• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

পাহাড়ি অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে আদার চাষে কৃষকের মুখে হাসি

  শিব্বির আহমদ রানা, বাঁশখালী, চট্টগ্রাম

০৮ অক্টোবর ২০২১, ১৭:১৬
আদা চাষ
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে আদার চাষ শুরু হয়েছে। ছবি : অধিকার

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে আদার চাষ শুরু হয়েছে। চলতি বছরের রবি মৌসুমের শেষের দিকে উপজেলার পুকুরিয়া, সাধনপুর, জঙ্গল গুনাগরী, বৈলছড়ি, জঙ্গল পাইরাং, জঙ্গল জলদী, পূর্ব শীলকূপ, পূর্ব চাম্বল ও পূর্ব নাপোড়া পাহাড়ি এলাকায় এবার প্রায় ৭৫ হেক্টর জমিতে উন্নত জাতের আদার চাষ হয়েছে।

অপেক্ষাকৃত উঁচু ও পতিত জমিতে আদা চাষে তেমন বেশি সারের প্রয়োজন হয় না। পাশাপাশি পরিশ্রমও কম লাগে। তাই এ অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ মসলা জাতীয় এ ফসল চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। চাষকৃত এসব জমি থেকে উপজেলা কৃষি বিভাগ হেক্টরপ্রতি ১৩ থেকে ১৫ মেট্রিক টন আদা উৎপাদনের আশা করছে।

বাঁশখালী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, মূলত ফাল্গুন থেকে বৈশাখ মাস পর্যন্ত সময়ে আদার বীজ লাগানো যায়। ওই সময় সাধারণত ১২ থেকে ১৫ গ্রাম ওজনের ১ থেকে দুইটি কুঁড়িবিশিষ্ট কন্দ লাগানো হয়। কৃষকরা ৪০ থেকে ৪৫ সেন্টিমিটার দূরে দূরে সারি করে মাটির ২০ সেন্টিমিটার ও ৫ সেন্টিমিটার গভীরে আদা লাগান। কন্দ লাগানো পর ভেলী করে দিতে হয়। প্রতি হেক্টরে ১ হাজার কেজি বীজের প্রয়োজন হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাঁশখালী উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় আদা চাষের জন্য প্রচুর পরিমাণ উপযোগী জমি রয়েছে। এখানকার জমির মাটি উর্বর হওয়ায় নানা ধরনের সবজির চাষাবাদও বেড়েছে।

আদা মূলত দামি হওয়ার পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় একটি মসলা হওয়ায় দেশে এর চাহিদার তুলনায় বড় একটি অংশ অন্যদেশ থেকে আনতে হয়। বিশেষ করে ছায়াযুক্ত জমিতে অন্য জমির চেয়ে ২০ ভাগ বেশি আদার উৎপাদন হয়। এমন ধারণা থেকেই এবার পাহাড়ি জমিতে আদার চাষ হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর ভালো ফলন হবে একই সাথে চাষিরাও লাভবান হবেন।

বাঁশখালী উপজেলায় প্রায় ৭৫০ হেক্টর পাহাড়ি উঁচু নিচু জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজির চাষ হয়ে থাকে। এরমধ্যে প্রায় ৭৫ হেক্টর জমিতে আদার চাষ হয়। আদার জন্য উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া দরকার। অল্প ছায়াযুক্ত স্থানে আদা চাষাবাদ ভালো হয়। আর উঁচু বেলে দোআঁশ, বেলে ও এঁটেল দোআঁশ মাটিতে আদা ভালো ফলনের উপযোগী।

উপজেলার শিলকূপের স্থানীয় আদা চাষি বাদশা, শামশুল আলম, শাহেদ সরোয়ার ও প্রণব জানান, মার্চ-এপ্রিল মাসের দিকে তারা আদার বীজ রোপণ করেছেন। নভেম্বর-ডিসেম্বর দিকে ফলন ঘরে তুলবেন। পতিত ও পরিত্যক্ত জমিতে এর চাষ হওয়ায় জমির শতভাগ ব্যবহার নিশ্চিত হচ্ছে।

তারা জানান, এক শতাংশ জমির জন্য ৪ কেজি আদার বীজ প্রয়োজন হয়। আর একটি গাছ থেকে আড়াই কেজি বা তার চেয়েও বেশি আদা পাওয়া যায়। তাই পরিশ্রম কম হওয়ায় আদা চাষে অনেকেই আগ্রহ দেখাচ্ছেন। শুধু শিলকূপের পাহাড়ি এলাকায় এবার ৫০ কানির অধিক জমিতে আদার চাষ হয়েছে বলেও জানান তারা।

শিলকূপের আদা চাষিরা আরও জানান, পাহাড়ি পতিত উঁচু জমিকেই আমরা আদা চাষের জন্য নির্ধারণ করেছি। বৃষ্টি হলেও পানিটা নেমে যায়। যা আদার জন্য অতি প্রয়োজন। ইতোমধ্যে উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলে ভালো মানের আদার গাছ হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের কৃষি অফিসাররা সবধরনের পরামর্শ সেবা দিয়ে যাচ্ছে। আশা করছি, এ বছর ব্যাপক ফলন আসবে।

এ দিকে, পাহাড়ি আদা চাষি বাদশা জানান, আদা চাষে তেমন পরিশ্রম করতে হয় না। পাহাড়ের উঁচু জমিতে ও বিভিন্ন গাছ বাগানের ছায়াযুক্ত স্থানে তিনি আদার চাষাবাদ করেছেন। জমি প্রস্তুত করার সময় মাটিতে সার দিতে হয়। এ ছাড়া কোনো সার দিতে হয় না। বর্ষা মৌসুমে ছত্রাক আক্রমণ করার সম্ভাবনা থাকে তাই এই সময়টাতে ছত্রাক নাশক স্প্রে করতে হয়। আর তেমন কোনো পরিশ্রম নেই। তিনি প্রায় ৩ কানি পরিমাণ জমিতে আদার চাষ করেছে এবং আশা করছেন ভালো ফলন পাবেন।

অপর কৃষক শামশুল আলম বলেন, তিনি এ বছর ক্ষুদ্র পরিসরে আদার চাষ করলেও আগামীতে তা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে। এখান থেকেই তিনি বীজ সংরক্ষণ করে রাখবেন বলেও জানান।

এই আদা চাষি বলেন, উৎপাদন খরচ হিসেবে প্রতি কানি জমিতে আদা ও শ্রমিকসহ ৪০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। ভালোমতো ফলন হলে কানিপ্রতি ব্যয় বাদে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা লাভ হয় বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুন : হুইলচেয়ারই জীবনসঙ্গী, অদম্য ইচ্ছাশক্তিতেই শিক্ষকের গুরুদায়িত্বে তিনি

এ ব্যাপারে বাঁশখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবু সালেক দৈনিক অধিকারকে বলেন, বাঁশখালী আদা চাষের জন্য সম্ভাবনাময়ী একটি কৃষি জোন। বাঁশখালীতে এবার প্রচুর পরিমাণ আদার চাষ হয়েছে। প্রায় ৭৫ হেক্টর জমিতে আদার চাষ হয়েছে এবার। অন্য ফসলের সাথেও আদা চাষের সুযোগ রয়েছে। তাই কৃষকদের আদা চাষের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে।

তিনি জানান, গুবড়ি পোকার আক্রমণ না হলে আদার ভালো ফলন হয়। এ ক্ষেত্রে পাহাড়ি অঞ্চলের কৃষকদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। আদা লাগানোর ৯ থেকে ১০ মাস পর ওঠানোর উপযোগী হয়। গাছের প্রায় সব পাতা শুকিয়ে গেলে আদা তোলা হয়। আর ফলন হয় প্রতি হেক্টরে ১৩ থেকে ১৫ টন। এ ছাড়া বাজারে আদার ভালো মূল্য থাকলে চাষিরাও বেশ উপকৃত হয় বলেও জানিয়েছেন তিনি।

ওডি/নিলয়

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড