আল-মামুন, খাগড়াছড়ি
যুবসমাজ ধ্বংসের প্রধান হাতিয়ার নীরব ও প্রাণঘাতী মাদকে ছেয়ে গেছে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি। একসময় স্থানীয় চোলাই মদ পাহাড়ের ঐতিহ্য হিসেবে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে ব্যবহার হলেও বর্তমানে সে জায়গার বিপরীতে স্থান করে নিয়েছে হাত বাড়ালেই পাওয়া ভিনদেশী ইয়াবা। সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট চক্রের মাধ্যমে পার্বত্য এই জেলায় এখন ইয়াবা খেলনায় রূপ নিয়েছে।
খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে শুরু করে উপজেলায় বিস্তৃতি ঘটেছে মরণব্যাধী এই নেশার। কক্সবাজার-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন সড়কে অভিনব কৌশলে পার্বত্য জেলাগুলোতে ঢুকছে ইয়াবাসহ বিদেশি মদ। মাদকের সাথে জড়িতদের দমানো, অবৈধ কারবারিদের শনাক্ত ও নির্মূল করতে না পারাসহ সংশ্লিষ্টদের কঠোর আইনি পদক্ষেপ না থাকায় দিনে দিনে এই নেশা ছড়িয়ে যাচ্ছে গ্রাম-গঞ্জেও।
ইয়াবা ডিলার, সাপ্লায়ার, এলাকাভিত্তিক বিক্রেতা প্রতিনিধি ও কৌশলী মদদদাতাদের প্রভাব ও বাম হাতের আয়ের ফলে প্রশ্ন উঠছে অনেকের বিরুদ্ধে। ফলে ইয়াবাসহ সব-ধরনের অবৈধ মাদক নির্মূলে যথাযথ পদক্ষেপের পাশাপাশি মাদক নির্মূলে কার্যকরী উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে সচেতন সমাজ।
স্থানীয় এলাকাবাসীরা জানায়, রাতের আঁধার নামলে যেমন ভিন্ন এক জগতে পা দেয় উঠতি বয়সের যুব সমাজসহ নেশাগ্রস্থরা, তেমনি এখন নির্জন এলাকায় দিনের বেলাতেই অবাধে বেচা-কেনা চলে মাদকের। ফলে সহজলভ্য ও হাতের নাগালে পাওয়ায় জেলা সদরের বিশেষ করে শালবন, গঞ্জপাড়া, উত্তরগঞ্জপাড়া, মোহাম্মদপুর, কলেজ গেইট, মুসলিমপাড়ার একাংশ, কল্যাণপুর, নয়নপুর নিউজিল্যান্ডসহ বিভিন্ন এলাকায় মারাত্মক আকার ধারণ করেছে মাদক।
অন্যদিকে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা, গুইমারা, রামগড়, মানিকছড়ি, দীঘিনালা, মহালছড়ি, লক্ষ্মীছড়ি ও পানছড়িতে অভয়ারণ্য গড়ে তুলেছে মাদক কারবারিরা। শুধু উপজেলায় নয় ইউনিয়নগুলোতেও পড়েছে মাদক কারবারিদের কালো থাবা।
অভিযোগ উঠেছে, এই মাদক কারবারের সাথে যুক্ত আছে এক শ্রেণির রাজনৈতিক দলের কিছু নেতারাও। যার তদন্ত করলেই থলের বিড়াল বের হয়ে আসবে। সংগঠনের দুষ্কৃতিকারীরা পদ-পদবী ব্যবহার করে শ্যালটার দেওয়া থেকে এই মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়েছে। তারা নীরবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সবখানে। গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ব্যবহার করে অভিনব কৌশলে সুবিধাজনক স্থানে এসব মাদক মজুদ ও সরবরাহের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে তারা। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে বিক্রয়ে ব্যবহার করছে ভিন্ন কৌশল।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, উপজেলার ব্যক্তি মালিকানাধীন নীরব পর্যটন স্পটে চলে ইয়াবা বেচা-কেনা ও সেবন কার্যক্রম। ইতোমধ্যে খাগড়াছড়ির গুইমারা ও মাটিরাঙ্গা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অভিযানে মাদক উদ্ধার ও জড়িতদের আটকের ঘটনায় স্থানীয়দের মাঝে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরছে। এরই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে মাদক নির্মূলের দাবি খাগড়াছড়িবাসীর।
এ দিকে, উল্লেখযোগ্য হারে মাদকের ছড়াছড়িতে আইন-প্রয়োগকারীদের উদাসীনতা মাদক নির্মূলের যাত্রা অনেকটা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বলে অভিমত সচেতন সমাজের।
মাদক নির্মূলের বিষয়ে খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী দৈনিক অধিকারকে বলেন, সকল প্রশাসনের সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকলে মাদক নির্মূল সম্ভব। প্রয়োজন জনসচেতনতাও। এ ছাড়াও মাদক কারবারিদের আটকের পর আইনের ফাঁক-ফোকরে দ্রুত জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার ফলে অপরাধীরা উৎসাহিত হওয়াসহ মাদকের প্রভাব বাড়ছে বলেও মনে করেন তিনি।
আরও পড়ুন : ধামইরহাটে মাছ ধরতে গিয়ে নদীতে ডুবে যুবক নিখোঁজ
এ বিষয়ে খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল আজিজ দৈনিক অধিকারকে জানান, খাগড়াছড়িতে মাদক নির্মূলে পুলিশের নিয়মিত কার্যক্রম চলমান আছে। সম্প্রতি বিভিন্ন উপজেলায় আটক ও নিয়মিত মামলা রুজুও করা হচ্ছে। কেউ কেউ ইয়াবা সেবনের জন্য নিয়ে আসে। পুলিশ তথ্য পেলেই তাদের আটক করছে। এ বিষয়ে সচেতনতা জরুরি। কোনো অপরাধীকে তথ্য পেলে ছাড় দেওয়া হবে না।
তিনি দাবি করেন, আইনি প্রক্রিয়া ও বিচার প্রক্রিয়ায় সাংবিধানিক নিয়মে আটকরা ছাড়া পাচ্ছে। মাদকের কারণে সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি বিষয়ে চলমান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অপরাধীদের কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না বলেও জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল আজিজ।
ওডি/নিলয়
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড