হুমায়ুন কবির সূর্য, কুড়িগ্রাম
ষোলটি নদ-নদীময় কুড়িগ্রামের চরগুলোতে শরতের আগমনী বার্তা নিয়ে স্নিগ্ধতা ছড়াচ্ছে কাশফুল। প্রকৃতি প্রেমীরা যেমন কাশফুলের সৌন্দর্য নিয়ে বিমুগ্ধ। তেমনি এই কাশফুল বিক্রি করে অভাব মোচনের স্বপ্ন দেখছে কৃষকরা। এই সময়টাতে যারা নদী পেরিয়ে যাতায়াত করেন তাদের জন্য একটা সুন্দর মুহূর্ত দুইপারের কাশবনগুলো।
জেলায় প্রায় সাড়ে ৪ শতাধিক চরাঞ্চলে এখন শোভা পাচ্ছে কাশফুল। এলোমেলো হাওয়া সাদা কাশফুল উড়ে যাচ্ছে দিগন্তজুড়ে।
কাশফুল (ছবি : দৈনিক অধিকার)
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের কলমের আঁচড়ে উঠে এসেছে কাশফুলের কাব্যকথা। তিনি লিখেছেন, ‘কাশফুল মনে সাদা শিহরণ জাগায় মন বলে কত সুন্দর প্রকৃতি স্রষ্টার কি অপার সৃষ্টি।’
শরৎ এক অপার সৌন্দর্য নিয়ে মানুষের মনে দোলা দেয়। নীল আকাশে হঠাৎ কালো মেঘ চারদিকে অন্ধকার ছড়িয়ে বৃষ্টির ফোঁটায় ভরিয়ে দেয় ধরণীতল। মাতাল বাতাসে এলোমেলো দোল খায় তখন কাশফুলের সারা শরীর। বৃষ্টি থেমে গেলে মেঘের আড়ালে উঁকি দেয় সূর্যের মিষ্টি রোদ। আর সাদা মেঘ উঁকিঝুঁকি মেরে লুকোচুরি খেলায় মত্ত থাকে।
শরৎ যেন প্রকৃতিকে নতুন সাজে সাজাতে থাকে। প্রকৃতি প্রেমীরা শরতের ভালবাসায় মুগ্ধ হয়ে যায়। কাঠখোট্টা বালুকাময় চরগুলো তখন সৌন্দর্যের এক ময়দানে রূপান্তরিত হয়। কাশফুল শুধু কি মুগ্ধতা ছড়ায়, এর রয়েছে নানা গুণ।
ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যায়, এই কাশফুলের উত্থান সুদূর রোমানিয়া দেশ থেকে। এটি ছন গোত্রীয় এক ধরণের ঘাস। উচ্চতায় সাধারণত ৭-৮ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। গাছটির চিরল পাতার দুই পাশ বেশ ধারালো। কাশবন শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে না এর রয়েছে নানা ঔষধি গুণও।
নদীর ধার, জলাভূমি, চরাঞ্চল, শুকনো এলাকা, পাহাড় কিংবা গ্রামের উঁচু স্থানে কাশের ঝাড় বেড়ে ওঠে। তবে নদীর তীরেই কাশফুল বেশি জন্মাতে দেখা যায়। গ্রাম বাংলার অপরূপ শোভা কাশবন চিরচেনা দৃশ্য হলেও এই কাশবন এখন আগের মতো চোখে পড়ে না। নদ-নদী এলাকায় কাশবন ভাঙন প্রতিরোধে কাজ করে। এ ছাড়াও এই কাশদিয়ে ঘরের বেড়া, ছাউনি ও ঝাড়ের ব্যবহার খুবই জনপ্রিয়। পাশাপাশি পানের বরজ ও গো-খাদ্য হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয়।
চর এলাকায় কাশফুল স্থানীয় অধিবাসীদের জন্য একটি অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে পরিবারে আয় বৃদ্ধি করে। লম্বায় এটি ৭ থেকে ৮ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। ফুলের দৈর্ঘ্য হয় প্রায় ৩ ফুট পর্যন্ত। একজন কৃষক প্রতি বিঘা জমি থেকে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার কাশিয়া বিক্রি করে থাকে। এই কাশিয়া কার্তিক মাসের অভাবে কৃষকের শক্তি হিসেবে কাজ করে।
(ছবি : দৈনিক অধিকার)
কাশফুল নিয়ে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মির্জা নাসির উদ্দিন জানান, কাশফুল শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য বাড়ায় না এর রয়েছে নানাবিধ উপকার। অর্থনৈতিক সুবিধা ছাড়াও রয়েছে ঔষধি গুণও। মানুষের পিত্তথলিতে পাথর, শরীরে কোথায় ফোঁড়ার সৃষ্টি হলে তার ব্যথা উপশমে কাশফুলের মূল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কাশ আমাদের পরিচিত উদ্ভিদ হলেও এর আদিনীবাস রোমানিয়ায়। এর ইংরেজি নাম ক্যাটকিন এবং বৈজ্ঞানিক নাম হলো স্যাকরারাম এসপোটেনিয়াম।
ওডি/এফই
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড