• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

উলিপুরে সরকারি বরাদ্দের চাল বিতরণে অনিয়ম

  হুমায়ুন কবির সূর্য, কুড়িগ্রাম

১২ অক্টোবর ২০২১, ১১:৪৮
ছবি : সংগৃহীত

কুড়িগ্রামের উলিপুরে দূর্গাপূজা উপলক্ষে একশত বাইশটি মন্দিরে সরকারি বরাদ্দের একষট্টি মেট্রিক টন চালের বিপরীতে অর্থ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে একটি সিন্ডিকেট চক্রের বিরুদ্ধে। সরকারিভাবে চল্লিশ টাকা কেজি দরে চাল ক্রয় করা হলেও ওই সিন্ডিকেট চক্র উপজেলার মন্দির কর্তৃপক্ষদের কাছে কেজি প্রতি ছাব্বিশ টাকা দরে অর্থ প্রদান করেন। এতে প্রায় আট লাখ চুয়ান্ন হাজার টাকা সিন্ডিকেট চক্র হাতিয়ে নিয়েছে। এ নিয়ে উপজেলা জুড়ে মন্দির কমিটিগুলোর মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

জানা গেছে, উলিপুর উপজেলায় এবার ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ১২২টি মন্দিরে দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতিবছরের মত এবছরও সরকারিভাবে দূর্গা মন্দির কমিটিগুলোকে সহায়তায় করা হয়েছে। এ উপলক্ষে মন্দির প্রতি পাঁচশত কেজি করে মোট ৬১ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী প্রতিটি মন্দিরের অনুকূলে পাঁচশত কেজি চালের ডিও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিস থেকে প্রদান করা হয়।

উপজেলার কয়েকটি মন্দির কমিটির সভাপতি ও সম্পাদক জানান, গত ৭ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে মন্দিরের অনুকূলে থাকা পাঁচশত কেজি করে চালের ডিওগুলো মন্দির কর্তৃপক্ষের হাতে উপজেলা পরিষদের অডিটোরিয়াম সভাকক্ষে এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং খাদ্য নিয়ন্ত্রকের উপস্থিতিতে বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। এরপর খাদ্য গুদাম কর্মকর্তার যোগসাজশে ডিওগুলোতে মন্দির কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষর নেওয়ার পর প্রতিটি মন্দির কমিটিকে চাল ক্রয়কারী সিন্ডিকেট চক্র ১৩ হাজার টাকা করে প্রদান করেন। সিন্ডিকেট চক্রটি সরকারি মূল্যের চল্লিশ টাকা কেজির চাল ছাব্বিশ টাকা মূল্য নির্ধারণ করে তা বিতরণ করায় কেজি প্রতি চৌদ্দ টাকা করে হাতিয়ে নেন। সে হিসাবে প্রতি এক হাজার কেজিতে চৌদ্দ হাজার টাকা। ৬১ হাজার কেজিতে ৮ লাখ ৫৪ হাজার টাকা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা ও সিন্ডিকেট চক্র হাতিয়ে নেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

উপজেলার পুরির পটল চৌরাস্তা সার্বজনীন দূর্গা মন্দিরের সভাপতি কমল চন্দ্র সরকার, হরিবাসর সার্বজনীন দূর্গা মন্দিরের সভাপতি সুশিল চন্দ্র বর্মন এবং পূর্ব নাওডাঙা ও রাজারাম ক্ষেত্রী পুরাতন দূর্গা মন্দিরের সভাপতি হরেন্দ্র নাথ রায়সহ অনেকে জানান, সরকারি বরাদ্দের চালের পরিবর্তে তের হাজার টাকা করে পেয়েছি। ৭ অক্টোবরের বৈঠকে আমরা সবাই উপস্থিত ছিলাম। বৈঠকে প্রথমে পাঁচশত কেজি চালের বিপরীতে চৌদ্দ হাজার পাঁচশত টাকা করে দেয়ার কথা বলা হলেও পরে তের হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়।

তাদের অভিযোগ, উপজেলার হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা ও সিন্ডিকেট চক্রের সদস্যরা ওই দিনের বৈঠকে জানান, সরকারি চালের মান খুব খারাপ, চালগুলো লালচে, এগুলোর বাজার মূল্য কম হবে, তাই পাঁচশত কেজি চালের পরিবর্তে তের হাজার টাকা করে সকল মন্দিরগুলোকে দেয়া হচ্ছে।

তারা আরও বলেন, আমরা পার্শ্ববর্তী উপজেলা গুলোতে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, সেখানে মন্দির প্রতি সরকারি বরাদ্দের চালের পরিবর্তে পনের থেকে ষোল হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে। তারা আক্ষেপ করে বলেন, বাজারে চালের মূল্য অনেক বেশি কিন্তু আমাদের তের হাজার টাকা করে নিতে বাধ্য করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে চাল ক্রয়কারীদের মধ্যে একজন রেজাউল করিম রাজা জানান, চারজন ব্যবসায়ী মিলে ৬১ মেট্রিক টন চাল ক্রয় করা হয়েছে। চালের ক্রয় মূল্য অন্য ব্যবসায়ীরা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তবে আমি ছাব্বিশ হাজার সাতশত টাকা করে টন প্রতি দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বাজারে চালের মূল্য একটু কম।

উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি সৌমেন্দ্র প্রসাদ পান্ডে গবা বলেন, আমরা মন্দির কর্তৃপক্ষের সভাপতি ও সম্পাদকদের হাতে পাঁচশত কেজি চালের ডিও তুলে দিয়েছি। চাল নিয়ে কেউ বিক্রি করে দিলে সে বিষয়টি আমাদের জানা নেই। তবে সবাই চাল বিক্রি করেনি, কোন কোন মন্দির হয়তো চাল পূজার কাজে ব্যবহার করবেন।

উলিপুর খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি এলএসডি) শাহীনুর রহমান বলেন, বিষয়টি ব্যবসায়ী ও হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা জানেন। তাদের সাথে কথা বললে বুঝতে পারবেন। এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারব না।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আলাউদ্দিন বসুনিয়া জানান, পূজা উপলক্ষে ডিওর বিপরীতে হাইব্রিড মোটা ভাল মানের চাল সরবরাহ করা হয়েছে। চালগুলো যে ব্যবসায়ীরা ক্রয় করেছেন, তারা নানান কথা বলে চালের দাম কম দিয়ে থাকতে পারেন। সেখানে তো আমাদের করার কিছু নেই।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মাহবুবুর রহমান বলেন, পূজা উপলক্ষে সরকারি বরাদ্দের চাল বিক্রয়ের কোনো নিয়ম নেই। এর পরেও চাল বিক্রি হয়ে থাকলে বিষয়টি আমার জানা নেই। আর যে চাল সরবরাহ করা হয়েছে তা উন্নত মানের ছিল। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।

ওডি/এমএ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড