নজরুল ইসলাম শুভ, সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ)
তিনমাসের বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুর শিল্পনগরীতে সিনহা গার্মেন্টসের শ্রমিকরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করেছে। বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা এ সময় মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে খণ্ড খণ্ড বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এতে মহাসড়কের দু'প্রান্তে প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। রাত সাড়ে ৭টার দিকে পুলিশ মহাসড়ক থেকে শ্রমিকদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে শুরু হয় পুলিশের সাথে শ্রমিকদের সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ। একপর্যায়ে পুলিশ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। মুহূর্তেই পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ ১ পুলিশ সদস্যসহ ৫ পুলিশ, ৮ জন শ্রমিক ও পথচারীসহ কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, উপজেলার কাঁচপুর শিল্পনগরী এলাকায় অবস্থিত পোশাক রফতানিকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান ওপেক্স গ্রুপের সিনহা গার্মেন্টসে হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করে। বুধবার সকালে শ্রমিকরা তাদের বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে কারখানা এলাকায় অবস্থান নেয়। দিনভর বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের ব্যাপারে মালিকপক্ষের কোনো সাড়া না পাওয়ায় বিকেলে শ্রমিকরা ঢাকা-সিলেট সড়কে অবস্থান নিয়ে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করে রাখে।
মহাসড়কে শ্রমিকদের অবরোধের কারণে কাঁচপুর এলাকা থেকে মহাসড়কের দু'প্রান্তে প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে সোনারগাঁ থানা পুলিশ, কাঁচপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশের পৃথক ২টি দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। রাত সাড়ে ৭টার দিকে পুলিশ মহাসড়ক থেকে শ্রমিকদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে শুরু হয় শ্রমিকদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। পুলিশ এ সময় শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।
এ ঘটনায় সোনারগাঁও থানার ওসি মো. হাফিজুর রহমান, শিল্পাঞ্চল পুলিশের কনস্টেবল সজিব (ডান পায়ে গুলিবিদ্ধ)সহ ৫ পুলিশ সদস্য, ৮ শ্রমিক ও পথচারীসহ কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়। আহত কনস্টেবল সজিবকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের অভিযোগ, সিনহা গার্মেন্টস মালিক কর্তৃপক্ষ বুধবার সকালে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ করার ব্যাপারে কথা দিয়েছিল। সেই মোতাবেক শ্রমিকরা তাদের বকেয়া বেতন-ভাতা নেওয়ার জন্য সকাল থেকে বিকেল সাড়ে ৪ টা পর্যন্ত কারখানা এলাকায় অপেক্ষা করে। মালিক কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় শ্রমিকরা বিকালে মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। এ ঘটনার পর রাত সাড়ে ৭টার দিকে পুলিশ মহাসড়ক থেকে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করলে শুরু হয় শ্রমিকদের সাথে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ। এ সময় পুলিশ শ্রমিকদের ওপর গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিনহা গার্মেন্টেসের শ্রমিকরা জানান, লকডাউন থেকেই তাদের বেতন-ভাতা বকেয়া রয়েছে। বুধবার সকালে তিন মাসের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল মালিকপক্ষ। সকালে হঠাৎ বকেয়া বেতন-ভাতা আগামী মাসে পরিশোধ করা হবে বলে একটি নোটিশ ঝুলিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনার পর শ্রমিকরা বকেয়া বেতন-ভাতার জন্য মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে। কিন্তু মালিক কর্তৃপক্ষের ভাড়াটিয়া লোকজন শ্রমিকদেরকে মালিকের সঙ্গে কোনো কথা বলতে দেয়নি। বাধ্য হয়ে বিকালে শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করেছে।
সিনহা ওপেক্স গার্মেন্টের সুইং সেকশনের শ্রমিক মিজানুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের বেতন-ভাতা বকেয়া রয়েছে। বেতন-ভাতা না পাওয়ায় আমরা মানবেতর জীবনযাপন করছি। দোকান বাকি ও বাসা ভাড়া দিতে পারছি না। এ কারণে শ্রমিকরা দাবি আদায় করতে মহাসড়কে অবস্থান নিয়েছিল।
সোনারগাঁ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান জানান, পুলিশের পক্ষ থেকে মালিক ও শ্রমিকদের সাথে কথা বলে বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের ব্যাপারে সমঝোতা করার চেষ্টা করা হলেও বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। কয়েকজন শ্রমিকনেতা এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলিও ছুঁড়ে। এ ঘটনার পর পুলিশ আত্মরক্ষার জন্য প্রায় ৬০ রাউন্ড গুলি ও প্রায় ৩০ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এ সময় শ্রমিক নেতাদের গুলিতে শিল্পাঞ্চল পুলিশের কনস্টেবল সজিব (ডান পায়ে গুলিবিদ্ধ) মারাত্মকভাবে আহত হয়। এছাড়াও তিনিসহ ৫ পুলিশ সদস্য আহত হয়।
আরও পড়ুন : সিরাজগঞ্জে হাইওয়ে থানার ওসিসহ ৪ জনকে প্রত্যাহার
তিনি আরও জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
ওডি/এএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড