাছি। দুশ্চিন্তা অনাহার আর অর্থভাবে বয়সের ছাপ পড়েছে চেহারায়। স্বামী মুক্তার আলী পরলোকগত হয়েছেন ত্রিশ বছর পূর্বে। সংসার জুড়ে এক মেয়ে আর দুই ছেলে। মেয়েটি স্বামীর ঘরে। দুই ছেলে আসাদ আলী ও নুরনবী দিন মজুরী করে সংসার চালান। তারা দুইজন পৃথক। যে যার সংসার তার তার। মা আছফুল বেগমের খাদ্যও জোটেনি ছেলেদের সংসারে। তাই এই বয়সেও অন্যের বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে হচ্ছে।

শুধু আছফুল বেগম নয়, রসিয়ার স্বামী ভোলা মিয়া, রাবিয়ার স্বামী নুরুল হক, আমিছার স্বামী বদু মিয়া, সালেহার স্বামী আলিমসহ ৫ শতাধিক পরিবার যমুনার কবল গ্রাসে বসতবাড়ি আবাদি জমি বিলীন হলে আশ্রয় নিয়েছে রেল লাইনের ধারে সরকারি জমিতে।

রেল লাইনে আশ্রিত শাহ আলমের স্ত্রী মর্জিনা, ইউসুফের স্ত্রী বুলি বেগমসহ আরও অনেকে বলেন, এক সময় আমাদের বসতবাড়ি, আবাদি জমি সবই ছিল। সর্বনাশা যমুনা আমাদের সব কেড়ে নিয়ে সর্বশান্ত করেছে। আজ আমরা পথের ভিখারি। এই লাইনের ভিতর গাদাগাদি করে জীবন পার করছি। জানি না আল্লাহ আমাদের কপালে কি লিখে রেখেছে।

রেল লাইনে বসবাসকারী এরশাদ বলেন, বন্যার সময় আমরা সরকারের সাহায্য পাই। কিন্তু তাতে কি আমাদের সংসার চলে? নিজেদের চাহিদা নিজেদেরই পূরণ করতে হয়। অর্থাভাবে ছেলেমেয়েগুলোকে লেখাপড়া করাতে পাচ্ছি না। রেল চলাচল বন্ধ হয়েছে বলে কোন রকম মাথা গোজার ঠায় নিয়েছি। যখন এই লাইনে আবার ট্রেন চলাচল শুরু করবে তখন আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াব। রেললাইনের দুইপাশে বসবাসকারী অনেকের বসতভিটা, আবাদি জমি জেগে উঠেছে।

এ বছর চর জেগে উঠে দু’এক বছর পর আবার নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এই ভাঙা গড়ার খেলায় তাদের জীবন যেন বিপন্ন থেকে আরো বিপর্যস্ত। দুই শতাধিক পরিবারের মধ্যে কয়েকজন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার ঘর পেয়েছেন। কিন্তু তারা সেই উপহার পাওয়া ঘরে না উঠে রেললাইনেই রয়েছেন।

এ ব্যাপারে চুকাইবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মো. সেলিম খান বলেন, রেললাইনসহ ইউনিয়নের বিভিন্ন উঁচু বাধের ওপর কয়েকশত পরিবার বসবাস করছে। তাদের সংখ্যা ৫৬০ জন। তাদের দুর্দশার চিত্র ডিসি মহোদয়, সচিব মহোদয়দের দেখানো হয়েছে। তাতে কোন কাজ হয়নি। তাদের দুর্দশা লাঘবে আমার ইউনিয়নের পক্ষ থেকে যা করার তা যথাস্বাধ্য করে যাচ্ছি। তাতেই তো তাদের দুর্দশা লাঘব হলো না।

দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুন্নাহার শেফা বলেন, চুকাইবাড়ি ইউনিয়নে খুব একটি খাস জমি নেই। অন্যান্য ইউনিয়নে খাস জমি রয়েছে। কিন্তু তারা অন্য ইউনিয়নে যেতে চান না। তার পরেও বিষয়টি আমাদের মাথায় রয়েছে। তাদের পুনর্বাসন কার্যক্রমে ব্যাবস্থা করা হবে।

ওডি/ এফই

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড