মনিরুজ্জামান, নরসিংদী
আখ চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন নরসিংদীর ৪ উপজেলার আখ চাষিরা। খরচের দিক থেকে অন্যান্য ফসলের তুলনায় আখ চাষ বেশি লাভজনক। ফলে জেলাজুড়ে আখ চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। চাহিদা বৃদ্ধির পাশাপাশি ভালো দাম পাওয়ায় এ বছর অধিক লাভের মুখ দেখছেন আখ চাষিরা। আবার অনেকেই বাড়তি লাভের আশায় ব্যাপক হারে আখের চাষ করেছেন।
নরসিংদীতে উফশী ও স্থানীয় জাতের আখ চাষ হয়। এর মধ্যে ঈশ্বরদী-১৬, ঈশ্বরদী-২৫, ঈশ্বরদী-২৬, ঈশ্বরদী-২৭, ঈশ্বরদী-২৮, লতারিজবাসি, বিএসআর-১ এবং স্থানীয় টেনাই ও মিশ্রীদানা জাতের আখ বেশি চাষ করা হয়। আখের চারার ফাঁকে ফাঁকে সাথি ফসল হিসেবে চাষিরা লালশাক, মুলা, সরিষা, মরিচসহ অন্যান্য ফসলও চাষ করে থাকে। দুই থেকে তিন মাসে আখের সাথের ফসল উঠলেও আখ পরিপক্ব হতে সময় লাগে আরও কয়েক মাস। এভাবে একসাথে একাধিক ফসল ফলিয়ে স্বাবলম্বী হচ্ছেন প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক।
নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ বছর ১৩৯ হেক্টর জমিতে আখ চাষ হয়েছে। এরমধ্যে রায়পুরায় ৩১, বেলাব ৩০, পলাশে ৩০, শিবপুরে ২৫, সদরে ১৫ ও মনোহরদীতে ৮ হেক্টর জমিতে আখের চাষ হয়েছে। এ অঞ্চলের আখ জেলার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতেও সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া আখ চাষে পোকার আক্রমণ ছাড়া আর কোনো বালাই নেই, তাই পোকার আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পেতে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে থাকেন মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা।
এরই মধ্যে আখ বিক্রির হাট হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে নরসিংদীর শিবপুরের সিএন্ডবি বাজার, মনোহরদীর হাতীরদিয়া বাজার, রায়পুরার পলাশতলী বাজার, পলাশের কালীরহাট, চরসিন্দুর, বেলাব উপজেলার বেলাব বাজার ও বারৈচা বাজার। এ বাজারগুলোতে প্রতিদিন আখের পাইকারি হাট বসে। এই হাটগুলোয় প্রতি সপ্তাহে প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার আখ বিক্রি হয়।
প্রতিদিন সকালে ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে জেলার পাইকারি আখের বাজারগুলো। ভোর থেকে বিভিন্ন স্থান থেকে আখ চাষিরা নিজেদের উৎপাদিত আখ বিক্রির উদ্দেশ্যে বাজারগুলোতে নিয়ে আসা শুরু করেন। তবে অনেক কৃষকই পাইকারি বিক্রির চেয়ে গ্রাহক পর্যায়ে খুচরা বিক্রিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এতে দুইভাবে লাভবান হন তারা। একদিকে খুচরা হিসেবে অধিক দাম পান, অন্যদিকে খুচরা বিক্রি করলে আখের আগার অংশ তারা রেখে দেয় যা আখ চাষে বীজতলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই আগার প্রতিটি অংশ ৫ টাকা করে কৃষকদের কাছে বিক্রি করা যায়। জেলায় চাষকৃত আখের ৬০ শতাংশ নরসিংদীবাসীর চাহিদা মেটালেও বাকি ৪০ শতাংশ আখ যায় ঢাকাসহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর বিভিন্ন বাজারে।
নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার দুলালপুর, মাছিমপুর, সাধারচর, চক্রধা, পলাশ উপজেলার জিনারদী, গজারিয়া, চরসিন্দুর, বেলাব উপজেলার, বেলাব, বাজনাব, আমলাব, বিন্নাইবাদ ও রায়পুরা উপজেলার পলাশতলী, আমিরগঞ্জ এবং মরজাল ইউনিয়নে অধিকতর আখ চাষ হয়। এ ছাড়াও নরসিংদী সদরের শিলমান্দি, নূরালাপুর ও মনোহরদী উপজেলার দু-একটি ইউনিয়নেও স্বল্প পরিসরে আখ চাষ হয়।
আখ ব্যাপারি কাইয়ুম মিয়া বলেন, প্রতিদিন তিনি পলাশতলী বাজারে আখ কিনতে আসেন। এই হাটে আখ বিক্রি হয় শ’ হিসাবে। আখের প্রকার ও ভালোমন্দ অনুযায়ী প্রতিটির দাম হয় ২০ থেকে ৪০ টাকা। এই হিসাবে প্রতি ১শ’ আখ বিক্রি হয় ২ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকায়।
এ দিকে, বেলাব বাজারে আখ কিনতে আসা কিশোরগঞ্জের পাইকার আব্দুল হাই বলেন, নরসিংদীর আখ অপেক্ষাকৃত ভালো মানের এবং কম দাম হওয়ায় তারা এই হাট থেকেই আখ কেনেন। পরিবহন ভাড়া যোগ করে তারা প্রতিটি আখ আকারভেদে ৪০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করেন।
আরও পড়ুন : শৈলকুপায় সাপের কামড়ে নারীসহ দুইজনের মৃত্যু
অন্যদিকে, রায়পুরা উপজেলার পলাশতলীর খাকচক এলাকার কৃষক চাঁন মিয়ার সাথে কথা হলে তিনি দৈনিক অধিকারকে বলেন, তিন বিঘা জমিতে চাষ করে তিনি এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় লাখ টাকার আখ বিক্রয় করেছেন। আরও প্রায় এক লাখ টাকার মতো বিক্রয় করতে পারবেন। আর এই তিন বিঘা জমিতে তার খরচ হয়েছে ৯০ হাজার টাকার কিছু বেশি।
একই উপজেলার আমিরগঞ্জ ইউনিয়নের বালুয়াকান্দি গ্রামের মেহেদী হাসান বলেন, আখের ফলন উঠার সাথে সাথেই জমিকে পুনরায় আখ চাষের জন্য তৈরি করতে হয়। চলতি বছরে তিনি দেড় বিঘা জমিতে আখ চাষ করেছেন। তার জমির আখ হাসনাবাদ বাজারে নিয়ে গিয়ে তিনি নিজেই খুচরা বিক্রি করেন। বাজারে আখের চাহিদা বেশি থাকায় চড়া দামে বিক্রি করতে পেরে অনেক লাভবান হচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
ওডি/নিলয়
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড