• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বিশ্বজুড়ে সুনাম ছড়াচ্ছে শিবগঞ্জের ‘ইলিশ সন্দেশ’

  তারেক রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

২৭ অক্টোবর ২০২১, ১৭:৪৭
ইলিশ সন্দেশ (ছবি : অধিকার)

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহর থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে শিবগঞ্জ উপজেলা অবস্থিত। সেখানে রয়েছে অসংখ্য মিষ্টান্ন ভাণ্ডার। বিশেষ করে শিবগঞ্জ বাজার, মনাকষা বাজার ও কানসাট বাজারের মিষ্টান্ন ভাণ্ডারগুলোর বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি ব্রিটিশ আমল থেকে মানুষের মন জয় করে আসছে। অনেকে এই মিষ্টির জন্য লালায়িত। এ জেলার মানুষ অন্যান্য জেলার আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধুদের বাড়ি বেড়াতে গেলে, বসতে বলতে না বলতেই হাসিমুখে হুট করে ঐতিহ্যবাহী মিষ্টির কথা বলে ফেলে। বিশেষ করে ‘ইলিশ সন্দেশ’ মিষ্টির কথা বললেই জিবে পানি চলে আসে।

আমের পরেই চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার অন্যতম অহঙ্কার শিবগঞ্জের মিষ্টি। শিবগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর মধ্যে মনাকষা বাজার একটি। এটি শিবগঞ্জ বাজারের পশ্চিম দিকে অবস্থিত। মনাকষা বাজারের মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের কারিগরদের তৈরি দমমিষ্টি, ছানা, জিলাপি, মতিচুড়ের লাড্ডু ও স্পঞ্জ গোল্লা প্রধান। এসব মিষ্টির আদি কারিগর আশু সরকার মারা গেছেন। বর্তমানে আশু সরকারের ছোট ভাই অজিত সরকার ও কালু সরকার জীবিত। মূলত তারা তাদের কর্মচারীদের হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। এখান থেকে দমমিষ্টি ও স্পঞ্জ গোল্লা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় হোটেল-রেস্টুরেন্টে সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

এছাড়াও দমমিষ্টি বা প্যাড়ার খুবই বিখ্যাত। এর আদি কারিগর ছিলেন শ্রী সুধীর সাহা। তিনি বহুকাল আগে মারা গেলেও তার ছেলেরা এখনও ঐতিহ্যকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। বর্তমানে তাদের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে এক কেজি থেকে শুরু করে পাঁচ কেজি ওজনের দমমিষ্টি দিয়ে বানানো ‘ইলিশ সন্দেশ।’ এখানকার ইলিশ সন্দেশের সুনাম রয়েছে দেশজুড়ে। এছাড়া ব্যাপক পরিচিত রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও।

মনাকষা আদি মিষ্টি ঘর জিকো স্টোর সুইটস-এর মালিক শ্রী অজিত কুমার জানান, বাবা বিভূসী ভূশন সরকার প্রায় ৫০ বছর মিষ্টির ব্যবসা করে গেছেন। তখন থেকেই ইলিশ সন্দেশের প্রচার। তার সময় দেশে-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে যেত আমারদের ইলিশ ও মিষ্টি। যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া বড়ভাই অশোক কুমার প্রায় ৪০ বছর মিষ্টির ব্যবসা করেছেন। তিনিও সুনাম ধরে রেখেছিলেন। এখন আমি দোকান করছি। আমার কাছে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মিষ্টির অর্ডার আসে। বিশেষ করে দমমিষ্টির অর্ডার বেশি আসে। এছাড়া যারা দেশের বাইরে যায় তারা এই মিষ্টি সঙ্গে করে নিয়ে যান।

যেভাবে তৈরি হয় ‘ইলিশ সন্দেশ’

মূলত দুধ থেকেই তৈরি হয় সন্দেশ। দুধ-পাতিতে জ্বাল দিয়ে প্রচুর পরিমাণে ফোটাতে হয়। এরপর দুধ শুকিয়ে লাল হলে তৈরি হয় দুধ মেওয়া। সে দুধ মেওয়াতে তরকারিতে খাবার বিভিন্ন মশলা, এলাচ, দারচিনি, চিনি দিয়ে বানানো হয় সন্দেশ অর্থাৎ দমমিষ্টি। এসব মিষ্টি সাধারণত সাড়ে তিনশ থেকে চারশ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়।

শ্রী অজিত কুমার আরও জানান, ইট বানানোর মত ফর্মা দিয়ে তৈরি করতে হয় সন্দেশ। এক কেজি থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি পর্যন্ত বানানো যায় ইলিশ সন্দেশ। যা দুই হাজার থেকে শুরু করে চারশত টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়। শিবগঞ্জ বাজারের মিষ্টান্ন ভাণ্ডারগুলোতে সুস্বাদু ও আকারে বড় ধরনের মিষ্টি তৈরি হয়। যার কথা শুনলে অনেকে অবাক হতে পারেন।

আরও পড়ুন : ক্ষুুধার যন্ত্রণায় ২২ দিনের শিশু বিক্রি!

সংশ্লিষ্ট এলাকার শিক্ষিত প্রবীণ ব্যক্তিদের মুখে শোনা যায়, ১৯৭২ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে চাঁপাই নবাবগঞ্জের সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে ৩৫ সের ওজনের ১টি চমচম উপহার দেওয়া হয়েছিল। সেই বছরই মন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাতকে ২৫ সের ওজনের ১টি, ১৯৮২ সালে শিবগঞ্জ উপজেলার কোটবাজারে প্রেসিডেন্ট এইচ এম এরশাদকেও ২৮ কেজি ওজনের ১টি করে আদি চমচম সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে উপহার দেওয়া হয়েছিল। মূলত তখন থেকেই ছড়িয়ে পড়ে শিবগঞ্জের বিভিন্ন মিষ্টির সুনাম। যা এখনও ধরে রেখেছেন দোকানিরা।

ওডি/এএম

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড