• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

সিরাজগঞ্জে চরাঞ্চলের শিশুরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত

  সোহেল রানা, সিরাজগঞ্জ

২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৯:৫১
সিরাজগঞ্জ
চরাঞ্চল (ছবি : দৈনিক অধিকার)

সিরাজগঞ্জের চৌহালীর চরাঞ্চলের উমারপুর ইউপির পয়লাসহ চার গ্রামের হাজারো শিশু শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নদী ভাঙ্গনের কারণে পয়লা প্রাথমিক বিদ্যালয়টি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার পর পুনরায় চর জেগে ওঠার ফলে চারটি গ্রামে নতুন বসতি স্থাপন হলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুনঃস্থাপন না করায় শিশুরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বর ও অভিভাবকেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুনঃস্থাপনের দাবি জানালেও প্রধান শিক্ষক নদী পারাপার ও টাঙ্গাইলের নাগরপুর থানার সলিমাবাদে নিজ বাড়িতে বিদ্যালয়টি স্থাপনের জন্য তোড়জোর শুরু করেছেন। স্কুলটি চরাঞ্চলে পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য আদালতে মামলা দায়েরও করা হয়েছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষকের পাশাপাশি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের অনীহার কারণেই চরাঞ্চলের শিশুরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ নিয়ে এলাকাবাসী ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেছে।

স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুল হালিম জানান, ১৯৬৭ সালে উমারপুর ইউনিয়নের পয়লা গ্রামে পয়লা প্রাথমিক বিদ্যালয়টি তার বাবার জমিতে নির্মাণ করা হয়। স্কুলটিতে পয়লাসহ চারটি গ্রামের ছাত্রছাত্রীরা লেখাপড়া করত। ২০০০ সালে যমুনা নদীর ভাঙ্গনে স্কুলসহ গ্রামগুলো বিলীন হয়ে যায়। গ্রামের মানুষ বিভিন্ন স্থানে চলে যায়। পরবর্তীতে যমুনার পুর্বপাড়ে চরসলিমাবাদ স্কুলটি ভ্রাম্যমাণভাবে নির্মাণ করে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

এ অবস্থায় গত ১০ বছর আগে পুনরায় পয়লাসহ চারটি গ্রাম জেগে ওঠায় নতুন বসতি গড়ে ওঠে। বর্তমানে চারটি গ্রামে প্রায় দেড়হাজার পরিবার বসবাস করছে। প্রায় দেড় হাজার ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। কিন্তু স্কুলটি চর সলিমাবাদ থাকায় ছাত্র-ছাত্রীরা উত্তাল যমুনা নদী পাড় হয়ে পড়াশোনা করতে পারছে না। অনেকেই পড়াশোনা বাদ দিয়ে ক্ষেত খামারে কাজ শুরু করছে। এ অবস্থায় স্কুলটি পয়লা গ্রামে পুনঃস্থাপনের জন্য প্রধান শিক্ষকসহ শিক্ষা অফিস বরাবর আবেদন করা হয়।

কিন্তু প্রধান শিক্ষক নিজের ব্যক্তি স্বার্থের জন্য স্কুলটি পুনঃস্থাপন না করে উল্টো টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলার সলিমাবাদ তার নিজবাড়ির কাছে স্থাপনের জন্য তোড়জোড় শুরু করেছে। এমনকি স্কুলের টিন দিয়ে নিজে বাড়িতে ঘর তুলেছে। চেয়ার, বেঞ্চ, খুঁটি বিক্রি করে দেয়ার চেষ্টা করছে।

তিনি আরও জানান, চরাঞ্চলের শিশুদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার জন্য স্কুলটি পুনঃস্থাপনের স্বার্থে আদালতে মামলাও দায়ের করা হয়েছে। তারপরেও সিরাজগঞ্জ জেলার স্কুল টাঙ্গাইল জেলায় স্থাপনের জন্য প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষা অফিসার নানা পায়তারা করছেন।

চরাঞ্চলের স্কুলছাত্র জিম আক্তার ও সাগর জানান, আমরা ছোট মানুষ। নদী পাড় হয়ে স্কুলে যেতে হয়। এতে খুব ভয় করে। স্কুলটি যদি চরে হতো তাহলে আনন্দের সাথে পড়াশোনা করতে পারতাম।

অভিভাবক আবু মুছা, রবিউল ও নজরুল ইসলাম জানান, চরাঞ্চলে স্কুল না থাকায় অসংখ্য ছেলে মেয়ে পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অনেকে ক্ষেত খামারের কাজ করছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল কাদের মোল্লা জানান, ভাঙনের কারণে বর্তমানে যেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হবে সেখানে আধা কিলোমিটারের মধ্যে অন্তত ২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অথচ চরাঞ্চলে একটি স্কুলও নেই। প্রথম শ্রেণীর কোন ছাত্রছাত্রী নদী পার হয়ে স্কুলে যেতে পারে না। যে কারণে চরাঞ্চলের হাজারো শিক্ষার্থী শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তার অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক গোলাম হোসেন নদী পার হবার ভয়ে তার নিজ বাড়িতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে চাচ্ছেন।

ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল মতিন মন্ডল জানান, নদীগর্ভে বিলীনের পর স্কুলটি বাঘুটিয়া ইউনিয়নের চর সলিমাবাদ সভাপতির বাড়িতে রেখে পাঠদান চলছে। বর্তমানে ২নম্বর ওয়ার্ড পয়লা গ্রাম জেগে ওঠায় প্রায় দেড়হাজার পরিবার বসতি গড়ে তুলেছে। স্কুলটি পয়লাতে স্থাপনে জরুরী হওয়ায় উপজেলা শিক্ষা অফিস বরাবর আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু প্রধান শিক্ষক ও কিছু কুচক্রীমহল বিদ্যালয়টি টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার সলিমাবাদে স্থাপন করার পায়তারা করছে। স্কুলটি টাঙ্গাইলে স্থাপন করা হয় তবে পয়লা গ্রামের প্রায় দেড় হাজার শিশু শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হবে।

তিনি জানান, বর্তমানে চরের ছাত্র-ছাত্রীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উত্তাল যমুনা পার হয়ে পয়লা বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছে। প্রায়ই নৌকাডুবিতে প্রাণহানি ঘটনা ঘটায় অনেক অভিভাবক শিশুদের লেখাপড়া বন্ধ করে দিয়েছে।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক গোলাম হোসেন জানান, চরে মাত্র ১২ জন ছাত্র-ছাত্রী আছে। আর এপার রয়েছে ১১৩ জন ছাত্রছাত্রী। এ কারণে স্কুলটি চরে নেয়া সম্ভব নয়। স্কুল যে স্থানে রয়েছে সেখানে আরও অন্তত ২০টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, তাতে কোন সমস্যা নেই। তবে কর্তৃপক্ষ যদি মনে করে চরে নিতে হবে তবে আমার কোন সমস্যা নেই।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জাহাঙ্গীর ফিরোজ জানান, স্কুলটি কোথায় পুনঃনির্মাণ করা হবে এ নিয়ে উপজেলা শিক্ষা কমিটি মিটিংয়ের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ওডি/এফই

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড