• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ছাড়াই পরপারে বীর মুক্তিযোদ্ধা

  মেহেদী হাসান, লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম

২২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৩:২৭
বীর মুক্তিযোদ্ধা মেঘনাদ দে
বীর মুক্তিযোদ্ধা মেঘনাদ দে (ছবি : সংগৃহীত)

রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ছাড়াই চিরবিদায় নিলেন লোহাগাড়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা মেঘনাদ দে (৮৫)। তিনি উপজেলার উত্তর পদুয়ার ২নম্বর ওয়ার্ডের বাড়ৈ পাড়ার মৃত অনঙ্গ মোহন দাশ এর ছেলে।

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সহকারী পরিচালক মো. শাহ আলম কর্তৃক স্বাক্ষরিত জামুকার ৬৭তম সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক সুপারিশকৃত মুক্তিযোদ্ধা গেজেট প্রকাশের জন্য কাগজপত্র জমা দিতে চলতি বছরের ১৮ জুলাই মেঘনাদ দে’র কাছে এক চিঠি প্রেরণ করা হয়। কিন্তু গেজেট প্রকাশের আগেই পরপারে পাড়ি দিলেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। সর্বশেষ মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম না থাকায় পাচ্ছেন না রাষ্ট্রীয় সম্মান গার্ড অব অনার।

মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাতে সাড়ে ৮টায় উপজেলার ৭নম্বর ওয়ার্ডের জঙ্গল পদুয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের হাঙ্গর খালের পাড় সংলগ্ন আনন্দ পাড়ার বাঁশঝাড় থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকালে তাঁকে স্থানীয় শশ্মানে সৎকার করা হবে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। তার পাঁচ সন্তানের মধ্যে এক মেয়েকে ২০০৬ সালে সন্ত্রাসীরা অপহরণ করে হত্যা করে। তিনি বর্তমানে স্ত্রী, ২ মেয়ে ও ২ ছেলেসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

তার স্বজনরা জানায়, মেঘনাথ দে ছেলের সাথে বান্দরবান থাকতেন। গত সপ্তাহে গ্রামের বাড়িতে আসেন। গত রবিবার হঠাৎ নিঁখোজ হন। এরপর থেকে তার স্বজনরা বিভিন্ন জায়গায় অনেক খোঁজাখুঁজি করে। কিন্তু কোথাও পাওয়া যায়নি। মঙ্গলবার রাতে জঙ্গলপদুয়া হাঙ্গর খাল পাড়ে আনন্দপাড়া এলাকার বাঁশঝাড়ে স্থানীয়রা তার মরদেহ দেখতে পায়।

স্থানীয়রা পুলিশ ও তার পরিবাররে সদস্যদের বিষয়টি অবহিত করে। এরপর ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। তবে বাবার মৃত্যু রহস্যজনক বলে দাবি করছেন তার ছেলে তপন দাশ। তিনি এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন।

জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা মেঘনাদ দে সরকারিভাবে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য শেষ সম্বলটুকু পর্যন্ত বন্ধক রেখেছিলেন। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের দেমাগিরি ক্যাম্পে গ্রেনেড ও রাইফেলের ওপর ট্রেনিং নেন তিনি। ট্রেনিং শেষে দেশে ফিরে আসেন গ্রুপ লিডার সামশুল ইসলামের নেতৃত্বে।

রাঙামাটিতে পাকিস্তানি সৈন্যের ক্যাম্প সংলগ্ন ব্রীজটি ধ্বংস করেন। পাগল সেজে পাকিস্তানি সৈন্যের কাছে খাবার চেয়েছেন এবং পরবর্তীতে গ্রেনেড ছুঁড়ে হত্যা করেছেন তাদের। স্বাধীনতার তিনদিন পরে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গণি ওসমানির প্রেরিত সার্টিফিকেট গ্রহণ করেন থানা কমান্ডার আবু ছালেহর কাছ থেকে।

লোহাগাড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ডেপুটি কমান্ডার আবদুল হামিদ বেঙ্গল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, মেঘনাদ দে একজন রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত তাকে গেজেটে অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি। তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান ও স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। এটা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার জন্য অমানবিক ও অপমানজনক।

লোহাগাড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আখতার আহমদ সিকদার জানান, মেঘনাদ সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। সর্বশেষ ২০১৭ সালে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটি মেঘনাদ কে ‘ক’ তালিকাভুক্ত করে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায়। কিন্তু এখনো গেজেট প্রকাশ হয়নি।

লোহাগাড়া থানার ওসি জাকের হোসাইন মাহমুদ জানান, হাঙ্গর খালের পাড়ে তার বাড়ির অদূরে লাশটি পাওয়া যায়। লাশের গায়ে কোন আঘাতের চিহ্ন নেই। কিন্তু মুখে পচন ধরেছে। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রির্পোট পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

আরও পড়ুন : ফুলগাজীতে বেকারির মালিককে জরিমানা

লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহসান হাবীব জিতু জানান, সর্বশেষ ২০১৭ সালে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটি মেঘনাদকে ‘ক’ তালিকাভুক্ত করে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। সরকারি গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় সম্মান গার্ড অব অনার দেওয়ার নিয়ম আছে। তবে সর্বশেষ গেজেটে তাঁর নাম না থাকায় তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান গার্ড অব অনার দেওয়া যাচ্ছে না বলে তিনি জানান।

ওডি/এফই

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড