• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৪ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

রোপা আমন চাষে পোকার আক্রমণ, শঙ্কায় কৃষক

  সাজ্জাদুল আলম শাওন, দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর)

২০ অক্টোবর ২০২১, ১৫:৩৪
সবুজ ধানখেত (ছবি : অধিকার)

ঝলমলে সোনারাঙা রোদ পড়েছে সবুজ ধানখেতে। যতদূর চোখ যায় দেখা মেলে শরতের বাতাসে দুলছে রোপা আমন ধান। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ফসলের মাঠে বেড়েছে পোকার উপদ্রব। জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় চলতি মৌসুমের রোপা আমন ধানের খেতে মাজরা পোকা ও পাতা মোড়ানো পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। খেতে কীটনাশক ব্যবহারেও এসব পোকা দমন করা যাচ্ছে না। ফলে ফসল নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন সাধারণ কৃষক।

সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। অনেকেই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে সমাধানের চেষ্টা করেছেন। সেদিক থেকে কৃষকরা কিছুটা উপকৃত হলেও কমছে না ক্ষতির পরিমাণ।

গত সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বন্যায় ব্যাপক রোপা আমনসহ অনেক ফসল পানিতে তলিয়ে যায়। এরপর বন্যা কেটে গেলে কৃষকরা পুণরায় ধারদেনা করে অধিক মূল্যে আমন চারা সংগ্রহ করে আবারও রোপণ করেন। রোপণের কিছুদিন পর থেকেই পোকার আক্রমণ দেখা দেয়। এ পরিস্থিতিতে উপজেলার দেওয়ানগঞ্জ সদর, চিকাজানী, চুকাইবাড়ী, বাহাদুরাবাদ, ডাংধরা, পাররামরামপুর ইউনিয়নে রোপা আমন ধানের ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন চাষিরা।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় এ বছর মোট ৮ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের চাষ হয়েছে। এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ২০ হাজার ৪৩১ মেট্রিক টন (চাল)। ২০২০ সালে চাষ হয়েছিল ৮ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে। সে বছর বন্যায় কৃষকরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল। উৎপাদন হয়েছিল ২০ হাজার ৩৩৬.৬ মেট্রিক টন (চাল)।

পোকার হাত থেকে ফসল রক্ষায় বাজারে পাওয়া কীটনাশক জমিতে ছিটিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। আমনের ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষক। তাদের আশঙ্কা, সময় মতো পোকা দমন করতে না পারলে এবার রোপা আমন উৎপাদন ব্যাহত হবে।

সরেজমিনে ঘুরে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের চাষি কামাল হোসেন জানান, পোকা দমনে বিভিন্ন কীটনাশক ব্যবহার করছি। আবার বৃষ্টি না হওয়ায় স্যালো মেশিন দিয়ে খেতে পানিও দিচ্ছি। এতে অতিরিক্ত খরচ গুণতে হচ্ছে। ফলন ভালো না হলে বড় ধরনের লোকসান গুণতে হবে আমাদের।

আমন আবাদকারী চাষি আব্দুর রহিম বলেন, আর কয়েকদিন পরে গাছে ধান আসার কথা। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে পোকার আক্রমণ। ধানগাছ প্রথমে হলুদ ও পরে শুকিয়ে বাদামি রঙ ধারণ করছে। কীটনাশক ছিটিয়েও কোনো ফল পাচ্ছে না কৃষকরা। ফসলের মাঠজুড়ে এখন শুধু পোকা আর পোকা।

দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাস বলেন, কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কর্মকর্তারা পোকার আক্রমণ থেকে রোপা আমন ধান রক্ষা করতে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছেন। আমরা নিয়মিত খোঁজখবর রাখছি। যাতে পোকার আক্রমণে ফসল নষ্ট না হয়। কৃষকরা একটু সচেতন হলেই মাজরা পোকা ও পাতা মোড়ানো রোগ দমন সম্ভব। বন্যা পরবর্তী সময় ফসলের কিছু সমস্যা দেখা দেয়। সেগুলো তেমন কোনো সমস্যা না। ভালোভাবে পরিচর্যা করলেই এই রোগ কাটিয়ে উঠা সম্ভব। মাঠপর্যায়ে সকল উপ-সহকারীকে বলা হয়েছে, যেকোনো কৃষককে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার জন্য। তবুও কৃষককে আমার নম্বর দেওয়া হয়েছে, যেন তাদের সমস্যার কথা আমায় সরাসরি জানাতে পারে।

আরও পড়ুন : পটুয়াখালীতে কলেজছাত্রকে জোর করে বিয়ে, তরুণীর বিরুদ্ধে মামলা

তিনি কৃষকদের উদ্দেশে বলেন, বন্যা পরবর্তীতে সালফার এবং পটাশের শূণ্যতা দেখা দেয়। সে সময় ফসলকে সতেজকরণে প্রতি বিঘায় ৫ কেজি পটাশ সার ছিটিয়ে দিতে হবে। এ অনুপাতে অপেক্ষাকৃত বেশি জমিতেও সে অনুযায়ী সার দিতে হবে অথবা ১০ লিটার পানিতে ৬০ গ্রাম পটাশ এবং ৬০ গ্রাম জিপসাম মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে স্প্রে করতে হবে। তবুও সমস্যার সমাধান না হলে কৃষককে অফিসে এসে পরামর্শ নিয়ে যাওয়ার কথা বলছি। আমরা মাঠপর্যায়ে সর্বোচ্চ সেবা দিতে প্রস্তুত।

ওডি/এএম

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড