সম্পত্তির জন্য বাবা-মাসহ ভাইকে গলাকেটে হত্যা!

পারিবারিক বিরোধের জেরে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় বাবা-মাসহ একই পরিবারের তিনজনকে গলাকেটে হত্যা করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৪ অক্টোবর) ভোররাতে উপজেলার ৩ নম্বর জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যম সোনাপাহাড় গ্রামের মোস্তফা সওদাগর বাড়িতে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।

নিহতরা হলেন- সোনাপাহাড় গ্রামের মোস্তফা সওদাগর বাড়ির মোস্তফা (৫৬), তার স্ত্রী জোছনে আরা (৪৫) ও মেঝ ছেলে আহমদ হোসেন (২৫)।

এ ঘটনায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে নিহত দম্পতির বড় ছেলে সাদেক হোসেন সাদ্দাম (৩০) ও তার স্ত্রী আইনুন নাহারকে হেফাজতে নিয়েছে জোরারগঞ্জ থানা পুলিশ।

এ দিকে, বৃহস্পতিবার বিকালে ৪টার দিকে পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাদেক হোসেন সাদ্দাম মা-বাবা ও ভাইকে গলাকেটে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। পরে পুলিশ বাড়ির পেছন থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করে।

নিহত মোস্তফার ছোট ছেলে আলতাফ হোসেন জানান, ভোররাতে বড় ভাই সাদেক হোসেন আমাকে ফোন দিয়ে বলেন, বাড়িতে ডাকাত এসেছিল, মা-বাবা ও মেঝো ভাইকে জবাই করে ফেলেছে। তুই তাড়াতাড়ি আয় তাদের হাসপাতালে নিতে হবে।

পরে আমি বাড়িতে এসে দেখি বাবা-মা আর মেঝো ভাইয়ের নিথর দেহ রক্তাক্ত অবস্থায় ঘরের ভেতর পড়ে আছে। রাতে বাড়িতে বাবা-মা, বড় ভাই ও তার স্ত্রী আইনুন নাহার এবং তাদের ৪ বছর বয়সী একটি ছেলে ও মেঝ ভাই আহমদ হোসেন ছিল। আমি চাকরির সুবাদে বারইয়ারহাট মাছের আড়তে থাকি। আমার বাবা কিছু জায়গাজমি মেঝো ভাই আহমদকে দিয়ে দিয়েছিল। ওটা নিয়ে বাবা-মায়ের সাথে বড় ভাইয়ের প্রায়ই ঝগড়া হতো।

এ দিকে, নিহত মোস্তফার বাড়ির ভাড়াটিয়া জাকারিয়া বলেন, মধ্যরাতে ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার দিচ্ছিল নিহতের বড় ছেলে সাদেক হোসেন। তখন আমরা ঘরের সামনে গিয়ে দেখি দরজা বন্ধ, ভেতর থেকে তালা লাগানো। পরে সাদেক তার বাবা-মার রুম থেকে চাবি নিয়ে তালা খুলে। তাদের ঘরে ঢুকে আমরা কোনো ডাকাত আসার চিহ্ন বা কাউকে দেখতে পাইনি।

এ ব্যাপারে জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মনির আহমদ ভাসানী বলেন, মোস্তফার পাশের বাড়ির হাসেম আমাকে ফোন করে জানান মোস্তফা নির্মমভাবে খুন হয়েছেন। তখন রাত ৪টা। ফজরের নামাজ পড়ে মুসল্লিদের নিয়ে মোস্তফার বাড়িতে গিয়ে দেখি, বাড়ির উঠানে বড় ছেলে সাদেক হোসেন শুয়ে আছে। শরীর-হাত-পায়ে রক্ত। সে রাতে ঘটনার পর বাড়ির ছাদে উঠে ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার করে আশপাশের লোকজন জড়ো করেন। বাড়ির চারপাশে সীমানা দেওয়াল দেওয়া আর গেইট ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। তার মায়ের গলার সোনার চেইনটিও রয়ে গেছে। ডাকাতির কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।

তিনি বলেন, মোস্তফার তিন ছেলে এক মেয়ে। দুই ছেলে ও মেয়ে বিবাহিত। সম্প্রতি দুই ছেলেকে বাদ দিয়ে বাড়ির জমিটি ছোট ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রীর নামে রেজিস্ট্রি করে দেওয়ায় বড় ছেলে সাদেকের সাথে প্রায়সময় ঝগড়া হতো। সাদেক চট্টগ্রামের ক্লিফটন গ্রুপে চাকরি করে। সে প্রতি বৃহস্পতিবার বাড়িতে আসে। গত বুধবার বাড়িতে চলে আসায় মানুষের সন্দেহ বেড়ে যায়। শুক্রবার (১৫ অক্টোবর) মোস্তফার মেজ ছেলে আহমদ হোসেনের বিয়ের ফর্দ হওয়ার কথা ছিল। পারিবারিক জমি সংক্রান্ত বিরোধে এই হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে বলে ধারণা।

লাশ উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করে জোরারগঞ্জ থানার ওসি নুর হোসেন মামুন দৈনিক অধিকারকে বলেন, বাবা-মা ও ভাইকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেছেন বড় ছেলে সাদেক হোসেন। পাশাপাশি হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিটিও উদ্ধার করা হয়েছে। পারিবারিক সম্পত্তির বিরোধে এমন হত্যাকাণ্ড হয়েছে।

আরও পড়ুন : তেঁতুলিয়ায় নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন, চেয়ারম্যান প্রার্থীকে জরিমানা

এ ব্যাপারে মিরসরাই সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার লাবিব আবদুল্লাহ বলেন, এটি একটি হত্যাকাণ্ড। এখানে ডাকাতির কোনো ঘটনা ঘটেনি। ঘরের ভেতর থাকা মোবাইল, আসবাবপত্র সব পরিপাটি অবস্থায় আছে। নিহত মোস্তফা, তার স্ত্রী জোছনে আরা বেগম ও মেঝো ছেলে আহমদ হোসেনকে গলাকেটে হত্যা করা হয়েছে। তাদের শরীরে একাধিক জখমের আঘাত আছে। ধারালো ছোরা দিয়ে এই হত্যাকাণ্ড করা হয়।

তিনি বলেন, এ ঘটনায় নিহতের ছেলে সাদেক হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। আর তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আইনুন নাহারকে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে আসা পিবিআই ও সিআইডি বিশেষজ্ঞ টিম ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করেছে। পাশাপাশি লাশ ময়না তদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়ে। তবে বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত এ ঘটনায় থানায় কোনো মামলা হয়নি বলেও জানিয়েছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

ওডি/নিলয়