নাসিম আজাদ, পলাশ (নরসিংদী)
মানুষ নিজেকে সুন্দর রাখতে কতো কিছুই না করে থাকে। সেই প্রাচীন কাল থেকে মানুষ নিজেকে অপরের সামনে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করে আসছে।
আর মানুষ কে সুন্দর করে তোলা যাদের কাজ তাদেরকে বলা হয়, নরসুন্দর। আমরা আঞ্চলিক ভাষায় বলে থাকি নাপিত বা শীল।
প্রায় ৪০ বছর আগের কথা, বিকাল বেলা হাট বসতো। তখন বিভিন্ন হাট-বাজারে ১৫ থেকে ২০ কোথাও আরো বেশি নরসুন্দররা পিড়িতে বসিয়ে মানুষের চুল দাড়িঁ কামিয়ে দিতেন। সকাল বেলা শীল পাড়ায় থাকতো চুল-দাঁড়ি কামানোর জন্য মানুষজনের হিড়িক। তখন তারা নগদ টাকা নিতেন না। বিনিময়ে গ্রামের মানুষের কাছ থেকে পাটের মৌসুমে পাট এবং ধানের মৌসুমে ধান নিয়েই খুশি থাকতেন।
পলাশ উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার সরেজমিনে ঘুরে প্রথমে ঘোড়াশাল বাজারে গিয়ে দেখা মিলে রণজিৎ শীলের। তিনি জানান, ৪০ বছর যাবৎ পিড়িতে বসিয়ে মানুষের চুল দাঁড়ি কামাচ্ছি। বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় মানুষজন সেলুন মুখী হয়ে গেছে। মাটিতে বসে চুল দাঁড়ি কাটতে চায়না, এখন খুব কমই মিলে। আয় রোজগার তেমন নেই। বাপ-দাদার ঐতিহ্য ধরে রেখেছি মাত্র।
উপজেলার ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রেের প্রধান ফটকের সামনে সকাল-সন্ধা মার্কেটের ঠিক পশ্চিম দিকে যেতেই চোখে পড়লো চুল কাটার দৃশ্য। একটু কাছাকাছি যেয়ে জিজ্ঞেস করলাম দাদা আপনার নাম কি? নিরন্জন শীল। বাড়ি পলাশ দড়িহাওলা পাড়া। ৭৫ বছরের বৃদ্ধ, প্রায় ৬০ বছর ধরে পিড়িতে বসিয়ে মানুষের চুল দাঁড়ি কামানোর কাজ করছেন।
তিনি জানান, মাটিতে এভাবে বসে চুল দাঁড়ি কাটাতে চায়না, কারণ সেলুনে চেয়ারে বসে কাটতে পারে। তারপরও দিন শেষে প্রায় ৫ শত টাকা কামাতে পারি। বয়সের ভারে এখন আর তেমন কাজ করতে ইচ্ছে হয়না। শুধু ঐতিহ্যটাকে ধরে রেখেছি।
(ছবি : অধিকার)
চুল দাঁড়ি কাটতে আসা ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রেের শ্রমিক আকবর আলী জানান, চাকরির সুবাদে আমি ১০ বছর যাবৎ দাদার এখানে চুল দাঁড়ি কামাতে আসি।চুল দাঁড়ি কামাতে আমার বাবাও সকাল বেলা নিয়ে যেতো শীল পাড়ায়। পিড়িতে বসে কাটানোর অভ্যাসটি হয়তো আর ছাড়তে পারবো না। আবার টাকাও কম লাগে।
চুল দাঁড়ি কাটাতে আসা পলাশের ওবায়দুল জানান, ২০ বছর যাবৎ দাদার এখানে চুল দাঁড়ি কাটাই। মাত্র ৩০ টাকা দিতে হয়। আধুনিক সেলুনে কাটালে ৮০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত দিতে হয়। আয় রোজগার কম তাই এখানে চুল দাঁড়ি কাটাতে চলে আসি।
মানুষের সৌন্দর্যের উপকরণ হচ্ছে, চুল দাঁড়ি। একে আরও সৌন্দর্য বর্ধন করারকৌশলগত কারণে শীলদের প্রয়োজনিয়তা ও কদর ফুড়াবেনা। কিন্তু হাট বাজারে সাজানো পিড়িতে বসে চুল দাঁড়ি কাটার সেই দৃশ্য কালের বির্বতনে হয়তো হারিয়ে যেতে পারে।
ওডি/এফই
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড