রাকিব হোসেন আপ্র, লক্ষ্মীপুর
আসন্ন নির্বাচনে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারে এই আশঙ্কায় পরিকল্পিতভাবে লক্ষ্মীপুরের সেই শিক্ষক ও জামায়াত নেতা মঞ্জুরুল কবিরকে ফাঁসিয়ে দিয়েছেন লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার বামনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা তাফাজ্জাল হোসেন। একটি ভিডিয়োকে পুঁজি করে শিক্ষক ও ছাত্রসমাজকে বিতর্কিত করার মাধ্যমে তিনি এই হীন চক্রান্ত হাসিল করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও স্থানীয়দের এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান তাফাজ্জল। অনুসন্ধানে এমনটাই উঠে এসেছে।
জানা গেছে, গত ১৮ সেপ্টেম্বর লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলা র হামছাদী কাজির দিঘীরপাড় আলিম মাদরাসায় শৃঙ্খলা ও নৈতিক শিক্ষায় শাস্তিমূলকভাবে কয়েকজন ছাত্রের বখাটে স্টাইলের চুল কেটে দেন শিক্ষক মঞ্জুরুল কবির। এ ঘটনার ১ মিনিট ১০ সেকেন্ডের একটি ভিডিয়ো গত শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। প্রায় ২০ দিন আগের এই ঘটনায় শুক্রবার রাতেই ওই শিক্ষককে আটক করে রায়পুর থানা পুলিশ। পরে মাদরাসার এক অভিভাবকের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে শিশু আইনের ৭০ ধারায় শিক্ষক মঞ্জুরুল কবিরকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
এদিকে চুল কেটে দেওয়া একাধিক শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা বলেন, বখাটে স্টাইলের চুল প্রকাশ্যে কেটে দিয়ে শিক্ষক মঞ্জরুল কবির কোনো অপরাধ করেননি। এটা অপরাধ হলে ঘটনার পর ২০দিন পর্যন্ত আমরা চুপচাপ থাকতাম না। স্যারকে ষড়যন্ত্রমূলক ফাঁসানো হয়েছে।
একজন অভিভাবক বলেন, স্যারকে ছাড়িয়ে আনার জন্য আমরা গত শুক্রবার রাতেই থানায় গিয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ আমাদের ভুল বুঝিয়ে অভিযোগ নিয়েছে। যেকোনো একজন অভিভাবক লিখিতভাবে চুল কাটার ঘটনা বর্ণনা করলে স্যারকে ছেড়ে দেয়া হবে বলে পুলিশ অভিযোগ লিখে নেয়।
তবে এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও রায়পুর থানার উপ-পরিদর্শক শেখ কামাল বলেন, শাহাদাত হোসেন নামে এক শিক্ষার্থীর মা বাদী শিশু আইনের ৭০ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে এ মামলায় গত শনিবার আদালতের মাধ্যমে শিক্ষক মঞ্জুরুল কবিরকে কারাগারে পাঠানো হয়।
হামছাদী কাজীর দীঘিরপাড় আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা বালাকাত উল্লাহ বলেন, শিক্ষক মঞ্জুরুল কবির এই মাদরাসার শৃঙ্খলা ও নৈতিক কমিটির সদস্য। তিনি শৃঙ্খলা ও নৈতিকতা শিক্ষার অংশ হিসেবে এবং অভিভাবকদের অনুরোধে ছাত্রদের বখাটে স্টাইলের চুল কেটে দেন। তবে যিনি ভিডিয়োটি করেছেন এবং ২০দিন পর সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দিয়েছেন সেই শিক্ষকের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি। তাছাড়া ওই শিক্ষকের সাথে কথা বলার সুযোগও দেননি অধ্যক্ষ বালাকাত উল্যাহ।
এদিকে ২০১৩ সালের শিশু আইনের ৭০ ধারায় উল্লেখ আছে, ‘কোনো ব্যক্তির হেফাজতে থাকা কোনো শিশুকে আঘাত বা উৎপীড়নের কারণে যদি ওই শিশুর দৃষ্টিশক্তি বা শ্রবণশক্তি নষ্ট হয় অথবা শরীরের কোনো অঙ্গ বা ইন্দ্রিয়ের ক্ষতি হয় কিংবা মানসিক বিকৃতি ঘটে তাহলে তিনি অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবে।’ এই আইন অনুযায়ী শিক্ষক মঞ্জুরুল কবির কোনো অপরাধ করেননি। ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি তাফাজ্জল হোসেন এ চক্রান্ত করেছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
কিন্তু বামনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি তাফাজ্জল হোসেন এ অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ঘটনা ঘটেছে মাদরাসায়। ভিডিয়ো করেছেন শরীফ নামে ওই মাদরাসার এক শিক্ষক। ভিডিয়োটি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর সাংবাদিকরা আমাকে প্রশ্ন করলে আমি বিষয়টি জানতে পারি। আর ওই শিক্ষককে আটকের পর রায়পুর থানা পুলিশের মাধ্যমে আমি বিষয়টি জানতে পারি। তাছাড়া শিক্ষক মঞ্জুরুল কবির জামায়াতের মতো একটি বিতর্কিত দলের নেতা হিসেবে আমার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হবে, এটা আমি কখনই মনে করি না।
অন্যদিকে প্রকাশ্যে ছাত্রের চুল কাটা এবং এ জন্য শিক্ষককে গ্রেফতারের ঘটনায় গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে তোলপাড় চলছে। আলোচনার বিষয়বস্তু- প্রকাশ্যে ছাত্রদের চুল কাটা শিক্ষকের অপরাধ, নতুবা তুচ্ছ এ ঘটনায় শিক্ষককে জেলে পাঠানো হলো কেন? এর আগে সিরাজগঞ্জে ছাত্রদের চুল কাটার ঘটনায় জড়িত শিক্ষিকার সাথে তো এমনটি ঘটেনি।
আরও পড়ুন : চায়ের কেতলিতে আটকে আছে শিপুলের স্বপ্ন!
করোনায় প্রায় দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই টিকটক ও লাইকির মতো ক্ষতিকর মোবাইলে অ্যাপে আসক্ত হয়ে বখাটে স্টাইলে চুল রাখছে। এক্ষেত্রে প্রকাশ্যে বখাটে স্টাইলের চুল কেটে ছাত্রকে শাসন করায় শিক্ষককে জেলে যেতে হলো- এটা এ জাতির জন্য কলঙ্কময় একটি অধ্যায় ছাড়া আর কিছুই নয় বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
ওডি/এএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড