রাফিকুর রহমান লালু, রাজশাহী
নব-নির্মিত অ্যাকাডেমিক প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে চার বার। কিন্তু তারপরও কারা প্রশিক্ষণ অ্যাকাডেমি নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি নির্ধারিত সময়ে।
প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৮ সালের জুন মাসে। তখন ঠিক মতো কাজ শুরু হয়েছিল। এখন অবকাঠামো নির্মাণের পর আবার থেমে গেছে কাজ। কাজ শেষ করতে আরও ২০ কোটি টাকা চেয়েছেন প্রকল্প পরিচালক। প্রস্তাবটি অনুমোদন না হওয়ায় এখন কাজ পুরোপুরিই বন্ধ।
রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে দেশের একমাত্র এই কারা প্রশিক্ষণ অ্যাকাডেমি গড়ে তোলা হচ্ছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ২০১৫ সালে কারা প্রশিক্ষণ অ্যাকাডেমি নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয় ৭৩ কোটি ৪২ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। চতুর্থবারের মতো প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। এরই মধ্যে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন অন্তত ছয়জন কর্মকর্তা।
বর্তমানে পিডি হিসেবে আছেন ড. সঞ্জয় চক্রবর্তী। তিনি বলছেন, প্রকল্পের অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শেষ। কাজের অগ্রগতি ৯৫ শতাংশ। ইতোমধ্যে খরচ হয়েছে ৪৩ কোটি টাকা। হাতে থাকা ৩০ কোটি টাকায় আসবাবপত্র ও এসি কেনা এবং সাজসজ্জার কাজ হবে না। দরকার অন্তত ৫০ কোটি টাকা। তাই আরও অন্তত ২০ কোটি টাকা বরাদ্দের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সেটি দু’একদিনের মধ্যে পরিকল্পনা কমিশনে যাবে। অর্থ বরাদ্দ পেলে নতুন উদ্যোমে কাজ শুরু হবে।
রাজশাহীতে কারা প্রশিক্ষণ অ্যাকাডেমির কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৯৫ সালে। এরপর থেকেই কারা প্রশিক্ষণ অ্যাকাডেমিতে জেল সুপারদের ছয় মাস, ডেপুটি জেলাদের তিন মাস মেয়াদী, এবং কারারক্ষী ও নারী কারারক্ষীদের তিন মাস মেয়াদী মৌলিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কারা অধিদফতরে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত এসব প্রশিক্ষণার্থীদের কারাগারের সার্বিক নিরাপত্তা বিধান, সুশৃঙ্খল আচরণ, বন্দিদের প্রতি মানবিক আচরণ, সৌজন্যবোধ ও প্রয়োজনীয় বিধি-বিধান সম্পর্কে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এই একাডেমিটি ২০১৪ সালে সরকারি অনুমোদন লাভ করে। তারপর একনেক অর্থ বরাদ্দ দেয়। কিন্তু কাজ শেষ না হওয়ায় এখনও অ্যাকাডেমির কার্যক্রম চলছে কারাগারের ভেতরেই পুরনো একতলা একটি ভবনে।
রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের মোট জমির পরিমাণ ৬৫ একর। এর মধ্যে ১৮ একরের উপর রয়েছে কারাগার। বাকি ৪৬ একর জমির মধ্যে ৩৭ একরের ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে কারা প্রশিক্ষণ অ্যাকাডেমি। কাজ শুরুর পর কারাগারের পাশেই জেগে ওঠা পদ্মার চরে অস্থায়ী স্থাপনা হিসেবে ফুটবল ও ভলিবল মাঠ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। কাটা হয় অনেকগুলো গাছও। এসবের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে পরিবেশবাদী কয়েকটি সংগঠন। তখন নির্মাণ কাজ থমকে যায়। ওই সময় দেশের অন্য কোন জায়গায় কারা প্রশিক্ষণ অ্যাকাডেমি নির্মাণেরও আলোচনা শুরু হয়।
এরপর ২০১৯ সালের ২০ আগস্ট অনুষ্ঠিত প্রকল্পের স্টিয়ারিং কমিটির দ্বিতীয় সভায় এই প্রকল্পটিকে ‘কারা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ হিসেবে নামকরণেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে শেষ পর্যন্ত সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি। একাডেমি হচ্ছে রাজশাহীতেই। রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-১ কাজটি বাস্তবায়ন করছে। বর্তমানে গণপূর্ত বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান দায়িত্বে রয়েছেন।
তিনি জানান, একাধিকবার স্থান পরিবর্তন, কারাগারের পুরাতন স্থাপনা ও গাছ কাটায় জটিলতা, নকশা প্রণয়নে বিলম্ব হওয়াসহ নানা কারণে কাজই শুরু হয়েছে দেরিতে। তারপর এখন একটু ব্যয়ও বেড়েছে। নতুন করে প্রাক্কলন করে প্রকল্প পরিচালককে দেওয়া হয়েছে। তিনি অর্থ বরাদ্দের জন্য প্রস্তাবও দিয়েছেন। অর্থ পেলেই দ্রুত কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে জানান তিনি । তবে দায়িত্বে থাকা গণপূর্ত বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলীর কাজের ভেতরে কোন জটিলতা আছে কিনা সেটি খতিয়ে দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট মহলের প্রতি আবেদন করেছেন কারা কর্তৃপক্ষ সহ সুশীল সমাজ।
ওডি/এমএ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড