• রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১  |   ৩২ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

স্কুলছাত্রী ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে অর্ধলক্ষ টাকার বাণিজ্য

  আরাফাত আলী, সাতক্ষীরা (কালিগঞ্জ)

২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১১:৫৯
সাতক্ষীরা
ছবি : প্রতীকী

সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে দ্বিতীয় শ্রেণীর এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে বাবু (২৩) নামের এক কবিরাজের বিরুদ্ধে। সে উপজেলার বরেয়া গ্রামের মৃত বয়ে গাজীর ছেলে।

ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে অর্ধলক্ষ টাকার বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে স্থানীয় দফাদার তপন এবং ইউপি সদস্য আবু বক্কারের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি শনিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) উপজেলার চাম্পাফুল ইউনিয়নে ঘটে। তবে এ ব্যাপারে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও থানা পুলিশ কিছুই জানেন না।

বিষয়টি ফাঁস হওয়ার খবর পেয়ে শুক্রবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সরেজমিনে গেলে ভুক্তভোগীর মা সাংবাদিকদের জানান, শনিবার সকালে বাবু কবিরাজ তাদের বাড়িতে আসে। এসে বলে তোমাদের মেয়ের উপরি দোষ আছে, এখনি ভালো চিকিৎসা (ঝাড়ফুঁক) না করালে মেয়ে বাঁচবে না বলে ভয় দেখায়। তখন আমরা বলি গরিব মানুষ এত টাকা কোথা থেকে পাব। তখন বাবু কবিরাজ বাজার থেকে কিছু মাছ তরকারি কিনে আমাদের বাড়িতে দেয়।

এরপর চিকিৎসার নাম করে তার মোটরসাইকেল যোগে আমার মেয়ে ও আমার ভাইয়ের মেয়েকে তার বাড়িতে নিয়ে যায়। বাড়িতে নিয়ে খাবারের সাথে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দেয়। তারা ঘুমিয়ে পড়লে বাবু কবিরাজ তাদের ধর্ষণ করে। পরবর্তীতে ওইদিন বিকাল ৪টায় আমার মেয়ে ঘুম থেকে উঠে প্রচন্ড ব্যথা যন্ত্রণায় কান্নাকাটি শুরু করে। এ সময় কবিরাজ মোটরসাইকেলযোগে তাদেরকে আমার বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে দ্রুত চলে যায়।

তিনি আরও জানান, বাড়িতে আসার পরেই আমার মেয়েকে আমি অসুস্থ অবস্থায় দেখতে পাই এবং তাৎক্ষণিকভাবে গ্রাম্য ডাক্তার নাজমুছ শাহাদাৎ রাহান এর নিকটে নিয়ে যাই। বাড়িতে এনে চাম্পাফুল ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বর আবুবক্কর এর নিকট আমি সবকিছু খুলে বলি। তখন তিনি চেয়ারম্যান সাহেবকে না জানিয়ে দফাদার তপনকে সংবাদ দিয়ে তার পরদিন বাবুকে খবর দিয়ে আমার বাড়িতে নিয়ে আসে।

বাড়িতে এনে মেম্বর, চৌকিদারসহ স্থানীয় একটি গ্রুপ কবিরাজ বাবুকে উত্তম-মধ্যমদিয়ে মোটরসাইকেল আটকে ৫০ হাজার টাকা না দিলে তাকে থানায় দেওয়ার ভয় দেখায়। পরে উপায়ন্তর না পেয়ে কবিরাজ বাবু তার পরেরদিন ৫০ হাজার টাকা মেম্বর আবু বক্কার এবং দফাদার তপনের হাতে দিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে ছাড়া পায়।

এরপর মেম্বার এবং তপন দফাদার এসে আমাদের হাতে ২০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলে ১৫ হাজার টাকা তুলে দিয়ে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করে কাউকে কিছু জানাতে নিষেধ করে। আমরা সেই ভয়ে কাউকে কিছু না বলে অসুস্থ মেয়েকে বাড়িতে রেখে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি।

ভুক্তভোগীর মা জানান, আমরা থানায় যেতে চাইলে তপন দফাদার ও মেম্বর আবু বক্কার এবং তার সাঙ্গ-পাঙ্গরা আমাদের বলে থানায় মামলা করতে গেলে তোমার মেয়ের বিয়ে হবে না এবং তোমার মেয়েকে কাটা ছেড়া করবে। কাউকে কিছু না বলে বাড়িতে চুপচাপ থাকো। কেউ আসলে কারো সাথে কথা বলবে না।

বিষয়টি জানার জন্য কবিরাজ বাবুর বাড়িতে একাধিকবার গেলেও দেখা পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয়রা জানিয়েছেন গত কয়েকদিন ধরে কবিরাজ বাড়িতে থাকে না।

এ বিষয়ে সাংবাদিকরা ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রীর নিকট জিজ্ঞাসা করলে সে সরল মনে সমস্ত ঘটনা অকপটে বলে যায়। বর্তমানে ওই স্কুলছাত্রী ভয়ে আতঙ্কে ভালো চিকিৎসা না নিয়ে বাড়িতে দিন কাটাচ্ছে।

ঘটনার সত্যতা জানার জন্য চাম্পাফুল ইউনিয়ন পরিষদে গেলে দফাদার তপন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলে, ছাত্রীর বাবাকে ২০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা হয়েছিল। পরে ১৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি আমি থানার উপ-সহকারী পরিদর্শক তরুণ বাবুকে জানিয়েছিলাম। তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি। পরে আমি মেম্বরকে জানালে তিনি এসে মীমাংসা করে দেন।

সে একজন দফাদার হয়ে থানায় না জানিয়ে মীমাংসা করতে পারেন কিনা, এ প্রশ্নে সে কোনো উত্তর না দিয়ে বিষয়টি খবরের কাগজে না লেখার জন্য সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন।

এ বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আবু বক্কারে নিকট জানতে চাইলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, দফাদার তপন আমাকে বিষয়টি জানালে আমি ঘটনাস্থলে যাই। তারা আমার মাধ্যমে ভুক্তভোগীর মা-বাবার হাতে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে মীমাংসা হয়ে গেছে বলে আমাকে জানান। বাকিটা থানা পুলিশ দেখবেন বলে কবিরাজকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

একটি ধর্ষণের ঘটনা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য হয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে জরিমানা দিয়ে মীমাংসা করতে পারেন কিনা এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি ইউপি সদস্য আবু বক্কার।

চম্পাফুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক গাইন এর নিকট ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আমি আপনাদের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারলাম।

তখন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তপনকে প্রশ্ন করেন, এতো বড় একটা ঘটনা আমাকে জানালে না কেন? এ বিষয়ে কোনো জবাব না দিয়ে তখন তপন ভুল স্বীকার করেন।

এ ব্যাপারে থানার উপ-পরিদর্শক তরুণের নিকট জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, একদিন তপন দফাদার ফোন করে বলে ছোট একটি নারী ঘটিত ব্যাপারে মীমাংসা করেছে বলে জানিয়েছিল। এতো বড় ঘটনা সম্পর্কে আমার কিছু জানা নেই।

থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমানের নিকট জিজ্ঞাসা করলে বিষটি সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে জানান। এ ব্যাপারে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ওডি

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড