মো. নুরুল করিম আরমান, লামা
বান্দরবানের লামা উপজেলার লুলাইং মৌজা হেডম্যান সিংপাশ মুরুং এর বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইয়াংচিং মুরুং, রিংরিং মুরুং, টিনওয়াই মুরুং, নিডই মুরুং, ইয়াংরিং মুরুং, নেভর মুরুং, পাইয়া মুরুং, সালাউদ্দিন প্রকাশ স্বাধীন মুরুং ও মো. আবু বক্কর ছিদ্দিক বাদী হয়ে বান্দরবান বোমাং সার্কেল এবং জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ করেছেন। অভিযুক্ত সিংপাশ মুরুংকে হেডম্যান পদ থেকে অপসারণের দাবি তুলে এ অভিযোগে স্বেচ্ছায় সাক্ষর করেন মৌজার ১৫ পাড়ার আরও ১৩৭ অধিবাসী। অভিযোগের তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানান তারা।
স্থানীয় অধিবাসীরা লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন- হেডম্যান সিংপাশ একজন অযোগ্য, অদক্ষ, দুর্নীতিবাজ, জুলুমবাজ ঘুষখোর মাতাল, অত্যাচারী প্রকৃতির লোক হয়। মৌজার সাবেক হেডম্যানকে ভুল বুঝিয়ে ও লোভ লালসা দেখিয়ে নিজের নামে হেডম্যান পদ লিখে নেয় সিংপাশ মুরুং।
এরপর সিংপাশ মুরুং নিজের হিংসাতকে মনোভাব নিয়ে মৌজায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম শুরু করেন। এ হেডম্যানের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি সহ বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে আদালতে একাধিক মামলাও রয়েছে বলে অভিযোগ উল্লেখ করা হয়।
অভিযোগে আরও প্রকাশ করে, লুলাইং বাজারের নামে আশপাশের মানুষের জায়গা জবর দখল করে দোকান প্লট বানিয়ে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা নিয়ে বিক্রি করে চলেছেন সিংপাশ মুরুং। শুধু তাই নয়, অধিবাসীরা বংশ পরস্পরায় মৌজার অধিকাংশ খাস জায়গায় বসতি স্থাপন করে খাদ্যশস্য উৎপাদন করে পরিবার পরিজন নিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছিলেন।
কিন্তু সিংপাশ হেডম্যান পদ পাওয়ার পর থেকে মৌজার খাস জায়গা সংক্রান্ত বন্দোবস্তি নির্মিতে বাৎসরিক দখলের রিপোর্ট দিবে মর্মে প্রত্যেক পরিবারের কাছ থেকে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা হারে জোর করে আদায় করছেন।
কোনো পরিবার এ টাকা দিতে না চাইলে কৌশলে ওই পরিবারের পূর্বের হেডম্যান রিপোর্ট নিজের হাতে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলে মৌজা এলাকা থেকে চলে যাওয়ার জন্য হুমকি দেন সিংপাশ মুরুং।
এছাড়া স্থানীয়রা টাকা না দিলে জেলার বাহিরের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কাছ থেকে অধিক পরিমানে নগদ অর্থ নিয়ে স্থানীয়দের দীর্ঘ ৩০/৪০বছরের দখলীয় জায়গা বন্দোবস্তির নিমিত্তে প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করে দেন।
এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বহিরাগত প্রভাবশালীরা ওই জায়গার উপর সৃজিত বনজ সম্পদ কেটে বিক্রি করে বনউজাড় করে ফেলছে। বিশেষ করে হেডম্যান সিংপাশ মুরুং প্রজাদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত খাজনার বাহিরে বাৎসরিক একর প্রতি ৫০০ টাকা হারে নিয়ে থাকেন।
ইদানিং সরকারের বিধি নিষেধ অমান্য করে নগদ অর্থের বিনিময়ে প্রজার নামে বন্দোবস্তি কিংবা প্রজাদের দীর্ঘদিনের ভোগ দখলীয় জায়গার উপর পুনরায় হেডম্যান রিপোর্ট প্রদান করে । বহিরাগতদের জমি জবর দখল করতে সহযোগিতা করে আসছে এই হেডম্যান।
এতে এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা বিনষ্টের পাশাপাশি মামলা মোকদ্দমায় জড়িতে পড়ছেন স্থানীয় অধিবাসীরা। প্রজারা মৃত্যু সনদ, ওয়ারিশ সনদ বা কোন প্রত্যয়ন পত্র নিতে গেলে মোটা অংকের টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে না পারলে তিনি এসব প্রত্যয়ন কিংবা সনদপত্র প্রদান করেন না। উল্টো বিভিন্নভাবে হয়রানি করেন।
কেউ প্রতিবাদ করলে ওই অধিবাসীকে প্রাণ নাশের হুমকিসহ জায়গা থেকে তাড়িয়ে দিবে বলেও হুমকি দেন সিংপাশ মুরুং। এদিকে উল্লেখিত অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট দাবি করে পাল্টা সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন হেডম্যান সিংপাশ ম্রোসহ কয়েকজন পাড়াকারবারি।
এদিকে ভুক্তভোগী রিংরিং মুরং বলেন, আমার দখলীয় জুমের জমি মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে অন্যজনকে দখল দিয়ে আমাকে জায়গা থেকে বের করে দেন। প্রতিবাদ করলে গুম করে মেরে ফেলার হুমর্কী প্রদর্শন করেন। বেশি বাড়াবাড়ি করলে পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দিবেন বলেও হুমকি দেন সিংপাশ মুরুং।
পাইয়া মুরুং জানান, সিংপাশ হেডম্যান পদ পাওয়ার পর আমার নামীয় জায়গা জোর পূর্বক দখল করে সেখানে বাজার স্থাপন করেন। আবার কাছ থেকে বাজারের প্লট বাবদ ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন সিংপাশ ম্রো । আমি দিতে পারিনি বলে আমাকে প্লট দেয়নি। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে বিভিন্ন ধমকি দিচ্ছেন তিনি। তাই আমরা সিংপাশ ম্রোকে হেডম্যান পদ থেকে বহিষ্কারের আবেদন করছি।
অভিযুক্ত সিংপাশ মুরুং বলেন, স্থানীয় কয়েকজন অধিবাসি আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও কাল্পনিক অভিযোগ তুলে অহেতুক হয়রানী করছেন মাত্র। তাদের অভিযোগ মোটেও সত্য নয়। কিছু ভূমিদস্যু তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করতে না পেরে এখন আমার বিরুদ্ধে উড়েপড়ে লেগেছেন।
আরও পড়ুন : মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে চালক নিহত
এ বিষয়ে বান্দরবান বোমাং সার্কেলের সহকারী অংজাই মার্মা বলেন, রবিবার অফিসে গেলে লুলাইং মৌজা হেডম্যান সিংপাশ মুরুয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে জানতে পারব। প্রজারা অভিযোগ করে থাকলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ওডি/এসএ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড