মো. রাফিকুর রহমান লালু, রাজশাহী
নারী দিয়ে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসিয়ে অপহরণের পর প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে অর্থ আদায় চক্রের মূল হোতাসহ রাজশাহীতে প্রতারক চক্রের ৩ সদস্যকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য নিশ্চিত করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।
আটকরা হলো- রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার সুলতানাবাদ গ্রামের মো. আমিনুর রহমান বাবুর ছেলে মো. আতিকুর রহমান বাপ্পি (৩২), পঞ্চবটি খরবোনা নদীর ধারের বাসিন্দা মো. রানার স্ত্রী মোছা. কোহিনুর (৪৩) এবং পবা থানার চৌবাড়িয়া গ্রামের ফরিদ হোসেনের স্ত্রী মোছা. নার্গিস নাহার হেলেনা (৫২)।
ডিবি পুলিশ জানায়, পাবনা জেলার সুজানগর থানার মো. ইমরান (৫০) (ছদ্মনাম) একজন অবসরপ্রাপ্ত ইংরেজি শিক্ষক। বর্তমানে তিনি রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার কাদিরগঞ্জ এলাকায় বসবাস করেন। ব্যক্তিগত কাজে তিনি রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে গেলে সেখানে আসামি মোছা. নার্গিস নাহার হেলেনার সাথে পরিচয় হয়। ওই পরিচয়ের সূত্র ধরে শিক্ষক মো. ইমরানকে হেলেনা তার নিজ বাসায় নাতিসহ ৪ থেকে ৫ জন শিক্ষার্থীকে ইংরেজি বিষয়ে টিউশনি করার জন্য অনুরোধ করেন।
পরবর্তীকালে ওই শিক্ষক মো. ইমরান সরল বিশ্বাসে আসামির কথায় রাজি হয়। এরপর আসামি হেলেনা সেই শিক্ষককে মুঠোফোনে শালবাগানে তার বাসায় যেতে বলে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২ অক্টোবর বিকাল ৩টার দিকে শিক্ষক ইমরান শালবাগান মোড়ে গেলে সেখানে পূর্ব থেকে ওঁৎ পেতে পেতে থাকা হেলেনাসহ তার সহযোগীরা তাকে কৌশলে অপহরণ করে শালবাগান মোড়ে তাদের ভাড়া বাসায় নিয়ে যায়।
এরপর সেখানে অপর আসামি মোছা. কোহিনুরের সাথে জোরপূর্বক অর্ধনগ্ন অবস্থায় অশ্লীল ছবি তোলে অভিযুক্তরা। পরে তারা ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। একই সাথে টাকা না পেলে এসব ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি প্রদান করে। পরবর্তীকালে শিক্ষক ইমরান তার আত্মীয়-স্বজনদের দ্বারা বিকাশের মাধ্যমে মোট ১৮ হাজার ২০০ টাকা প্রদান করেন।
পরবর্তীকালে ওই শিক্ষক ডিবি পুলিশকে মৌখিকভাবে এ বিষয়ে অভিযোগ প্রদান করেন। একপর্যায়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. আবু কালাম সিদ্দিকের নির্দেশনায় এবং রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আরেফিন জুয়েলের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মো. আব্দুল্লাহ আল মাসুদের নেতৃত্বে পুলিশ পরিদর্শক মো. আবুল কালাম আজাদ ও তার টিম অভিযুক্তদের আটকে অভিযানে নামেন। পরে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় আসামিদের অবস্থান নির্ণয় করে গত ৪ অক্টোবর রাত সাড়ে ৮টার দিকে মহানগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার অলকার মোড় এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। ওই অভিযানে নারী দিয়ে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসিয়ে অপহরণ করে প্রাণনাশের হুমকিসহ অর্থ আদায় চক্রের মূল হোতা ছাড়াও ৩ সদস্যকে আটক করা হয়। তবে ওই সময় ঘটনাস্থল থেকে একজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। অভিযানে আটক আসামিদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া নগদ ৬ হাজার টাকা ও প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ৩টি মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়।
আরও পড়ুন : খুলনায় জাল সার্টিফিকেট তৈরি চক্রের দুই সদস্য গ্রেফতার
সংবাদ সম্মেলনে ডিবি পুলিশ আরও জানায়, আটক আসামিরা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে যে, পলাতক আসামিসহ তারা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ব্যক্তিদের নানাভাবে প্রলোভন দেখিয়ে অপহরণ করে বাড়িতে নিয়ে নারী দ্বারা অশ্লীল ছবি তুলে ভাইরাল করার ভয় দেখিয়ে জিম্মি করে মুক্তিপণ ও চাঁদা আদায় করত।
এ বিষয়ে পলাতক আসামিকে আটকে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি আটকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছে ডিবি পুলিশ।
ওডি/নিলয়
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড