মো. নুরুল করিম আরমান, লামা
রেমিজা বেগম, বয়স ৫৮ বছর। বাবা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আউয়াল। মাতা রংমালা খাতুন। দেশ স্বাধীনের পর সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলার জৈন্তাপুর ইউনিয়নের আসাম পাড়া থেকে বাবা আব্দুল আউয়ালের সাথে বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি পুলং পাড়ায় আসেন তিনি।
পরে খুলনা জেলার নওয়াব আলীর সাথে রেমিজা বেগমের বিয়ে হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বিত তালিকায় তার বাবা আব্দুল আউয়ালের পরিচিতি নম্বর ০১৯০০০৬৯০২। গত ৩০ বছর আগে মারা যান মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আউয়াল।
মৃত্যুকালে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী, ২ মেয়ে ও ১ ছেলে রেখে যান। বর্তমানে মেয়ে রেমিজা বেগম ক্যায়াজুপাড়া বাজার এলাকায় স্বামী ও একমাত্র ছেলেকে নিয়ে অন্যের জমিতে নির্মিত একটি ঝুপড়ি ঘরে জীবন যাপন করছেন।
রেমিজা জীবনের শেষ কটা দিন নিজের একটা ঘরে থাকার জন্য জনপ্রতিনিধিদের কাছে ঘুরেছেন বছরের পর বছর। কিন্তু তার জন্য কারোই বিন্দুমাত্র মমতা হয়নি। অবশেষে এ প্রতিবেদকের কাছে পত্রিকার মাধ্যমে অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরে একটি ঘরের আবেদন জানিয়েছেন রেমিজা বেগম।
সরেজমিন জানা যায়, সংসারে একমাত্র আয়ক্ষম ব্যক্তি রেমিজা। স্বামী নওয়াব আলী (৯০) বয়সের ভারে নূয়ে পড়েছেন। বাঁশের কয়েকটি খুঁটির উপর দাঁড় করানো ছোট্ট একটি ঝুপড়ি ঘর। পুরনো ঢেউটিন, পলিথিন আর বাঁশের বেড়া দিয়ে মোড়ানো নড়বড়ে এ ঘরটিতে মানবেতর দিন কাটছে বৃদ্ধা রেমিজার। তার এক ছেলে ও বৃদ্ধ স্বামীকে নিয়ে বর্তমানে জীবন কাটে নিদারুন দুঃখ-কষ্ট, অভাব-অনাটনে। অন্যের জমিতে নির্মিত ঝুপড়ি ঘরটি কখন ছেড়ে দিতে হয়; এমন আশঙ্কায় দিন কাটছে তার। এছাড়া বৃষ্টি হলে তার ঘরে টিনের ছিদ্রের কারণে ঘর ভিজে যায়। আর ঘুমানোর সুযোগ হয় না।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, শেখের বেটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসহায় পরিবারকে ঘর দিচ্ছেন। বিগত ৩০ বছর পূর্বে মুক্তিযোদ্ধা বাবাকে হারিয়েছি। বাবা মারা যাওয়ার পর বৃদ্ধ স্বামী ও এক ছেলেকে নিয়ে আমি অসহায় হয়ে পড়েছি। একটি ঝুপড়ি ঘরে থাকতে অনেক কষ্ট হয়। অভাবের কারণে একমাত্র ছেলেটাকে পড়ালেখা করাতে পারিনি। তাই সে গাড়ির হেলপারী করছে।
সামান্য একটি চা দোকান করে সংসার চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে। বহু কষ্টে অর্জিত পুলং পাড়ার ১০শতক জমিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহার স্বরুপ একটি ঘর নির্মাণ করে দিলে অন্তত আমার কিছুটা হলেও কষ্ট দূর হতো। এতে শেষ বয়সে স্বামী ও সন্তানকে নিয়ে একটি স্বস্তি পাবেন বলেও জানান তিনি।
এ নিয়ে রেমিজার প্রতিবেশী আরিফুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি জানায়, সে সত্যি চরম অসহায় ও মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। যে ঝুপড়ি ঘরটিতে বাস করছেন যে কোনো সময় ঝড়-তুফানে সে ঘরটিকে উড়ে যেতে পারে। স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নুরুল আলম ও ক্যয়াজুপাড়া বাজার ব্যবসায়ী মো. সেলিম একসূরে জানান, রেমিজা বেগম স্থানীয় হারিছ কোম্পানি নামের এক ব্যক্তির জমিতে নির্মিত একটি ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করে আসছেন দীর্ঘ বছর ধরে। তাদের সংসারে এক ছেলে সন্তানও রয়েছে। অভাবের তাড়নায় ছেলেকে পড়ালেখা করাতে পারেননি, তাই ছেলে শাহ আলম এখন গাড়ির হেলপারী করছেন। দারিদ্রতাকে সঙ্গী করে সন্তানদের নিয়ে চরম মানবেতর জীবন যাপন করছেন রেমিজা বেগম।
তারা আরও জানায়, সরকার বিভিন্ন জায়গায় ঘর দিচ্ছেন। মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে রেমিজা অনেক বেশি অসহায়। বৃষ্টি হলে ঝুপড়ি ঘরে ঘুমাতে অনেক কষ্ট হয়। ঘরের টিনগুলো একদম ছিদ্র আকারে ধারণ করেছে। ‘স্বাধীনতা যুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আউয়ালের অবদান অস্বীকার করা যাবে না। স্বাধীন দেশে এ বীরের সন্তানেরা মানবেতর জীবন যাপন করবে, এটা মেনে নিতে পারছিনা।’
এদিকে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা জামাল বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধার মেয়ের দূরঅস্থার কথা শুনে অনেক খারাপ লাগছে। উপজেলা প্রশাসন থেকে তাদেরকে সহায়তা করার জন্য ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউএনও মহোদয়কে অনুরোধ করব। এ বিষয়ে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. রেজা রশীদ বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আউয়ালের মেয়ে রমিজা বেগম ঘরের জন্য আবেদন করেছেন। তবে এখন মুক্তিযোদ্ধা কিংবা প্রধান মন্ত্রীর বিশেষ ঘর নির্মাণের বরাদ্দ নেই। পরবর্তীতে বরাদ্দ আসলে রেমিজাকে ঘর দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
ওডি/এসএ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড