• শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

জনবল সংকটে দোহাজারী ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল

  মো. কামরুল ইসলাম মোস্তফা, চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম)

০৯ নভেম্বর ২০২১, ১১:২৩
চট্টগ্রাম
দোহাজারী ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল (ছবি : অধিকার)

চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবল সংকটের কারনে চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় বিপুল সংখ্যক রোগীকে সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় চিকিৎসক ও নার্সদের।

দোহাজারী পৌরসভাসহ চন্দনাইশ-সাতকানিয়া (আংশিক) উপজেলার আট ইউনিয়নের প্রায় তিন লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতের জন্য ১৯৬৫ সালে ১০ শয্যা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় দোহাজারী হাসপাতাল। চাহিদার ওপর ভিত্তি করে পর্যায়ক্রমে ১৯৯০ সালে হাসপাতালটি ৩১ শয্যায় উন্নীত করা হলেও নিয়োগ দেয়া হয়নি প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবল। জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে কাঙ্ক্ষিত সেবা। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক, নার্স, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী না থাকায় হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম প্রায় ভেঙে পড়েছে।

দোহাজারী পৌরসভার পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন ধোপাছড়ি, হাশিমপুর, সাতবাড়িয়া, বৈলতলী ও সাতকানিয়া উপজেলার খাগরিয়া, পুরানগড়, কালিয়াইশ, ধর্মপুর, আমিলাইষের মধ্যবর্তীস্থানে হওয়ায় দোহাজারী ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে রোগীর চাপ বেশি। এসব ইউনিয়ন থেকে আসা রোগীদের চাপ সামলাতে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের হিমশিম পোহাতে হয়। হাসপাতালটি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশে হওয়ায় মহাসড়কে কোন সড়ক দুর্ঘটনা ঘটলে ট্রমা সেন্টার না থাকায় আহত রোগীদেরও ঠাঁই হয় দোহাজারী হাসপাতালে। প্রতিদিন হাসপাতালের বহির্বিভাগে গড়ে ৩শ' জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রতিদিন গড়ে ২৫-৩০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। নতুন ও পুরোনো মিলে প্রতিদিন ৩১ শয্যার বিপরীতে ৭০-৮০ জন রোগী চিকিৎসা নেন। প্রয়োজনের তুলনায় স্বল্প সংখ্যক চিকিৎসক ও নার্স দ্বারা রোগীদের নিয়মিত চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালটিতে ডেন্টাল সার্জনসহ ৭জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তাসহ ৪ জন চিকিৎসক। সার্জিক্যাল বিশেষজ্ঞের পদ থাকলেও দীর্ঘদিন যাবত এই পদটি শূণ্য পড়ে আছে। করোনা কালীন সময়ে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. সাইফুদ্দিন মাহমুদ ও গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. রেহনুমা তারান্নুম সুমি ও মেডিক্যাল অফিসার ডা. মোবারক হোসেনকে চট্টগ্রাম মহানগরীর করোনা বিশেষায়িত হাসপাতালে ডেপুটেশনে নিয়ে যাওয়ার পর প্রায় দেড় বছর পার হলেও অদ্যাবদি তারা দোহাজারী হাসপাতালে যোগদান করেননি। ফলে চিকিৎসক স্বল্পতার কারনে বিপুল সংখ্যক রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতালটির ৪ জন চিকিৎসক।

এছাড়া ৯ জন সিনিয়র স্টাফ নার্সের স্থলে কর্মরত আছেন ৪ জন। সহকারী নার্সের ৪টি পদ থাকলেও দীর্ঘদিন যাবত পদগুলো শূণ্যই পড়ে আছে। ১৬ শয্যার পুরুষ ও ১৫ শয্যার মহিলা ওয়ার্ডে ২জন ওয়ার্ড বয়, ২জন আয়া এবং ২জন সুইপার রয়েছেন। যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। অফিস সহকারীর ২টি পদ থাকলেও ওই পদগুলো শূণ্য পড়ে আছে। জরুরি বিভাগে উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার (সেকমো) ও তার সহকারী, ফার্মাসিস্ট, রেগুলার স্টোর কিপার, কম্পিউটার অপারটর পদ থাকলেও দীর্ঘদিন যাবত সেগুলোও শূণ্যই রয়ে গেছে। অফিস সহকারীর ২টি পদও দীর্ঘদিন যাবত শূণ্য পড়ে আছে। ভারপ্রাপ্ত দিয়েই চালানো হচ্ছে কর্মকাণ্ড।

মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (রেডিওগ্রাফি) না থাকায় হাসপাতালের এক্সরে মেশিনটি দীর্ঘদিন ব্যবহার না করায় নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। ডেন্টাল সার্জন থাকলেও এসিস্ট্যান্ট না থাকায় দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে থাকার পর সম্প্রতি মেরামত করে ব্যবহার উপযোগী করা ডেন্টাল মেশিনটিও ব্যবহার হচ্ছে না। অ্যাম্বুলেন্স চালকের পদ না থাকায় দীর্ঘ তিন বছর তালাবদ্ধ গ্যারেজে থাকার পর গত ২০১৯ সালের জুলাই মাসে পুনরায় চালু হওয়া অ্যাাম্বুলেন্স দিয়ে রোগী আনা নেয়া করে হচ্ছে আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত চালক দিয়ে। দ্রুততম সময়ে পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত সেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছেন স্থানীয় সচেতন মহল।

এব্যাপারে দোহাজারী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আবু তৈয়্যব দৈনিক অধিকারকে বলেন, ৩১ শয্যার হাসপাতাল হলেও গড়ে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকেন ৬০-৭০ জন। অপ্রতুল জনবল নিয়ে বিপুল সংখ্যক রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। জনবল সংকটের বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

এব্যাপারে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে চন্দনাইশ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. শাহীন হোসাইন চৌধুরী দৈনিক অধিকারকে বলেন, দোহাজারী ও পার্শ্ববর্তী ৪-৫ টি ইউনিয়নের রোগীরা দোহাজারী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। এজন্য হাসপাতালটিতে রোগীর চাপ বেশি। ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে যেরকম অবকাঠামো এবং জনবল থাকা প্রয়োজন তা আছে। তবে করোনা সংকটের কারনে কয়েকজন চিকিৎসককে করোনা বিশেষায়িত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ায় চিকিৎসক স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। সাব সেন্টার থেকে একজন সেকমোকে ডেপুটেশনে এনে দোহাজারী হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বেশিরভাগ হাসপাতালেই তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সংকট বিদ্যমান উল্লেখ করে তিনি বলেন আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কয়েকজনকে নিয়োগ প্রদান করে পরিস্থিতি সামাল দিয়ে রোগীদেরকে কাঙ্ক্ষিত সেবা প্রদানে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।

এব্যাপারে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি দৈনিক অধিকারকে বলেন, আমি যোগদান করেছি প্রায় দেড় মাসের মত হলো। শুধু দোহাজারী হাসপাতাল নয় চট্টগ্রামের প্রত্যেকটা হাসপাতালেই তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর জনবল আমাদের খুবই কম। করোনা সংক্রমণ কমে আসলেও করোনা বিশেষায়িত হাসপাতালগুলো এখনো চালু থাকায় ডেপুটেশনে থাকা চিকিৎসকদের তাদের আগের কর্মস্থলে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। দোহাজারী হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সসহ অন্যান্য জনবল স্বল্পতার বিষয়টি বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক মহোদয়কে অবহিত করবো।

এব্যাপারে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীরের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে দৈনিক অধিকারকে তিনি বলেন, জনবল সংকট সব যায়গাতে আছে, যতটুকু সম্ভব সমাধানের চেষ্টা করছি।

করোনা কালীন সময়ে দোহাজারী হাসপাতাল থেকে চট্টগ্রাম মহানগরীর করোনা বিশেষায়িত জেনারেল হাসপাতালে ডেপুটেশনে নিয়ে যাওয়া তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ব্যাপারে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে অনেকগুলো আইসিইউ চালু আছে, গাইনি সাপোর্টাটাও সাংঘাতিক ভালো। আপাতত ওই তিনজন চিকিৎসককে পুনরায় দোহাজারী হাসপাতালে পাঠানো সম্ভব নয়।

এক্স-রে মেশিনের ব্যাপারে তিনি বলেন, ১৯ অক্টোবর দোহাজারী হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে প্রত্যেকটা জিনিস নোট করে নিয়ে এসেছি। এক্স-রে মেশিনটা খুব খারাপ অবস্থায় আছে এটা ঠিক হবে না। এটা মেরামত করতে যেই টাকা লাগবে, সেই টাকা দিয়ে নতুন মেশিন ক্রয় করা যাবে। শীঘ্রই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন : চট্টগ্রামে বিপণিকেন্দ্রে অগ্নিকাণ্ড

ওডি/এফই

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড