• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

পানিফল চাষে কৃষিতে নতুন সম্ভাবনা

  সাজ্জাদুল আলম শাওন, দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর)

১১ অক্টোবর ২০২১, ১৩:২৭
ছবি : দৈনিক অধিকার

বহুমাত্রিক সঙ্কটের মধ্যেও এগিয়ে চলেছে দেশে বেড়েই চলছে 'ফল' উৎপাদন। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় প্রতিটি উপজেলায় চাষাবাদ করা হচ্ছে বিভিন্ন ফল জাতীয় ফসল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন দেশে সামান্য পরিমাণ জমিও যেন খালি পড়ে না থাকে। তার নির্দেশ ক্রমেই বাড়ছে উৎপাদন। যেসব উপজেলার জমিগুলোতে সারাবছর পানি জমে থাকে সেই সব জমিতে নতুন সম্ভাবনাময় ফসল হচ্ছে পানি ফল চাষ। পানিফল প্রায় ৩ হাজার বছর আগে থেকেই চীন দেশে চাষ হয়ে আসছে বলে ধারণা করা হয়। বিগত কয়েক দশক থেকে আমাদের দেশেও পানি ফলের চাষ হচ্ছে।

তেমনি জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার পতিত জমিতে পানিফল চাষ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় পানি ফল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন অনেকে। এ উপজেলায় পানিফল উৎপাদনে সফলতা পাওয়ায় অন্যান্য উপজেলার চাষিরা অনুপ্রাণিত হয়ে চাষাবাদ পদ্ধতি শিখে তাদের পতিত জমিতে চাষ শুরু করছেন। এই ফল বাংলাদেশে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু হয় জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে। এটি একটি বর্ষজীবী জলজ উদ্ভিদ। এটি ৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। পানির নীচে মাটিতে এর শিকড় থাকে এবং পানির উপর পাতা গুলি ভাসতে থাকে। বিভিন্ন পতিত ডোবা, খাল, পুকুরের অল্প পানিতেই পানিফল চাষ করা যায়। প্রতিবছর বোরো ধান কাটার পর খাল-বিল-ডোবায় জমে থাকা পানিতে প্রথমে এই ফলের লতা রোপণ করা হয়। তিন থেকে সাড়ে তিন মাসের মধ্যে ফল আসে গাছে। ফলটি দেখতে যেমন ব্যাতিক্রমি, খেতেও সুস্বাদু। বর্তমানে জেলার চাহিদা পূরণ করে দেশের বিভিন্ন হাট-বাজারে চলে যাচ্ছে। এই ফল কৃষি খাতে নতুন এক সম্ভাবনার দোয়ার খুলে দিবে বলে মনে করেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা।

স্থানীয় নাম ‘সিঙ্গারা’, অনেকই চিনেন ‘পানিফল’ হিসেবে। তাছাড়াও এ ফলের নানা জায়গায় নানা নাম রয়েছে। ওয়াটার কালট্রপ, বাফেলো নাট, ডেভিল পড ইত্যাদি। আবার ইংরাজিতে একে ওয়াটার চেস্টনাটও বলা হয়। এরও বৈজ্ঞানিক নাম ‘ট্রাপা নাটানস’। এটি কেবল হাঁটু বা কোমর পানিতেই জন্মায়। দেখতে খানিকটা বাজারে তৈরি সিঙ্গারা মতো হওয়ায় অনেকেই সিঙ্গারা বলেও চিনেন।

পানিফল চাষে সার-কীটনাশকের তেমন প্রয়োজন হয় না। ফলে চাষিদের খরচ কম।পতিত জলাশয়ে চারা রোপণ করে শুধুমাত্র ভাল পরিচর্যায় এর ভালো ফলন পাওয়া যায়। প্রতি বিঘা জমি চাষে তিন-চার হাজার টাকা খরচ হয়। আর ফল স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে ২৫-৩০ হাজার টাকা। সুতরাং লাভ প্রায় ৭ গুণ। যার কারণে এই চাষে উৎসাহ পাচ্ছে চাষীরা।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ইং সালে বন্যার কারণে পানিফল চাষে ক্ষতি হয়। সেসময় কৃষকদের চারা অনেকটাই নষ্ট হয়ে পড়ে। তবুও সে বছর ৬০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়। এবার বন্যার প্রখর কম থাকায় পানিফল চাষে আগ্রহ পাচ্ছেন এই উপজেলার চাষীরা। তাই ২০২১ ইং সালে ১০০ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়।

পানি ফলচাষি বালুগ্রামের বাসিন্দা সাইম মিয়া ও নরুল হক জানান, এই ফল চাষে সার কীটনাশকের তেমন প্রয়োজন হয় না। অন্যান্য ফসলের থেকে এর পরিচির্যাও কম। অল্পপুঁজি ব্যয় করে লাভ বেশী। খেতেও সুস্বাদু। এবছর আমি ৩ একর জমিতে পানিফল চাষ করেছি। খরচ হয়েছে বিঘা প্রতি চার হাজার টাকা। আশা করি এবার প্রতি বিঘাতে ফল বিক্রি করতে পারবো ২০ হাজার থেকে ২২ হাজার টাকা। অন্যান্য ফসল এই পানিতে চাষ করা অসম্ভব হত। তাই এই পতিত জমিতে পানিফল চাষ করেছি। অন্যান্য ফসলের থেকে লাভও দ্বিগুণ পাচ্ছি। এই ফল চাষে বর্তমানে আমাদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে।

উপজেলার রেলওয়ে স্টেশনের পাশের বিলের পানিফল চাষি আসলাম হোসেন বলেন, আমাদের এলাকা অন্যান্য এলাকার থেকে বেশ নিচু। সামান্য পানিতেই তলিয়ে যায় আমাদের ফসলি জমি। অন্যান্য ফসল চাষ করলে এই পানির কারণে সকল ফসল নষ্ট হয়ে পরে। তাই বিকল্প হিসাবে এই ফল চাষ করছি। এ ফল চাষে পুঁজিও তুলনামূলক কম লাগে। স্থানীয় বাজারে এর চাহিদা ব্যাপক হওয়ায় পানিফল চাষে আগ্রহী হচ্ছি আমরা।

দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার কৃষিবিদ আবুল হাসান রাজু বলেন, বর্তমানে পানিফল কৃষিতে নতুন এক সম্ভাবনাময় ফসল। আমাদের কৃষি বিভাগ সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে পানিফল চাষের বিস্তার ঘটাতে। যেকোন পতিত খাল, পুকুর, ডোবা অথবা জলাশয়ে চাষ করা সম্ভব। তুলনামূলক এর উৎপাদন খরচ কম। এবছর উপজেলায় ৩ হাজার মেট্রিকটন পানিফলের উৎপাদন সম্ভাবনা রয়েছে। ভৌগোলিকভাবে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বেশিরভাগ এলাকা প্রতি বছর দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। ফসল চাষের অনুপোযুক্ত এসব জলাবদ্ধ জমিতে পানিফল চাষ করে সফল হয়েছেন অনেক চাষি।

ডোবা আর বদ্ধ জলাশয়ে পানিফল চাষ করে সাবলম্বী হয়ে উঠছে এই অঞ্চলের অনেক হতদরিদ্র মানুষ। অল্পপুঁজি ব্যয় করে পানিফল চাষের মাধ্যমে দু’পয়সা বাড়তি আয় করে অভাবের সংসারে সচ্ছলতা এনেছে প্রায় শতাধিক পরিবার। পানিফল যেমন শরীরের জন্য বেশ উপকারি। খেতেও সুস্বাদু। এই ফল শরীরের পুষ্টির অভাব দূর করে, ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে করতে সাহায্য করে, রক্ত আমাশা বন্ধ করে, দৈহিক বিশেষ শক্তিবর্ধক, নারীদের মাজুরতার আধিক্যজনিত সমস্যা ঠিক করতে খুবই উপকারি।

ওডি/এমএ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড