শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার
বাকিতে ডাব না দেওয়ায় কক্সবাজারে মো. শরীফ নামে এক ডাব ব্যবসায়ীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) আমিনুর রহমানের বিরুদ্ধে।
বুধবার (১৩ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শহরের কলাতলি ডলফিন মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, কক্সবাজার শহরের কলাতলি ডলফিন মোড়ে ডায়নামিক বক্স কিংডমের সামনে পূর্বের পাওনা পরিশোধ না করে আবারও নতুন করে বাকি চাওয়ার পর ওই ব্যবসায়ী বাকি না দেওয়ায় তাকে মারধর করে গুরুতর আহত করা হয়। ঘটনার পর আহত মো. শরীফ টাকার অভাবে হাসপাতালে ভর্তি হতে না পারলেও স্থানীয় ফার্মেসি থেকে কিছু ওষুধ কিনে সেবন করেছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া তার শরীরে লাঠির আঘাতের চিহ্নও ভেসে রয়েছে।
আহত শরীফ (৩৮) কক্সবাজার সদরের মধ্যম কলাতলি এলাকার বাসিন্দা লাল মিয়ার ছেলে।
ক্ষুদ্র ডাব ব্যবসায়ী মো. শরীফের মতো অনেকেই জানান, কলাতলি ডলফিন মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ বক্সে দায়িত্বরত কক্সবাজার শহর যানবাহন নিয়ন্ত্রণ শাখার ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মো. আমিনুর রহমান ফুটপাতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় ডাব, ডিম, চা, সিগারেটসহ নানা পণ্য ক্রয় করে টাকা বাকি রাখেন। এমনকি অনেক সময় ডাব খেয়ে টাকাও দেন না। পাওনা টাকা চাইলে নানা টালবাহানা করেন তিনি।
বুধবার (১৩ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে টিআই মো. আমিনুর রহমান বাকিতে ডাবের জন্য কলাতলি ট্রাফিক পুলিশ বক্সের পাশের দোকানি রায়হানকে শরীফের কাছে পাঠান। কিন্তু তিনি ডাব বিক্রির আগের পাওনাগুলো পরিশোধ না করে, বা বিনা পয়সায় ডাব দিতে অস্বীকৃতি জানান। ওই সময় ডাব না নিয়ে বক্সের ফিরে যান রায়হান। পরে বক্সে নিয়োজিত কনস্টেবল দিদার ও রহিম নামে দুই যুবককে দিয়ে শরীফকে ডেকে পাঠান টিআই আমিন।
এরপর ডাব বিক্রেতা শরীফ ট্রাফিক পুলিশ বক্সে গেলে সেখানে কোনো কথা ছাড়াই বুট জুতা দিয়ে লাথিসহ লাঠি দিয়ে তাকে বেধড়ক মারধর করা হয়। ওই সময় টিআই আমিন নির্দয়ভাবে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে পেটালেও কেউ তাকে রক্ষায় এগিয়ে আসেনি বলেও অভিযোগ উঠেছে।
ওই ঘটনার পর আহত শরীফ টাকার অভাবে হাসপাতালে ভর্তি হতে পারেননি। তবে পার্শ্ববর্তী ফার্মেসি থেকে সামান্য ওষুধ কিনে শরীরের ব্যথা নিবারণের চেষ্টা করেছেন বলে জানা গেছে।
শরীফ জানান, ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের পিটুলি খেয়ে তার শরীরে ব্যথাসহ হাতের আঙ্গুল ও পা ফুলে গেছে। ব্যথায় শরীর না চললেও ডাব বিক্রি বন্ধ করেনি তিনি। কারণ ডাব বিক্রি না করলে বাসায় সন্তান-সন্ততি না খেয়ে থাকবে।
এ দিকে, কলাতলির অপর ডাব বিক্রেতা নেছারুল ইসলাম। তার বাড়ি মধ্যম কলাতলি। দীর্ঘদিন ধরে পর্যটকদের কাছে ডাব বিক্রি করে আসছেন তিনি। প্রায়সময় টিআই আমিন তার কাছ থেকে বিনা টাকায় ডাব খেয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। এ সময় টাকা চাইলে ধমক দেওয়াসহ খারাপ আচরণ করেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, আমি ডিগ্রি পাশ। পরিস্থিতির কারণে আমি আজ ডাব বিক্রেতা। সংসার চালাতে আমি ডাব বিক্রি করছি, এতে অন্যায় কি?
এসব অভিযোগের ব্যাপারে অভিযুক্ত টিআই আমিনুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, দুপুর বেলায় আমি একটা ডাবের জন্য একজনকে পাঠিয়েছিলাম। তবে তিনি বাকিতে ডাব না দিয়ে আমার লোককে ফেরত পাঠান। আমি তাকে ডেকে এনে শুধু বকাঝকা করেছি। এ সময় মারধরের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি দেখছি।
এ বিষয়ে কক্সবাজার যানবাহন নিয়ন্ত্রণ শাখার (শহর) ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) তুহিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, টিআই আমিন আমার সিনিয়র, তাই তার বিচার করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এ সময় বিষয়টি কক্সবাজার সহকারী পুলিশ সুপারকে অবহিত করার পরামর্শ দেন তিনি।
আরও পড়ুন : সাতক্ষীরায় সড়কে ঝরল দুই বন্ধুর প্রাণ, মৃত্যুশয্যায় অপরজন
এ দিকে, বিষয়টিতে জেলা পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামানের বক্তব্য নেওয়ার জন্য তাকে কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে বিষয়টি পুলিশ সুপারের হোয়াটসঅ্যাপে ক্ষুধে বার্তার মাধ্যমে অবহিত করা হয়েছে।
অন্যদিকে, বুধবার দিবাগত রাত ১টার দিকে অভিযুক্ত টিআই আমিনুর রহমানসহ ট্রাফিক পুলিশের একটি দল আহত ডাব ব্যবসায়ীর বাড়িতে যান। সেখানে ডাব ব্যবসায়ীর সাথে এ ধরনের আচরণে অনুশোচনা করেন টিআই আমিন। একই সাথে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না বলেও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
ওডি/নিলয়
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড