সুমন খান, লালমনিরহাট
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় রাস্তা ও ইদগাহ ভরাটের কাবিটা (কাজের বিনিময়ে টাকা) প্রকল্পের কাজ না করেই লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ফেরদৌস আলমের যোগসাজশে প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধির লোকজন নামমাত্র কাজ করে ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে সরকারের লাখ লাখ টাকা তুলে নিয়েছে বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা এ ব্যাপারে সুষ্ঠু তদন্ত শেষে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন।
কালীগঞ্জ উপজেলা পি.আই.ও অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার কর্মসূচি কাবিটা ২য় পর্যায়ের সাধারণ প্রকল্পের অনুকূলে ৭৩ লক্ষ ৮৮ হাজার ৩৯২ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ৩০ জুনের মধ্যে কাজ শতভাগ শেষ করার সরকারি নির্দেশনা ছিল।
অধিকাংশ প্রকল্পে কাজ করা হয়নি। তবে কাগজে-কলমে শতভাগ কাজ দেখিয়ে ভুয়া মাস্টাররোলের মাধ্যমে এসব প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ অর্থ উত্তোলন করে ভাগ-বাটোয়ারা করে নেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে কালীগঞ্জ প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার ভোটমারী ইউনিয়নের শৌলমারী ৬নং ওয়ার্ডের বাচ্চা মিয়ার বাড়ি থেকে মোসলেমের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারে ২ লক্ষ, একই ওয়ার্ডের নুর ইসলাম কেরানির বাড়ি থেকে চরভরাট আনছার মুক্তিযোদ্ধার জমির শেষ সীমানা পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারে বরাদ্দ ২ লক্ষ ৭০ হাজার, ইদগাহ মাঠ থেকে ফজলুল হকের জমির কিনার পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারে ৩ লক্ষ ও ফোরকানিয়া মাদরাসা থেকে শফিকুলের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারে বরাদ্দ ছিল ২ লক্ষ ৫০ হাজারসহ ইউনিয়নে বিভিন্ন প্রকল্পের নামে নামমাত্র কাজ করে টাকা লোপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে শৌলমারি গ্রামের ৬নং ওয়ার্ডের জমশের উদ্দিন বলেন, বরাদ্দ হয়েছে কি-না আমরা জানি না। তবে এ রাস্তায় গত তিনবছরেও কেউ এক কোদাল মাটিও দেয় নাই, নতুন হাটের কাপড় ব্যবসায়ী আব্দুর রসিদ বলেন, এ বছরে আমাদের রাস্তায় এক কোদাল মাটিও পড়ে নাই। খাল সে খালেই আছে। সড়কটির এমন বেহাল দশা যে, সামান্য বৃষ্টিতে যানবাহন তো দূরের কথা, পায়ে হেঁটে যাওয়াই দুষ্কর হয়ে পড়ে।
৬নং ওয়ার্ড মেম্বার মতিন আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, আমার এখানে একটি রাস্তায় কিছু বরাদ্দ দিয়েছিল। তা দিয়েই আমি সামান্য কিছু সংস্কার করেছি, তাতে ২০ হাজার ৭শ টাকা খরচ হয়েছে। ২০ বিশ হাজার টাকা পি.আই.ও অফিস সরাসরি লেবারের হাতে দিয়েছে। কিন্তু আমি ৭শ টাকা এখনো পাইনি। অথচ আজ বরাদ্দের লিস্টে দেখলাম শুধুমাত্র আমার ওয়ার্ডেই বরাদ্দ ১০ লক্ষ ২০ হাজার টাকা।
এ বিষয়ে ভোটমারি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আহাদুল চৌধুরী বলেন, এসব বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। উপজেলা পিআইও আমাকে বাদ দিয়েই এসব করেন। তিনি এবং উপজেলা চেয়ারম্যান এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।
কালীগঞ্জ প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পি.আই.ও) ফেরদৌস আহম্মেদ এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে রাজি হয়নি। ব্যস্ততা দেখিয়ে ফোন কেটে দেন। পরে আবারও ফোনে কথা বলার চেষ্টা করলে আর কথা বলা সম্ভব হয়নি।
আরও পড়ুন : গিনেস বুকে নাম লেখাতে চায় শ্রীপুরের ‘টুনটুনি’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান বলেন, আমি নতুন এসেছি। কাবিখা, কাবিটা প্রকল্পের কোনো অনিয়ম হয়েছে কি-না তা আমার জানা নেই। যদি কেউ অভিযোগ করে তাহলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ওডি/এএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড