• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

কক্সবাজারের খুদে বিজ্ঞানীর ড্রোন তৈরি

  শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার

১৭ অক্টোবর ২০২১, ১২:৩৯
কক্সবাজার
আব্দুল মান্নান জামশেদ (ছবি : অধিকার)

প্রতিবার উড্ডয়নে ১০ মিনিট আকাশে থাকতে পারে ‘জয় বাংলা’ ড্রোন। ড্রোনটি কৃষিকাজে বিশেষ করে কীটনাশক ও সার প্রয়োগসহ কৃষি খাতে ব্যাপক ভুমিকা রাখতে পারে। এছাড়াও গহীণ বনে কারও অবস্থান শনাক্ত করাসহ বহুমুখী কাজে ব্যবহার করা যাবে এই ড্রোন।

কক্সবাজারের রামু উপজেলার রশিদ নগর ইউনিয়নের পানিরছড়ার ‘খুদে বিজ্ঞানী’ আব্দুল মান্নান জামশেদ তৈরি করেছেন জয় বাংলা’ নামের ড্রোন। যা অধিকারে নেয় কক্সবাজারের আকাশ।

মান্নানের তৈরি জয় বাংলা ড্রোনের ওজন ১২০০ গ্রাম। এটি অতিরিক্ত আরও ৮০০ গ্রাম ভর নিয়ে কয়েকশ ফুট উচ্চতায় উড়তে পারে। প্রথম ১০ সেকেন্ডেই ড্রোনটি ১০০ ফুট ওপরে উঠতে সক্ষম।

আবদুল মান্নান জামশেদ রামু উপজেলার রশিদ নগর ইউনিয়নের পানির ছড়া মুফিজ মিয়ার গ্যারেজ এলাকার আমির হোসেনের ছেলে। তিনি কক্সবাজার পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের চতুর্থ সেমিস্টারের ছাত্র। ছোটবেলা থেকে মান্নানের স্বপ্ন বিজ্ঞানী হওয়ার। সে স্বপ্নকে বুকে লালন করে কিছু কাজ শুরু করেন। পড়ালেখার সুবাদে তৈরি করেন নানা জিনিসপত্র।

করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাবে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ দেশে বন্ধ করে দেয়া হয় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সময় তিনি নিজের চেষ্টাতেই বানিয়েছেন ড্রোন। নাম দিয়েছেন ‘জয় বাংলা’। এরপর এলাকায় পড়ে যায় সাড়া। তার ড্রোন তৈরি ও ওড়ানোর খবর দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে গ্রাম থেকে গ্রামে। এলাকার লোকজনও তার প্রতিভায় ব্যাপক খুশি।

মান্নানের সহপাঠী রিয়াজ উদ্দিন বলেন, মান্নান ছোটবেলা থেকেই খুব মেধাবী। ইউটিউব দেখে সে বিভিন্ন ধরণের নিত্য নতুন যন্ত্র তৈরি করত। এজন্য এলাকায় তাকে খুদে বিজ্ঞানী নামে ডাকে। সে একটি ড্রোন বানিয়ে আকাশে উড়িয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। যা রামু নয় শুধু, কক্সবাজারবাসীর জন্যও গর্বের বিষয়।

মান্নানের প্রতিবেশী মো. সাইদুজ্জামান বলেন, মান্নান সংগ্রাম করে পড়াশোনা করছে। তার বাবা একজন চা বিক্রেতা। সুযোগ হলেই অবসর সময়ে বাবাকে সাহায্য করেন মান্নান। তার প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে আজ ড্রোন তৈরি করে পুরো জেলায় সাড়া ফেলেছে।

ক্ষুদে বিজ্ঞানী আবদুল মান্নান জামশেদ জানান, তার কাজে বাবা-মা সবসময় সাহস আর উৎসাহ দিয়েছেন। এমন সফলতার পেছনেও মূল ভূমিকা তার বাবা-মায়ের।

তিনি আরও বলেন, ড্রোন তৈরির প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা খুব সহজ ছিল না। অনলাইন থেকে কিছু যন্ত্রপাতি কিনেছি। এটি তৈরিতে খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। সময় লেগেছে প্রায় দুই বছর।

বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা হলে এর খরচ একেবারে কমে আসবে বলেও জানান মান্নান।

তিনি বলেন, জয় বাংলা ড্রোনটি কৃষিখাতে অবদান রাখতে পারে। বিশেষ করে কীটনাশক ও সার প্রয়োগ, গহীণ বনে কারও অবস্থান শনাক্ত করাসহ বহুমুখী কাজে ব্যবহার করা যাবে ড্রানটি।

জয় বাংলা ড্রোনের ওজন ১২০০ গ্রাম। এটি অতিরিক্ত আরও ৮০০ গ্রাম ভর নিয়ে কয়েকশ ফুট উচ্চতায় উড়তে পারে। প্রথম ১০ সেকেন্ডেই ড্রোনটি ১০০ ফুট উপরে উঠতে সক্ষম। প্রতিবার উড্ডয়নে ১০ মিনিট আকাশে থাকতে পারে এটি।

জামশেদ বলেন, আগেও ছোট ছোট ড্রোন বানিয়েছি। প্রতিটি বিজ্ঞান মেলায় গিয়ে অংশ নিয়েছি। এ সম্পর্কে নতুন কিছু সৃষ্টির খোঁজ খবর রেখেছি। লক্ষ্যে পৌঁছাতে যত বাধাই আসুক, আমি তা পেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব।

মান্নানের স্বপ্ন একদিন মহাকাশ বিজ্ঞানী হবেন। কাজ করে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবেন।

মান্নানের বাবা আমির হোসেন বলেন- খুব কষ্ট করে, অনেক স্বপ্ন নিয়ে ছেলেকে পড়াশোনা করাচ্ছি। নিজে চা বিক্রি করে যা আয় হয়, তা দিয়ে চলে সংসার। ড্রোন তৈরিতে ২০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। তারপরও চাই, ও ভালো করুক, নিজের স্বপ্ন পূরণ করুক।

মান্নানের বাবার দাবি, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আবদুল মান্নান জামশেদ এমন আরও অনেক নতুন কিছু তৈরি করতে পারবে। তাই তার স্বপ্ন পূরণে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন।

ওডি/এফই

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড