রয়েল আহমেদ, শৈলকূপা (ঝিনাইদহ)
ঝিনাইদহের শৈলকুপায় ‘সিরাক বাংলাদেশ’ নামের একটি ভুঁইফোড় এনজিও শুধু সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দুই কোটিরও বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়েছে। এ নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে হায় হুতাশ বাড়ছে। টাকার শোকে অনেকে কাহিল।
কেও কেও সুদ ও দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে দেনা করে ‘সিরাক বাংলাদেশ’ এনজিওতে টাকা লগ্নি করেছিলেন। তাদেরই একজন হচ্ছে শৈলকুপা পৌর এলাকার কবিরপুরের সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী মৌসুমী আক্তার।
তিনি সিরাক বাংলাদেশ থেকে ক্ষুদ্র ঋণ নেওয়ার জন্য ১৫ হাজার টাকা জামানত জমা দিয়েছিলেন। হঠাৎ সোমবার (৪ অক্টোবর) সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখেন অফিসের ভিতরে লাইট জললেও অফিসের প্রধান ফটকে তালা।
পরে জানতে পারেন এনজিও উধাও। শুধু মৌসুমী আক্তারই না এরকম শত শত স্বল্প আয়ের মানুষ হায় হুতাশ করছেন অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে।
তারা বলেন, জামানত হিসেবে আনুমানিক দুই কোটিরও বেশি টাকা নিয়ে রাতের আধারে পালিয়েছে এনজিওটির প্রতারক সদস্যরা।
অভিযোগ উঠেছে পৌর এলাকার মধ্যে সাইনবোর্ড টানিয়ে এনজিওর নামে এমন আর্থিক লেনদেন করলেও নজরদারি ছিল না স্থানীয় প্রশাসনের। সমিতির সদস্যদের অভিযোগ এ ঘটনার পর তারা থানায় অভিযোগ দিতে গেলেও শুধু সমিতির নাম ঠিকানা নিয়েই বিদায় করেন তাদের।
পৌর এলাকার কবিরপুরের মৌসুমি আক্তার বলেন, প্রবাসী আকবর আলীর বাসায় ‘সিরাক বাংলাদেশ’ নামের একটি এনজিও ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রমের জন্য বাসা ভাড়া নেয়। এসেই তাদের এক নারী সদস্যসহ ১০/১২ জন পাড়ায় পাড়ায় দ্রুতঋণ দেওয়ার জন্য সদস্য সংগ্রহ করতে থাকে। ঋণের সুবিধা ছিল অন্য এনজিও থেকে অনেক সহজ।
এ কারণে তিনি তার স্বামীর ব্যবসা আরও প্রসারিত করতে দেড় লাখ টাকা ঋণ নেওয়ার জন্য ১৫ হাজার টাকা জামানত জমা রাখেন তিনি। কিন্ত সোমবার জানতে পারেন এনজিওটি টাকা নিয়ে উধাও।
সাতগাছি গ্রামের ফিরোজ বিশ্বাস জানান, তিনি সিরাক বাংলাদেশ থেকে লোন নেওয়ার জন্য ৫ হাজার টাকা জামানত জমা দেন। কিন্ত লোণ না দিয়ে পালিয়ে গেছে এনজিওটি।
তিনি আরও বলেন, তাদের মত স্বল্প আয়ের কম পক্ষে ৩’শ সদস্য এ প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
উপজেলার সারুটিয়া ইউনিয়নের চর মৌকুড়ি গ্রামের মোসলেম মোল্যার ছেলে শফিকুল ইসলাম, ইদ্রিস আলী ও নাদপাড়া গ্রামের বজলু মোল্যা জানান, তারা প্রত্যেকে ১ লাখ টাকা ঋণ নেওয়ার জন্য জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা জামানত রেখেছিলেন সিরাক বাংলাদেশে। কিন্ত তারা লোণ না দিয়ে রাতের আধারে পালিয়ে গেছে।
‘সিরাক বাংলাদেশ’ অফিসে গিয়ে দেখা গেছে, সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত। সিরাক বাংলাদেশ। ক্ষুদ্রঋণ দান ও কুঠির শিল্প প্রকল্প। যার সনদ নম্বর-০০৩৫৬-০০৮৯৪-০০০৯১। ঋণের পাশ বইয়ে দেখা গেছে ‘‘শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড’’। কিছু শর্তের কথা।
বাসার মালিক প্রবাসী আকবর আলীর কন্যা আয়শা আক্তার জানান, তাদের বাসা সিরাক বাংলাদেশ নামের একটি এনজিও ভাড়া নেয়। তাদের সাথে চলতি মাসের ৫ তারিখে চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। কিন্ত তার আগেই অনেক গ্রাহকের টাকা নিয়ে তারা পালিয়ে গেছে।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাসুদ আহম্মেদ জানান, শৈলকুপাতে সিরাক বাংলাদেশ নামের কোনো এনজিও ঋণ কার্যক্রমের জন্য নিবন্ধিত নেই।
শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সিরাক বাংলাদেশ নামের এনজিও’র কোনো গ্রাহক তাদের কাছে এখনো কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন : পুনরায় বিসিবির সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় ভৈরবে আনন্দ মিছিল
শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা লিজা জানান, সিরাক বাংলাদেশ নামের প্রতিষ্ঠানের ঢাকা অফিস থেকে তারা তাকে টেলিফোনে জানান, তাদের প্রতিষ্ঠানে কোনো ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম নেই। শৈলকুপাতে যারা এ কাজটি করেছে তারা প্রতারক চক্র।
ওডি/এসএ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড