সাজ্জাদুল আলম শাওন, জামালপুর
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে তিন হাজার টাকায় ৩ থেকে ৪ বছর বয়সে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী মুক্তিযোদ্ধার সনদপত্র দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। “৭১ এর সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ” নামের এক সংগঠন এ সনদপত্র বিতরণ করছে।
সনদপত্রে সংগঠনটির কার্যালয়ের ঠিকানা, মোবাইল নম্বর ও সরকারী নিবন্ধন আছে কিনা তা উল্লেখ নেই। এ কারণে সংগঠনটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে স্থানীয়দের মাঝে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার সানন্দবাড়ী চরমাদার গ্রামের কয়েক জনের কাছে সহযোগী মুক্তিযোদ্ধার সনদ পাওয়া যায়। সাথে ওই সংগঠনের দেওয়া সহযোগী মুক্তিযোদ্ধার আইডিও পাওয়া যায়। সনদপত্র ও আইডি দেওয়ার বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে জনপ্রতি তিন হাজার টাকা। সহযোগী মুক্তিযোদ্ধার সনদ প্রদানকারী সংস্থা “৭১এর সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ”।
সনদপত্রে সংগঠনটির কার্যালয়ের কোনো ঠিকানা, মোবাইল নম্বর ও সরকার কর্তৃক নিবন্ধিত কিনা তাও উল্লেখ নেই। সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা সনদে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের নাম, পদবী, স্বাক্ষরসহ সীল মহর দেওয়া রয়েছে। সনদের উপরে লেখা রয়েছে ঘরে ঘরে জাগ্রত করতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।
সানন্দবাড়ী চরমাদার গ্রামের মৃত ছমেদ আলীর ছেলে আবু সামা। তার সনদের ক্রমিক নং ৬৬৩০। তার সনদটির ইস্যুর তারিখ ১৪ জুলাই ২০২১। জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী তার জন্ম ১৬ জুলাই ১৯৬৮।
একই গ্রামের মৃত ইয়ার আলীর স্ত্রী মোছা. জবেদার সনদটি একই দিন ইস্যু করা হয়। তার সনদের ক্রমিক নম্বর ৬৬২৭। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার জন্ম তারিখ ৮ নভেম্বর ১৯৬৮। দুই জনেরই মুক্তিযুদ্ধের সময় বয়স ছিলো ৩ থেকে ৪ বছর। ৩ থেকে ৪ বছর বয়সে কি করে সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হয় সে বিষয়ে প্রশ্ন দেখা দিলে সংগঠনটির বৈধতা নিয়ে স্থানীয়দের মনে নানা কথা ওঠে।
সহযোগী মুক্তিযোদ্ধার সনদধারী আবু সামা জানান, এ বিষয়ে তিনি বেশি কিছু জানেন না। স্থানীয় ঘেগা পাড়ার হোসেন আলী ৩হাজার টাকার বিনিময়ে ওই সনদ ও আইডি কার্ড দিয়েছেন। তার মতো বিভিন্ন গ্রামের অনেকেই সহযোগী মুক্তিযোদ্ধার সনদ ও আইডি কার্ড নিয়েছেন।
টাকা নিয়ে আইডি কার্ড দেওয়ার সময় হোসেন আলী বলেছিলেন, এই সার্টিফিকেট ধারীদের সরকার থেকে মাসিক ভাতা দেওয়া হবে। আমি সংগঠন এবং সংগঠনের কাউকে চিনি না।
সংগঠনটির স্থানীয় প্রতিনিধি হোসেন আলী বলেন, ৭১এর সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ সম্পর্কে আমি কিছু জানিনা। স্থানীয় হরিপুর গ্রামের কাশেম আমাকে সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সদস্য করে সার্টিফিটেক দেন। শুনেছি সংগঠনটির হেড অফিস ঢাকায়। হেড অফিসে যাওয়ার জন্যে আমি অনেকবার কাশেমকে বলেছি। কিন্তু আমাকে কাশেম আমাকে হেড অফিসে নিয়ে যায়নি।
ঠিকানা সংগ্রহ করে হেড অফিসে গেলে অফিসের লোকজন আমাকে জানিয়েছেন, সরকারের সাথে তাদের আলোচনা চলছে। খুব শিগগিরই আমাদের কাজ হবে।
সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সরদার গোলাম মোস্তফা মুঠোফোনে বলেন, আমার সংগঠন সরকার কর্তৃক নিবন্ধিত। যার নং ২৪৯/১৭। এ সংগঠনের সদস্য হতে বা সার্টিফিকেট নিতে টাকা লাগে ১২৭১ টাকা। আমি স্থানীয় প্রতিনিধিদের ও ১৭শত থেকে ১৮শত টাকা নিতে বলেছি। চার বছরের কেউ এ সংগঠনের সদস্য হতে পারবে না বা সার্টিফিকেট পাবেনা। এটা স্থানীয় প্রতিনিধিদের ভুলের কারণে হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার মো. খাইরুল ইসলাম বলেন, সহযোগী মুক্তিযোদ্ধার কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। সংগঠনটি একটি ভূঁইফোঁড় সংগঠন। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পৃথক পৃথক বৈঠকের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কথা বলবেন।
আরও পড়ুন : বোয়ালখালীতে বাই সাইকেল পেলেন ৬৬ জন গ্রাম পুলিশ
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম আব্দুল্লাহ বিন রশিদ বলেন, বিষয়টি আমি জানিনা। বিষয়টি জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ওডি/এসএ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড