• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

সুতার অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে হুমকির মুখে ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্প

  মনিরুজ্জামা ও নাসিম আজাদ, নরসিংদী

২০ অক্টোবর ২০২১, ১৫:৩২
নরসিংদী
(ছবি : অধিকার)

অস্বাভাবিকভাবে সুতার ক্রমাগত মুল্য বৃদ্ধির কারণে তাঁত শিল্পের জন্য বিখ্যাত প্রাচ্যের ম্যাচেষ্টার খ্যাত বাবুর হাট ও মাধবদীসহ জেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শত শত কাপড় উৎপাদনের কারখানা বন্ধ হওয়ার উপক্রম। ইতিমধ্যেই অনেকে কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। আবার অনেকেই তাদের কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে দিয়েছে।

এরফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছে হাজার হাজার কাপড় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক পরিবার। কাপড় উৎপাদন করতে গিয়ে সূতার মূল্য বৃদ্ধি, চড়া মূল্যের বিদ্যুৎ বিল, ব্যাংক লোন, শ্রমিকদের মজুরীসহ অন্যান্য খরচ বৃদ্ধি পেলেও আশানুরূপ কাপড়ের মূল্য নেই। ফলে ক্রমাগত লোকসান গুনতে গিয়ে একসময় দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছেন অনেক মিল মালিকরা। এর কারণ জানতে চাওয়া হলে অধিকাংশ তাঁত মালিকরা বলেন সুতার দাম দিনদিন বৃদ্ধি পেলেও বাড়ছে না কাপড়ের দাম। সূতা মালিকদের সিন্ডিকেটের কারণে গজ প্রতি দুই থেকে তিন টাকা করে লোকসান গুনে বিক্রি করতে হচ্ছে উৎপাদিত কাপড়। সুতার দাম অনুযায়ী কাপড়ের দাম পাচ্ছেন না কারখানা মালিকগণ।

নরসিংদী সদর উপজেলার সাটির পাড়া, চৌয়ালা, মাধবদী থানার শেখের চর, ছোট মাধবদী, বিরামপুর, নুরালাপুর, বিবিরকান্দী, শিমুলেরকান্দি, দরীকান্দি, ছোট রামচন্দ্রী, আলগী, পাইকারচর, বালুসাইর, আটপাইকা, কোতোয়ালীরচ, কাশিপুরসহ বেশির ভাগ এলাকার কারাখানাই এখন বন্ধ হয়ে গেছে। আবার অনেক কারখানা প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে। এতে করে দিন দিন বেকার হয়ে পড়ছে এসব কারখানায় কর্মরত শতশত শ্রমিক কর্মচারী।

এ বিষয় নিয়ে মাধবদী থানার ছোট রামচন্দ্রদীর কাপড়ের কারখানার মালিক জামাল উদ্দীন ও মজিবরসহ আরও কয়েকজন মিল মালিকের সাথে কথা বললে তারা জানায়, সুতার দাম দিন দিন বৃদ্ধি করা হলেও বাড়ছে না কাপড়ের দাম। প্রতি গজে দুই টাকা থেকে তিন টাকা করে লোকসানে বিক্রি করতে হচ্ছে উৎপাদিত কাপড়। তাছাড়া সুতার দাম অনুযায়ী আমরা কাপড়ের দাম পাচ্ছি না সেই জন্য কারখানা বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছি। আমরা লোকসান দিয়ে আর কতদিন কারখানা চালাবো? আমাদের অনেকেই পুঁজি শেষ করে ব্যাংক লোনের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করছি। কিন্তু মহামারী করোনা ভাইরাস, সুতা ব্যবসায়ীদের অসহযোগিতা ও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সুতার অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে আমরা আজ দেওলিয়া হয়ে গেছি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমাদের আবেদন, তিনি যেন আমাদের এই ব্যবসায়ীদের দিকে একটু নজর দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাদের দিকে একটু নজর দেন তাহলে আমরা সকল ব্যবসায়ীরা আবার ঘুড়ে দাঁড়াতে পারবো। নতুবা আমাদের পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করতে হবে।

এদিকে এফবিসিসিআই পরিচালক ও নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট আলী হোসেন শিশিরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি দৈনিক অধিকারকে জানান, বাংলাদেশের কতিপয় অসাধু সুতা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে সুতা মজুত রেখে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে। ফলে দিন দিন সুতার দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে করে কাপড় উৎপাদনকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো উচ্চ মুল্যে সুতা ক্রয় করে কাপড় উৎপাদন করে লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছে। আফ্রিকাতে তুলার দাম বৃদ্ধির সাথে সাথে বাংলাদেশের সুতা ব্যবসায়ীরা সুতার দাম বাড়িয়ে দেয়। অথচ বর্ধিত মুল্যে ক্রয়কৃত সুতা বাংলাদেশে আমদানি করে সুতা তৈরি করে বাজারজাত করতে কমপক্ষে তিনমাস সময় লাগে। এখানে আমাদের প্রস্তাবনা তাঁতশিল্প রক্ষায় সুতার মোড়কের গায়ে উৎপাদনের তারিখ ও সর্বোচ্চ খুচরা মুল্য লিখে দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, তাহলে সুতা ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে অস্বাভাবিকভাবে দাম বৃদ্ধি করতে পারবে না। বাজার স্থিতিশীল থাকবে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি তাঁতশিল্প বেঁচে থাকবে। এছাড়া নরসিংদী, মাধবদী ও নারায়ণগঞ্জের টান বাজারের কতিপয় অসাধু সুতা ব্যবসায়ী অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় বিভিন্ন স্পিনিং মিলের সুতা কিনে তাদের গোডাউনে মজুদ করে, পরবর্তীতে সিন্ডিকেট করে চড়া দামে বিক্রি করে।

ইতোমধ্যেই নরসিংদী জেলার প্রায় ৭০ ভাগ তাঁত কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সুতার অস্বাভাবিক মুল্য বৃদ্ধি ও সুতার অবৈধ মজুমদারদের কারসাজির কারণে তাঁত কারখানা মালিকরা আজ দিশেহারা।

নরসিংদীসহ সারা বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি তাঁতশিল্প রক্ষায় ও রফতানি বাজারের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সুতার অস্বাভাবিক মুল্য বৃদ্ধি রোধকল্পে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, শিল্প ও বানিজ্য মন্ত্রনালয়সহ সংশ্লিষ্টদের ইতোমধ্যেই অবগত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

ওডি/এফই

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড