এস এম ইউসুফ আলী, ব্যুরো প্রধান, ফেনী
ফেনীর সোনাগাজী উপজেলাধীন ছোট ফেনী নদীর পাড়ে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে মানুষের ঘরবাড়ি, ভিটেজমি ও সড়ক। ফলে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন নদীর তীরবর্তী মানুষ।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সোনাগাজী উপজেলার ১ নম্বর চর মজলিজপুর ইউনিয়নের কুঠিরহাট বাজার সংলগ্ন কালিবাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ছোট ফেনী নদী। ওই এলাকায় নদীটির বেশিরভাগ স্থান বাঁকা ও সংকুচিত হওয়ায় নদীতে পানি বৃদ্ধি ও কমার ফলে নদীর পাড়ে মানুষের ভিটেজমি ও সড়কের তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে ওই এলাকার মানুষের ঘরবাড়ি ছাড়াও স্কুল, মসজিদ-মন্দিরসহ বিভিন্ন হাট-বাজার।
দুই বছর আগে কালিবাড়ির পাশে নদীর তীর ঘেঁষা এলজিইডির অধীনে থাকা আবু বক্কর সড়কটির প্রায় ৫০০ মিটার ভেঙে নদীতে বিলীন হয়। ফলে ওই সড়কে ৫ থেকে ৬ মাস গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকে। সে সময় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে গাড়ি চালকসহ যাত্রী সাধারণকে। পরে পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রাথমিক পর্যায়ে ভাঙন রোধে ৭ হাজার জিও ব্যাগ ফেলে সড়কটি গাড়ি চলাচলের উপযোগী করে তোলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। চলতি বছর সড়কটি আবার ভাঙতে শুরু করেছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নদীর পাড়ে পাইলিং বা সাপোর্টিং না থাকার কারণে এলজিইডির অধীনে থাকা এই সড়কটি টিকছে না। দুই বছর না যেতে এই সড়কটি আবার নদীগর্ভে বিলীন হতে চলেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড দুই বছর আগে ভাঙন স্থানে বালু-মাটি মিশ্রিত জিও ব্যাগ ফেলে কোনোরকমে দায় সারেন। তখন তাদের নিম্নমানের কাজের প্রতিবাদ করেও কোনো লাভ হয়নি। ফলে সরকারের কোটি কোটি টাকা জলে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।
এলাকাবাসীরা আরও জানান, গত কয়েক বছর ধরে তাদের এলাকায় সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা নদী থেকে বালু উত্তোলন করার ফলে সড়কের পাশে বিশাল গভীরতা সৃষ্টি হয়েছে। তখন থেকে সড়কটি নিচের দিকে দেবে গিয়ে বারবার ভাঙনের সৃষ্টি হচ্ছে। তারা নদীর ভাঙন রোধে কাজের গুণগত মান ঠিক রাখতে এবং পাইল-সাপোর্টিং দিয়ে সঠিক তদারকির মাধ্যমে কাজ সম্পাদন করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এম এ হোসেন দৈনিক অধিকারকে বলেন, সকল কাজের আগে এখানে নদী শাসন করা দরকার। যে হারে নদীর পাড় ভাঙা শুরু হয়েছে একসময় পুরো এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে ছোট ফেনী নদীর ভাঙনস্থান পরিদর্শনে আসেন ফেনী-৩ আসনের এমপি মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, জেলা প্রশাসক, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাবৃন্দ। তারা নদীর পাড়ের ভাঙনস্থান ও রাস্তা মেরামতসহ নদীর বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন।
এ দিকে, সড়ক মেরামতের বিষয়ে এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী মনির হোসেন দৈনিক অধিকারকে জানান, সড়কটি নদীকেন্দ্রিক হওয়ায় প্রতি বছরই ভাঙছে। এ বছরও একই চিত্র দেখা যায়। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে আগে নদী শাসনের ওপর জোর দিতে হবে। সড়কটির ভাঙন স্থানে জরুরি ভিত্তিতে একটি কালভার্ট নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া চলছে। আশা করছি, আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে কাজ শুরু করতে পারব।
বিষয়টিতে ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাব-ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার আক্তার হোসেন বলেন, ২০১৯ সালের শেষের দিকে ছোট ফেনী নদীর পাড়ে ভাঙন দেখা দিলে জরুরি ভিত্তিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড সেখানে ৭ হাজার জিও ব্যাগ ফেলে সড়কের ভাঙন মেরামত কাজ সম্পূর্ণ করেন। সে থেকে আর কোনো বড় ধরনের ভাঙনের সৃষ্টি হয়নি। কিন্তু চলতি বছর নদীর পাড়ে বসবাসকারী ওই এলাকার মানুষজন সড়কের ভেতর দিয়ে পাইপ বসিয়ে নদীতে পানি যাওয়ার বিকল্প রাস্তা তৈরি করে। যার ফলে নদীর পাড়ে থাকা জিও ব্যাগ সরে গিয়ে ভাঙন দেখা দেয়। এতে সড়কের ২০ মিটার পাকা পিচসহ নিচের মাটি দেবে গিয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন : মাদরাসা ছাত্রীর ইজ্জতের মূল্য ২ লাখ টাকা!
তিনি বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় মানুষের নিজের ভুলের কারণে বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। দেড় বছর আগে নদীর অপর প্রান্তে জাগা উঁচু চরের অংশ কাটার জন্য ওই এলাকার কয়েকজন ব্যক্তি ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডে আবেদন করেছিলেন। নদী খননের সুবিধার্থে বাঁকা নদী সোজাকরণের বিষয়টি মাথায় রেখে তখন তাদের মাটি কাটার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তখন স্থানীয় লোকজন ও উপজেলা প্রশাসন থেকে বাঁধা দেওয়া হয়। এভাবে বাঁধা-বিপত্তি থাকলে নদীর শাসনের কাজ পরিচালনা করা যাবে না। তবে নদীর ভাঙন রোধে সেখানে সিসি ব্লকের কাজের একটি প্রস্তাবনা ওপরে পাঠানো হয়েছে। এই প্রকল্পটি চূড়ান্তভাবে অনুমোদন হলে দ্রুত সেখানে কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।
ওডি/নিলয়
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড